এবার ফুলচাষীদের টার্গেট ২১ ফেব্রুয়ারি
মালিক উজ জামান, যশোর : বিশ্ব ভালবাসা দিবস, বসন্ত বরণে দারুন শুরুর পর ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালীতে রমরমা অবস্থা বিরাজ করছে। বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ঘিরে রেকর্ড পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়েছে। গত ১০ দিনে এই বেচাবিক্রি ২৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এবার চার দিন পর আন্তজার্তিক মার্তভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির পালা। ফুল ব্যবসায়িরা ধারনা করছেন অতীতের সব রেকর্ড এবার ভেঙে যাবে। এখন থেকেই অর্ডার আসছে বাইরে থেকে। কয়েক বছরের বাঁধা ধরা নিয়ম এবার আর নেই। তাই এবার উপস্থিতি ও ভাষা শহীদদের প্রতি বাঙালীর স্মরণ ও সমবেদনা থাকবে মাইল ফলক হয়ে। এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি সেটাই বলছে। এবার পাইকরি খুচরা মিলে যশোরে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসে শত কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
২১ ফেব্রুয়ারি কি পরিমান ফুল প্রয়োজন হবে সেই ধারনা না আছে ব্যবসায়ী না আছে ফুল চাষীর না আছে ভোক্তার। তবে সকলেরই ফুল চাই। ঐদিন কোন ফুল কোথাও অবশিষ্ট থাকবে না এটা নিশ্চিত। ফুল বিক্রির সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। একটি ধারনা নিয়ে একেক সংস্থা ১০ থেকে ৭০ কোটি টাকার বেচাকেনার জরিপ করেছে। কিন্ত মাতৃভাষা দিবসে ঐ বিক্রি পরিমান ১০০ কোটি নিশ্চিতভাবেই অতিক্রম করবে। প্রশ্ন উঠেছে মাঠে ঐ পরিমান ফুল আছে কিনা।
ফুলচাষীরা বলেন, গদখালী ইউনিয়ন পরিষদের সকল গ্রাম পানিসারা, গাবুরাপুর, কুলিয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, নারাঙ্গালী, রঘুনাথনগর, বর্ণি, সৈয়দপাড়া, চাঁপাতলা, টাওরা, নিলকন্ঠনগর, পুরন্দরপুর, কাউরিয়া, রাজাপুর, মোহিনীকাটি ও বেজিয়াতলায় ফুল চাষ হয়। এর বাইরে নাভারন ইউনিয়ন, বেনেয়ালি ও শিমুলিয়া ইউনিয়নে ফুল চাষ হয়। সকলেই মাতৃভাষা দিবসের দিকে তাকিয়ে। বসন্তে ফুল হয় বেশি।
এর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ গোলাপ বিক্রি হয়েছে। বিশেষ দিবসে গোলাপের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় দামও উত্তাপ ছড়িয়েছে। চড়া দামে ফুল বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজারে যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না বসন্তের প্রতি ভোরে। কাকডাকা ভোরে ক্ষেতের ফুল নিয়ে হাজির হন হাজারো চাষি। একই ধারায় ক্রেতা থাকে সেখানে। এরা যেমন বহিরাগত তেমনি লোকাল ক্রেতা।
বাইসাইকেলে-মোটরসাইকেলে কিংবা ভ্যানে তারা ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন। বগুড়া, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ও ফড়িয়াদের দর কষাকষিতে জমে ওঠে বাজার। দর কষাকষির পরও বিক্রিত ফুলের দামে খুশি চাষিরা। তবে হতাশার সুর ছিল পাইকারদের কণ্ঠে। চড়া দামে কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি কঠিন হয়ে যাবে বলে সংশয় তাদের।
এ দুইদিন মোকামে প্রতিটি গোলাপ ১৫-২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাঁচদিন আগেও গোলাপের পাইকারি দাম ছিল প্রায় অর্ধেক। জারবেরা প্রতিপিস ১০-১৫ টাকা, রজনীগন্ধা ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস ১৪-১৮ টাকা, জিপসি প্রতিমুঠো ৫০ ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বেচাবিক্রি হয়েছে। এছাড়া গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে গোলাপ ফুল।
বাংলাদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্টান, এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সঙ্গঠন ভাষা দিবস পালন করে। এই ফুলের চাহিদা কম করে হলেও লক্ষ মেট্টিক টন। তবে ফুল তো ওজনে মেপে হিসাব করার বিষয় নয়।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুন ঘিরে ৫/৬ দিন ঝিকরগাছার গদখালী ফুল বাজার ও পানিসারা এলাকা জমজমাট ছিল। ঐ কটা দিন প্রতিদিনই প্রচুর ফুল সারাদেশে পাঠানো হয়েছিল। রোববার ও সোমবার দুইদিনে ২০ লাখ পিসের বেশি শুধু গোলাপই বিক্রি হয়েছে। আর এই গত ১০ দিনের হিসাবে তা ২৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এবার ২১ ফেব্রুয়ারি ফুলচাষীদের সবচেয়ে বড় দিন। ফুল বিক্রির অর্ডার, বেচাকেনা, হিসাব ও টার্গেট বিচার করে এটি বিবেচনা করা হয়।
ঝিকরগাছার গদখালী এলাকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে গদখালী বাজারে বরাবরই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছরের মধ্যে আজ এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। দামও চড়া। ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি।
ঝিকরগাছা উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার ফুলচাষি আব্দুর কাদের, শাহ আলম জানান, ৩০ বছর ধরে নানা জাতের ফুল চাষ করেছি। সবচেয়ে বেশি চাষ করেছি গোলাপ। সেই প্রথম থেকেই বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসে গোলাপের দাম থাকে দ্বিগুণ। তবে গোলাপ কোনোবার ১৫ টাকার বেশি পাইকারি দাম পাওয়া যায়নি। এবার রেকর্ড ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। আর চায়না গোলাপ ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এই দামে সব কৃষকই লাভবান হবেন।
ফুল চাষি সালাম হোসেন, নজরুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন জানান, ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উপলক্ষে গোলাপ ও জারবেরা ফুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তরুণীরা চুলের খোপায় পরার জন্যে জারবেরা ফুল পছন্দ করেন। এজন্য জারবেরাসহ অন্য ফুলের চাহিদাও রয়েছে। এটা ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্ত আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবসে সব ফুল চলবে। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধায় কোন ফুল পড়ে থাকবে না মাঠে। কুড়ি পর্যন্তও বিক্রি হয়ে যাবে। ঝরে পড়ার আগ পর্যন্ত সব ফুল চলবে ঐ দিন। কেননা পুরো দেশ ঐ দিন শ্রদ্ধা জানাতে থাকবে উদগ্রীব। এটি ১৯৫২ পরবর্তী বাঙালীর আবেগ।