সরকার পতনের দাবি নিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ঘোষিত গণমিছিলকে গুরুত্ব না দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যদি তারা সফল হয় ঘোড়া সেদিন ডিম পারবে। গতকাল মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বিজয় শোভাযাত্রা শুরুর আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ট্রাকের ওপর থেকে নেতাদের বক্তব্য শুরুর অনেক আগেই দুপুরের পর থেকে ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাতীয় পতাকা, রং বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দিতে আসা শুরু করেন। নির্ধারিত সময়ে আগেই মৎস্যভবন, কাকরাইল, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোডসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা ভরে যায়। ঘোড়ার গাড়ি, সাজানো পিকআপ, হাতিকে রঙিন কাপড় দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে এসেও অনেকে শোভাযাত্রায় যোগ দেন। শোভাযাত্রাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বাড়ির সামনে গিয়ে শেষ হয়। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। একাত্তরের খুনি, পঁচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খুনিদের আমরা পরাজিত করব। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখতে হবে। খেলা হবে, খেলা হবে। প্রস্তুত হয়ে যান। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে খেলবে, নির্বাচনেও খেলবে। সেমিফাইনাল সামনে। তারপর ফাইনাল খেলা। ফাইনালে আন্দোলনেও তারা হারবে। নির্বাচনেও তারা হারবে ইনশাআল্লাহ।
বিজয় র্যালিতে ব্যাপক জনসমাগমের নিজে গাড়ি নিয়ে আসতে পারেননি জানিয়ে কাদের বলেন, আমি মোটরসাইকেলে করে এসেছি। জনগণ, স্লোগান আর স্লোগান। বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষার সব ঢেউ আজকে ঢাকা মহনগর আওয়ামী লীগের আজকের এই উত্তাল সমাবেশে। সবাই প্রস্তুত। খেলা হবে ভোট চুরি, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে। হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, একাত্তর ও পচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
কূটনীতিকদের জন্য নিরাপত্তার কোনো অভাব বাংলাদেশে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে আমেরিকান দূতাবাস, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো টানাপড়েন হলে কূটনৈতিকভাবে তাদের সঙ্গে ফয়সালা করব। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভেদ সৃষ্টির উসকানি দিচ্ছে বিএনপি। আমি যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল দূতাবাসকে আশস্ত করছি, কূটনীতিকদের জন্য নিরাপত্তার কোনো অভাব বাংলাদেশে নেই। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সবাই নিরাপদে থাকবেন।
শোভাযাত্রায় দলের অন্য নেতারাও বিএনপির সমালোচনা করে অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা দলটির আন্দোলন রাজপথে মোকাবিলা করার কথা বলেন। এজন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত থাকার আহ্বানও জানান তারা।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ মানুষ অন্নের নিশ্চয়তা পেয়েছে, বস্ত্রের নিশ্চয়তা পেয়েছে। তারা বাসস্থান পেয়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছে। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে জানিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য রাজ্জাক বলেন, পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই, আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট না দেয় আমরা সালাম করে চলে যাব। আজকে আমরা শপথ নিচ্ছি, ইনশাআল্লাহ তোমাদের শেকড় আমরা উপড়ে ফেলব।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, আজ বিএনপি-জামায়াত ভেংচি মারে। আওয়ামী লীগ কোনো বানরের ভেংচিতে ভয় পায় না। এদের দাঁতভাঙা জবাব জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ দেবে।
বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে মন্তব্য করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, এ বিজয়ের মাস থেকেই আমরা ঘোষণা দিতে চাই, পাকিস্তানি দোসর বিএনপি-জামায়াতকে নির্মূল করতে হবে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, তারা বলেছিল ১০ তারিখে নাকি সরকারকে বিদায় নিতে হবে। ১০ তারিখে বিএনপিই পরাজিত হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে যে জাতীয় নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনের ফয়সালা ১০ ডিসেম্বর হয়ে গেছে। ১০ তারিখ তারা পরাজয় মেনে নিয়েছে।