আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

বুকভরা বাওড়ে অবৈধ বালু উত্তোলন: কৃষি জমি রাস্তাঘাট বাড়িঘর ভেঙ্গে চুরে একাকার


মালিক উজ জামান, যশোর : বুকভরা বাওড় কেন্দ্রিক আশেপাশের উর্বর কৃষি আঙিনা আজ বিপর্যস্ত। দীর্ঘ দিন ধরে বাওড় থেকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বালি উত্তোলন করায় কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ন ভেঙ্গে পড়েছে। বালি সরবরাহ গাড়ির কারনে শিক্ষার্থী, পথচারীদের নিরাপত্ত্বা চরম বিঘিœত। গ্রামের পাকা বাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। কোন নিষেধকেই আমলে আনছে অবৈধ বালি উত্তোলন সিন্ডিকেট।
যশোর সদর উপজেলার একটি উল্লেখযোগ্য মৎস্য আধার বুক ভরা বাওড়। কিন্ত এখন সেখানে মাছ চাষাবাদ হয়না। আর হলেও সেখানে অবৈধ বানিজ্যিক বালু উত্তোলন প্রাধান্য পেয়েছে। ফরিদপুর ও মঠবাড়ির একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই বাওড় থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে। তবে তাদের বালি তোলার কোন অনুমতি নেই।
স্থানীয়রা জানায়, ফরিদপুর গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র আমীর হোসেন (৫০), সাবেক মেম্বর আব্দুল কাদের (৫২), কাদেরের পুত্র কামরুজ্জামান বাপ্পী, মঠবাড়ি গ্রামের হজরত আলী (৫৫), মান্দার মোড়লের পুত্র আলী হোসেন (৫৩), নজরুলের পুত্র শাহিনুর হোসেন, মৃত হোসেন মোড়লের মোড়লের পুত্র আলমগীর হোসেন, মৃত সুলতান বিশ্বাসের পুত্র আনোয়ার হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, আনোয়ার হোসেনের পুত্র আসলাম, মৃত হাশেম মোড়লের পুত্র আনোয়ার ডাক্তার, ঘরজামাই সাত্তার আলী ঐ অবৈধ বালু উত্তোলন সিন্ডিকেট পরিচালনা করে। বুকভরা বাওড় কমিটির সভাপতি প্রশান্ত কুমার তাদের বালি উত্তোলনে বাঁধা দেয়না। এবিষয়ে স্থানীয়দের বক্তব্য বাওড় কমিটির সভাপতি গাড়ি প্রতি মোটা অঙ্কের কমিশন নেয়। জনশ্রুতি রয়েছে সিন্ডিকেট তাকে গাড়ি প্রতি ২০০০ টাকা দেয়। এ কারনে তিনি কার্যত নিশ্চুপ থাকেন।
বুকভরা বাওড়ের তিনটি স্পটে তিন সেট ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে চক্রটি বালি উত্তোলন করছে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ গাড়ি বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি গাড়ি বিক্রি হয় ২৫০০ টাক দরে। সারাদিন যেমন তেমন সন্ধ্যার পর মঠবাড়ির হিন্দুপাড়া শান্তির মোড়স্থ হারুন স্টোরের সামনে দিনের আয় ব্যয় হিসাব ও অর্থ ভাগাভাগি হয়।
স্থানীয় চাষীরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ দিন ধরে বালি উত্তোলনের ফলে বাওড়ের আশেপাশে থাকা সকল কৃষি জমি বাওড়ে বিলীন হয়েছে। এখন নতুন কৃষি জমি সেখানে বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়। যদিও সরকার বারবার বলছে কৃষি জমি নষ্ট করে কোন প্রকল্প নয়। কিন্ত কে শোনে কার কথা।
কৃষি জমির পাশাপাশি গ্রামের দালান বসতবাড়ি ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকের ঘরে ফাটলের স্পষ্ট চিহ্ন। সরেজমিন দেখা যায়, মঠবাড়ির লুৎফর রহমান, শফিকুল ইসলাম, ইউনুস আলী, মোস্ত দোকানদার, মোশারেফ হোসেন, রওশনের দালানবাড়ি এখন বেকায়দায় পতিত। প্রতিদিন স্থানীয় রাস্তা গুলোতে প্রায় ৪০টি গাড়ি চলাচল করে। চান্দুটিয়া টু কায়েমকোলা, মঠবাড়ি টু ফরিদপুর ভায়া ভেকুটিয়া, মঠবাড়ি টু ইছাপুর ভায়া নারাঙ্গালী টু এড়েন্দা রাস্তায় এসব বালিভর্তি গাড়ি চলাচল করায় বাড়িঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। একই সাথে পিচের রাস্তা তার পরিচয় হারিয়ে এখন ছয় থেকে আট ইঞ্চি বালি কাদার আবরন জমে রাস্তা চলাচলের সম্পূর্ন অনুপযুক্ত। একই সাথে ৬/৭টি কালভার্ট নষ্ট হয়ে রাস্তা এখন মরনফাঁদ।
৮ নং দেয়াড়া মডেল ইউনিয়ন পরিষদের স্বর্ণপদকজয়ী চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান বলেন, আমি বালি উত্তোলনের বিপক্ষে। কৃষি জমি ও রাস্তাঘাট রক্ষায় আমি সাধারন কৃষক ও সাধারন মানুষের পক্ষে। তিনি আশা প্রকাশ করেন বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও দেখবেন। কেননা বুকভরা বাওড়টি সরকারি সম্পত্তি। সেটি দেখার দায়িত্বও সরকারের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button