ট্টগ্রাম কারাগারে অনিরাপদ বোধ করছেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার
জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম কারাগারে বাবুল আক্তারকে রাখার আদেশ দিয়েছে আদালত; যদিও সেখানে থাকতে না চেয়ে আদালতে চোখের জলে ভেসেছিলেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।
কাঠগড়া থেকে তিনি বলছিলেন, চট্টগ্রামের কারাগারকে তিনি তার জন্য অনিরাপদ বোধ করছেন।
সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে মিতু হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন হয়। বিচারক বাবুলসহ সাত আসামির বিচার শুরুর জন্য আগামী ৯ এপ্রিল বিচার শুরুর দিন ঠিক করে দেন।
বেলা ১২টার দিকে বাবুলকে আদালতে হাজির করা হয়। শুরুতে ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় অস্ত্রসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের একটি মামলায় তার সাক্ষ্য নেয় আদালত। বেলা ১টা ৫ মিনিটের দিকে মিতু হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষে পিপি মো. আবদুর রশিদ বলেন, “আজ অভিযোগ গঠন করা হতে পারে। যেহেতু মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে, তাই আসামিরা যেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকে মামলার বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। অন্য মামলায় অন্য কোথাও নিতে হলে এখান থেকে নিয়ে যেন আবার আনা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির পর প্রায় ৪৫ মিনিট শুনানি করেন বাবুলেরর পক্ষে ঢাকা থেকে আসা আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘উনি (বাবুল) জেলে থাকা অবস্থায় পিবিআই দুটি মামলা দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। একটি মামলা করেছেন চট্টগ্রাম পিবিআই’র প্রধান। আরেকটি করেছেন সারাদেশের পিবিআই’র প্রধান।’ বাবুলের আরেক আইনজীবী কফিল উদ্দিন শুনানিতে বলেন, পিবিআই ঢাকা চট্টগ্রামে সবখানে উনার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। এখানে কেন (চট্টগ্রাম কারাগারে)? তাহলে কোন উদ্দেশ্য আছে?
এরপর অন্য আসামিদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান মিয়া ও কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার পক্ষে আইনজীবীরা তাদের নির্দোষ দাবি করেন। বেলা ২টার দিকে আদালত মুলতবি করে অভিযোগ গঠন বিষয়ে বিকেল চারটায় আদেশ দেয়ার সময় নির্ধারণ করেন। বিকালে আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন আসামির আইনজীবীর করা আবেদনে সোমবার বিকালে এডিসি প্রসিকিউশনের কক্ষে এক ঘণ্টা বাবুল আক্তারের সঙ্গে আলাপের অনুমতি দেন।
এরপর বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগারে রাখতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন বিষয়ে আদালত বলেন, “যেহেতু মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে তাই রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি মঞ্জুর করছি। এসময় কাঠগড়ায় থাকা বাবুল আক্তার বলেন, আমার বক্তব্য আছে। চট্টগ্রামে আমি অনেকদিন চাকরি করেছি। সেসময় বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করেছি, এমন অনেক আসামি এখন দণ্ডিত হয়ে চট্টগ্রাম কারাগারে আছে। আর যেখানে (চট্টগ্রাম কারাগারে) আমাকে রাখা হয় সেখানে মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের রাখা হয়। আমার মৃত্যুদণ্ড হয়নি।
বাবুলের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, বর্তমানে উনাকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তিনি ডিভিশনও পাননি। উনার সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে দণ্ডিত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও অনেকে এই কারাগারে আছেন। বাবুল এক সময় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ছিলেন। তিনি বদলি হয়ে যোগদানের জন্য ঢাকায় যাওয়ার পরপরই ২০১৬ সালের ৫ মে চট্টগ্রামে খুন হন তার স্ত্রী মিতু।
তখন বাবুল চট্টগ্রামে ফিরে খুনের মামলা করেছিলেন। পরে পিবিআইর তদন্তে বেরিয়ে আসে, বাবুলের পরিকল্পনায়ই খুন হয়েছিলেন মিতু। এরপর ২০২১ সালের ১২ মে মিতুর বাবার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পর শুরুতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন বাবুল। ওই মাসেই ২৯ তারিখে ফেনী কারাগারে নেওয়া হয়েছিল তাকে।
গত বছরের ২২ মার্চ এই মামলায় হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করতে বাবুলকে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়। সেদিন বাবুলের আইনজীবীরা তার ‘শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার’ প্রয়োজনে তাকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন করলে আদালত কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে ২৪ মার্চ তাকে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর থেকে মামলার ধার্য তারিখের আগে বাবুলকে ফেনী কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হচ্ছিল এবং মামলার কার্যক্রম শেষে আবার ফেনীতে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল।
সোমবার চট্টগ্রাম কারাগারে রাখার আদেশ দেওয়ার সময় বিচারক বলেন, “অসুবিধা হলে, অসুস্থ হলে বা নিরাপত্তা চাওয়ার সুযোগ আছে। তখন বাবুল বলেন, “এখন পর্যন্ত অনেকবার অসুস্থ হয়েছি… (এরপর তিনি কাঁদতে থাকেন) কিন্তু ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হয়নি….” বিচারক বলেন, “অসুস্থ হলে জেল কর্তৃপক্ষ আছে। তারা ব্যবস্থা নেবেন। কোর্টও দেখবে। তখন বাবুলের আইনজীবী বলেন, “উনার ঢাকাতেও মামলা আছে। ফেনীতে রাখে নিরাপত্তার জন্য।”
শেষে বিচারক বলেন, “মামলার বিচার কাজের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেওয়া হলো। চিকিৎসা বা অন্য কোনো বিষয়ে আপনারা জেল কর্তৃপক্ষ এবং প্রয়োজনে আদালতের কাছেও পরে আবেদন করতে পারবেন। অসুবিধা হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে শিফট করতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তখন বিবেচনা করা হবে।”
এরপর বাবুল আক্তারের পক্ষে করা অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে বাবুলসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেয় আদালত।