অর্থ ও বাণিজ্যবিশেষ খবর

ভূমিহীন কৃষক বিপাকে: ১ বিঘা ধান চাষে খরচ ২০ হাজার


মালিক উজ জামান: ‘লাভ ক্ষতির হিসাব করে ধান চাষ করতে গেলে মাথায় হাত মামা’। একথা বলছেন গ্রামে গ্রামে ভূমিহীন বোরো ধানচাষীরা। ফলে ভূমিহীন ধানচাষীরা খরচের আধিক্যের কারনে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। শুধুমাত্র একটি চাষের জন্য তাদের জমি মালিকদের সমতল মাঠে ১০ হাজার ও বিলে বিঘা প্রতি আটহাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। এবাদে ধানের চারা বা পাতো ক্রয়, রোয়া, নাঙল, নিড়ানী, সার কীটনাশক প্রয়োগ এবং পানি প্রদানের আলাদা খরচ রয়েছে। ধান পেকে গেলে থাকছে কাঁটা ও বাড়ি আনার খরুচে আরেকটি পর্ব। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে লীজ গ্রহিতা চাষী কে সর্বনি¤œ ২০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।
‘হিসাব করলে মাথাই নষ্ট মামা’ এ কথা বলছেন ভূমিহীন চাষী। মাহিদিয়ার দিলীপ জানালেন, এবার তিন বিঘা বোরো আবাদ করেছেন। তবে হরিনার বিলের জমি লীজ দিয়েছেন। বিঘাপ্রতি আট হাজার টাকার হিসাবে দেড় বিঘায় তিনি ১২ হাজার টাকা লীজ পেয়েছেন। তাদের মাঠে এক বিঘা জমির একটি চাষে জমি মালিক কে দিতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।
একই এলাকার গফুর মিয়া বললেন, ধান করাটা ভূমিহীন কৃষকের জন্য এই মুহুর্তে খরুচে কষ্টকর। কেননা এখানে প্রতিটি পদক্ষেপে খরচের বিষয় রয়েছে। এক বিঘা ধান চাষে কৃষকের খরচ হয়, ২/৩ দফা নিড়ানী বাবদ আটজন জন বা দিনমজুরের খরচ প্রায় চার হাজার টাকা। তবে কোথাও কোথাও ৪০০ টাকা মাথাপিছু দিনমজুর খরচ দিতে হয়। এর আগে চার দফা নাঙল দিতে খরচ হয় ১৬০০ টাকা। রোয়া বাবদ বিঘা প্রতি খরচ ১৬০০ টাকা। সার প্রয়োজন হয় এক বিঘা জমিতে এক হাজার টাকার কিছু কম বেশি। পাতো ক্রয় বাবদ আরো হাজার টাকার দরকার পড়ে। পানি সরবরাহে বা প্রয়োগে এক বিঘা জমিতে খরচ ১৬০০ টাকা সর্বনি¤œ হারে। এরপর থাকছে কাটার পর্ব। শুধুমাত্র কাটতেই খরচ এক বিঘায় ১৫০০ টাকা। কাটা ধান বাড়িতে পরিবহন বাবদ আরো খরচ হয় সর্বনি¤œ এক হাজার টাকা। এখানে বিঘা প্রতি ২০ মনের নিচে ফলন হলে কোন পড়তা নেই। প্রায় ১৫ হাজার টাকা এক বিঘা ধান করতে। এক্ষেত্রে জমি মালিক হলে এই খরচ। আর যদি লীজ গ্রহিতা ধান চাষী বা চাষাবাদের জমি ভূমিহীন কৃষক হন তাহলে তার খরচ বেড়ে হবে ২৫ হাজার টাকা।
ওমর আলী নামে একজন কৃষক জানান তার মাঠে নিজের কোন জমি নেই। তিনি চাষ করেন অন্যেও জমি লিজ নিয়ে। তবে তিনি তার পুত্র কে সাথে নিয়ে রোয়া ও নিড়ানী বা বাশই দেওয়ার খরচ সাশ্রয় করেন। সার কিটনাশক প্রয়োগেও আটসাঁট নিয়ম কানুন মানেন। ফলে এখানেও খরচ কিছুটা বাঁচে। একারনে খরচ ও উৎপাদন হয় সমান সমান। তবে হিসাব যেহেতু খাতায় লেখা হয়না তাই তার লাভ ক্ষতির হিসাব করা হয়না। তা করতে গেলে আর ধান চাষ করা সম্ভব হবে না। তবে নিজের জমি হলে তার পোয়াবারো হোত। সেটি হয়নি, ওটা কপালের দোষ। এখানে তার কিছুই করার নেই।
কৃষক ইব্রাহিম জানান, নিজের জমি না হলে লীজ নিয়ে ধান করাটা খুবই কষ্টকর। কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ উৎপাদনের ধান বিক্রির থেকেও বেশি হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা পোকার আক্রমনে উৎপাদন কম হলে লীজ গ্রহিতা ভূমিহীন কৃষকের মাতায় হাত। এবার বললেন,
‘দিন বদলেছে কাকা, সার জন খরচ পানির টাকা দিতে গেলে কাড়ি হয়ে যায় ফাঁকা।’
জাহাঙ্গীরের এবার ধান রয়েছে বিল হরিনায় ১৮ বিঘা। সব নিজে করেছেন। এ কারনে তার খরচ কম। বললেন, বছরের চালের হিসাব বাদেও অতিরিক্ত ধান বিক্রি করে আরো এক বিঘা জমি কেনার আশা করছি। হয়তো কিছু টাকা যোগান দিতে হতে পারে। তাতে সমস্যা নেই। তবে তিনি ভূমিহীন চাষী নন। তাকে বলা হয় জোতদার কৃষক। কিছু জমি তিনি আশ পাশের ভূমিহীন কৃষককে লিজ দিয়েছেন। জানালেন এর মধ্যে একজন তাকে এই সিজনে বিলে সাত হাজার টাকা দেবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button