খাদ্যের বিকল্প উৎস খুঁজতে বিদেশ মিশনে চিঠি
দেশে খাদ্যপণ্যের যাতে কোনো সংকট দেখা না দেয় সে জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিকল্প উৎস খুঁজতে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে খাদ্য ও জ্বালানি আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত জুনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সিদ্ধান্ত ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মুদ্রায় গম আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ; ব্রাজিল থেকে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সয়াবিন তেল আমদানি এবং জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের বিকল্প উৎস অনুসন্ধান করা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস আমদানি করতে পারছে না সরকার। খাদ্যপণ্য আমদানিতে সরাসরি বাধা না থাকলেও রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংকের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থাকায় পণ্যের মূল্য পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। আবার উচ্চমূল্যের কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকেও জ্বালানি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি আমদানির বিকল্প উৎস খোঁজার পাশাপাশি পণ্য আমদানিতে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয়েও কাজ করছে সরকারের দফতরগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সংকট মোকাবিলায় বিকল্প উৎস হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে এলএনজি আমদানির চেষ্টা করছে সরকার। গত সেপ্টেম্বরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটি থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়ে আলোচনা করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি উডসাইডের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়াধীন আছে। বিকল্প উৎস থেকে খাদ্যপণ্য আমদানির উদ্যোগও অব্যাহত রয়েছে। তবে এসব পণ্য আমদানিতে কীভাবে বেসরকারি খাতকে আরও বেশি করে যুক্ত করা যায়, এখন সেই প্রক্রিয়াগুলো খতিয়ে দেখছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য আমদানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠাতে সম্প্রতি বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভার্চুয়াল মিটিং করে বৈদেশিক মিশনের বাণিজ্যিক উইংয়ে কর্মরত ইকোনমিক মিনিস্টার, কমার্সিয়াল কাউন্সিলর এবং প্রথম সচিবদের (বাণিজ্যিক) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও জ্বালানির বিকল্প উৎস খোঁজার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মিশনগুলো থেকে পাঠানো তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে রাশিয়া থেকে সূর্যমুখী তেল আমদানির উদ্যোগ নিতে পারে বেসরকারি খাত। এ ক্ষেত্রে দেশটির কাছ থেকে সরকার ও বেসরকারি কোম্পানি উভয়ের কাছ থেকেই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পণ্য আমদানি সম্ভব। তবে এই আমদানির ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া এবং শুল্ক নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তত দুটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে। উভয়পক্ষের সম্মতিতে বাণিজ্যিক পেমেন্ট পরিশোধের জন্য একটি ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফরম তৈরির জন্য কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। এই প্ল্যাটফরম তৈরি হলে দেশটি থেকে বিকল্প মুদ্রায় পণ্য আমদানির সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) আবদুর রহিম খান এ বিষয়ে জানান, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতি, বার্টার ট্রেড, ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহারসহ বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন তারা। তৃতীয় কোনো দেশের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করে বাণিজ্যিক লেনদেন করার জন্য একটি প্ল্যাটফরম গঠনের বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।