কৃষ্ণনগর থেকে উচ্ছেদ মানিক রতনের মানবেতর জীবন যাপন
মালিক উজ জামান, যশোর : অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ হওয়া পুরোহিত মানিক কুমার উপাধ্যায় ও রতন কুমার উপাধ্যায় এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকার কতৃক তাদের পিতাকে প্রদত্ত অর্পিত সম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালীরা জবর দখলে উচ্ছেদ কার্য্যক্রম চালায়। এরপর জবর দখলকারীরা দিনের আলোয় মানিক রতনের বাড়িঘর মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ করে বলে অভিযোগ ওঠে। ভূক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দিয়েছেন। কিন্ত তারা তাদের সরকার প্রদত্ত পৈত্রিক ভিটায় আর ফিরতে পারেননি।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাটি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রেখেছে জবরদখলকারী সুখদেব সরকার গং। ১৩ শতক জমিটি এখন খালি পড়ে আছে। জমিতে থাকা ১২টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে সুখদেব গং। মেহগনি, আম, নারিকেল ছাড়াও হিসাবের বাইরে রয়েছে কলা গাছ, লেবু গাছসহ বেশ কিছু গাছ।
পুরোহিত মানিক কুমার উপাধ্যায় জানান, তার পিতা বিজয় কৃষ্ণ উপাধ্যায় ১৯৬৮ সালে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আমন্ত্রনে ঝিকরগাছা কৃষ্ণনগরে আসেন পূজা মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব নিয়ে। এরপর তারা জে.এল ৬৮ নং কৃষ্ণনগর মৌজায় সাবেক ৬৫৬ বর্তমান ১৬৩৭ ও ১৬৩৯ নং দাগে ১৪ শতক জমি যাহা সরকারের নথিপত্রে খাস ও অর্পিত হিসাবে পরিবগনিত। বিজয় কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র ও পরিবারের সদস্যরা সেখানে বসবাস শুরু করেন। তারা ২০১২ সাল পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করেন। কিন্ত স্থানীয় ভূমি নায়েব জাকির হোসেনের অপতৎপরতায় শ্যামসুন্দর সরকারের পুত্র সুখদেব সরকার জমিটি নিজের দাবি করে। যদিও ১৯৭২ সালে সরকারের পক্ষে সেই দলিলটি বাতিল ঘোষনা করেন। এরপর জমিটি জবর দখলে আরো বড় ষড়যন্ত্র শুরু করে সুখদেব গং। তারা অবৈধ আয়ের অর্থ কাড়ি কাড়ি খরচ করে স্থানীয় প্রশাসন কে পক্ষ নিয়ে ২০২২ সালের ১৩ জুন। প্রশাসনকে সাথে নিয়ে সারা দিন ধরে সুখদেব গং মানিক রতন উপাধ্যায়ের ঘরবাড়ি উচ্ছেদের পাশাপাশি ব্যাপক লুটতরাজ চালায়। যা স্থানীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হয়।
কোন বিচার না পেয়ে ভূক্তভোগীরা বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হন। সেখানেও সুখদেবের পক্ষে একটি মহল দাড়িয়ে যায়। তবে এই মুহুর্তে মানিক রতন বিচার প্রাপ্তির সন্ধিক্ষনে দাড়িয়ে। তারা এখন বিজ্ঞ আদালত ও বিচারকের ন্যয় বিচারের অপেক্ষায়।
এসব গেলো আদালতের কথা। কিন্ত বাস্তবতায় মানিক ও রতন উপাধ্যায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বড্ড মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কির্তীপুরে একটি ক্ষুদ্র ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। গরু রাখার জায়গাও যেন নেই। একদিকে পারিবারিক টেনশন, ওদিকে মামলা করায় সুখদেব সরকার হুমকি ধামকি দিয়েই যাচ্ছে। ফলে জীবনের নিরাপত্ত্বা যেন কিছুতেই নেই। প্রাণভয়েও চলাফেরা করতে হচ্ছে।
মানিক কুমার উপাধায় জানান, বিজ্ঞ সহকারী জজ আদালত ঝিকরগাছা যশোরে তার মামলাটি এখন চলমান। ফলাফলে তিনি ন্যয় বিচারের রায় পেতে অপেক্ষায় রয়েছেন। আসামীরা ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। তারা সুস্থ আইনী লড়াইয়ের পরিবর্তে অন্যায় পথে মামলায় ফলাফল চায়- এটি একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। আশা করি শীঘ্রই এই পরিস্থিতির অবসান হবে। সেই দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি। আশা করি মানুষের ভরসার শেষ স্থান বিজ্ঞ আদালতে ন্যয় বিচার পাবো।