আকাশপথে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ডিভাইসকে অফলাইন বা এয়ারপ্লেন মোডে রাখার নিষেধাজ্ঞা থেকে সরে আসতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শুধু তাই নয়, উড়োজাহাজের যাত্রীদের জন্য ফাইভজি সেলুলার নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করা হবে।
ইইউর সদস্যরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হলে আগামী বছর থেকে উড়োজাহাজে যাত্রীরা ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবে।
জানা গেছে, উড়োজাহাজের ভেতর ফাইভজি সংযোগের উপস্থিতি নিশ্চিতের বিষয়ে আলোচনা করছে ইইউ। এ সুবিধা চালু হলে যাত্রীরা উড়োজাহাজে চলাচলের সময় কল করতে পারবে ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ভিডিও দেখতে পারবে।
দীর্ঘ সময় ধরে উড়োজাহাজে ভ্রমণের সময় যাত্রীদের বিশ্বব্যাপী সেলুলার কানেকশন ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের স্মার্টফোনে বিল্ট ইন এয়ারপ্লেন মোড দিয়ে থাকে। আকাশপথে থাকার সময় বিভিন্ন বন্দরের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতেই এ নিয়ম। তবে ইইউর সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এটি অতীত হয়ে যাবে। পাশাপাশি ভ্রমণের সময় দুর্বল ও কম গতির যে ওয়াই-ফাই সংযোগ দেয়া হয় সেটিও যাত্রীদের ব্যবহার করতে হবে না। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সেলফোনের ফাইভজি ডাটা দিয়েই ওয়েব ব্রাউজ করা যাবে।
ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা কীভাবে চালু হবে সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। কেননা ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলো ফাইভজি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড কিনতে পারবে। এ নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা যুক্ত হলে ফ্লাইটের মধ্যবর্তী সময়ে কল করার পাশাপাশি ডাটা ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে মিউজিক ও ভিডিও দেখার সুবিধা পাবে যাত্রীরা।
ইইউ’র অভ্যন্তরীণ বাজার বিভাগের প্রধান থিয়েরি ব্রেটন বলেছেন, মানুষের জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী পরিষেবা চালুর পাশাপাশি ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর বিস্তৃতিতেও এ পরিকল্পনা সাহায্য করবে।
অন্যদিকে ২০০৮ সাল থেকে উড়োজাহাজের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড সংরক্ষণ করত ইইউ কমিশন। এর মধ্যে কয়েকটিতে ইন্টারনেট সুবিধা মিলত। তবে এসব সেবা প্রথম থেকেই ধীরগতির ছিল। কারণ এ প্রক্রিয়ায় উড়োজাহাজ ও মাটিতে থাকা যন্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহারের প্রয়োজন হতো।
আকাশপথে চলাচলের সময় ফাইভজি নেটওয়ার্ক ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ডাউনলোড করা যাবে। একটি ব্রিটিশ মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির তথ্যানুযায়ী, ডাউনলোডের গতি প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবাইটের বেশি হতে পারে। ফলে যাত্রীরা কয়েক মিনিটের মধ্যে পছন্দের সিনেমা বা গেম ডাউনলোড করতে পারবে। যুক্তরাজ্যের ফ্লাইট সুরক্ষা কমিটির প্রধান নির্বাহী ডাই হুইটিংহাম এক সাক্ষাত্কারে জানান, সেলফোন কীভাবে প্লেনের ওপর প্রভাব ফেলে সে-সংক্রান্ত গবেষণা ও তথ্য কম থাকায় এয়ারপ্লেন মোড গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এগুলো স্বয়ংক্রিয় ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারে, এমন শঙ্কাও ছিল।
তিনি বলেন, ফ্লাইটে প্রবেশের পর টেলিকমিউনিকেশনে ব্যবহূত সব ডিভাইস এয়ারপ্লেন মোডে নেয়ার জন্য বলা হতো। বর্তমানে বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে সেলুলার নেটওয়ার্ক ব্যবহারে ঝুঁকির মাত্রা অনেকাংশেই কম। ফাইভজি নেটওয়ার্কের বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি উড়োজাহাজের যোগাযোগ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে শঙ্কা ছিল। এছাড়া নেটওয়ার্কের প্রভাবে ভূমি থেকে উচ্চতা পরিমাপ ভুল হতে পারে বলেও সমালোচনা ছিল। তবে যুক্তরাজ্য ও ইইউভুক্ত দেশে সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন ডাই হুইটিংহাম। সূত্র: বিবিসি, টেকটাইমস