জলবায়ু সুবিচারে বিল পাশ জাতিসংঘে, ভানুয়াতুকে ইয়ুথেনেটের অভিনন্দন!
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) থেকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে পরামর্শমূলক মতামত চাওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ায় ভানুয়াতু সরকার এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় তরুণদের অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। এটিকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ন্যায়বিচার আন্দোলনের জন্য আইনি নিয়ম প্রতিষ্ঠার দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে তরুণ জলবায়ু কর্মীদের নেটওয়ার্ক ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এ অভিনন্দন জানিয়েছে।
ছোট প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশ ভানুয়াতু বুধবার (২৯ মার্চ) আন্তর্জাতিক জলবায়ু আইন অগ্রসর করার জন্য একটি বড় বিজয় অর্জন করেছে যখন এটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে বিশ্বের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক আদালতকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দেশগুলির বাধ্যবাধকতার বিষয়ে আইনী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাজি করায়।
বিবৃতিতে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস-এর নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘে গৃহীত এই প্রস্তাবটি জলবায়ু ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং আন্তঃপ্রজন্ম সমতার লড়াইয়ে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।” সোহানুর আরো বলেন, ”আমরা এই রেজোলিউশন সামনে নিয়ে আসার জন্য জন্য ভানুয়াতু সরকার, বাংলাদেশসহ ১৮টি কোর গ্রুপ সদস্য এবং অন্যান্য সহ-স্পন্সর রাষ্ট্রসমূহ এবং প্যাসেফিক যুব কর্মীদের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি যে উন্নত দেশগুলোকে তাদের দূষণের জন্য দায়বদ্ধ করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ৷ আমরা তরুণরা জলবায়ু সুবিচারের পক্ষে সমর্থন আদায়ে লড়াই চালিয়ে যাব এবং দেশগুলোকে তাদের অপরিমিত দূষণ বন্ধের জন্য দায়বদ্ধ করব।”
গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ২৬) থেকেই প্যাসেফিক দ্বীপরাষ্ট্রের তরুণদের আন্দোলনে যুক্ত হয় বাংলাদেশের ইয়ুথনেট।
ইয়ুথনেটের সাথে প্রতিধ্বনি করে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিএডি) এর পরিচালক প্রফেসর সালিমুল হক বলেছেন, “জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটে ভানুয়াতুর প্রস্তাবকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে একটি পরামর্শমূলক মতামত চাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জলবায়ু পরিবর্তনের অবিচার ইস্যুতে সমস্ত উন্নয়নশীল দেশের জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় বিজয়। এটি যে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে রক্ষায় তরুণদের আন্দোলননে স্বীকৃতি দিয়ে গত বছর মাত্র তিন লাখ জনসংখ্যার দেশ ভানুয়াতু আইনি পথ খুঁজতে বিশ্বের অন্যতম বড় ওই বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে মতামত চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপের বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রচেষ্টা। আইনগতভাবে বাধ্য না হলেও ভানুয়াতু আশা করে, এই উদ্যোগ বিপদাপন্ন রাষ্ট্রগুলোকে সাহায্য করবে, জলবায়ু-সম্পর্কিত আইনী প্রচেষ্টাকে জোরদার করবে এবং নিষ্ক্রিয়তার জন্য দায়ী দেশগুলোকে দায়বদ্ধ করবে৷ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, ক্ষতি ও মানবাধিকার রক্ষায় আগামী প্রজন্মের জন্য ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নে সহায়তা করতে পারবে।
ভানুয়াতুকে অভিনন্দন জানিয়ে এক টুইট বার্তায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘জলবায়ু ন্যায়বিচার উভয়ই একটি নৈতিক বাধ্যতামূলক এবং কার্যকর বিশ্বব্যাপী জলবায়ু কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বশর্ত। জলবায়ু সংকট শুধুমাত্র মানুষ, সংস্কৃতি, জাতি, প্রজন্মের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে পারে। আসুন কাজটি সম্পন্ন করার জন্য একসাথে কাজ করি।’