চট্টগ্রামবিনোদন

লালদীঘি মাঠে আজ চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ১১৪তম বলী খেলা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৪তম আসর আজ (২৫ মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৩ টায় নগরের লালদীঘি ময়দানে শুরু হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।

এতে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

মেলা কমিটির সভাপতি ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী জানান, বলী খেলার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আজ সকাল ১১টা থেকে সিটি করপোরেশন লাইব্রেরিতে শুরু হয়েছে বলী খেলার রেজিস্ট্রেশন। আগ্রহীরা সেখানে নিজেদের নাম নিবন্ধন করতে পারবেন।

এদিকে ঐতিহ্যের এ বলী খেলাকে কেন্দ্র করে সোমবার (২৪ এপ্রিল) থেকে কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে দেশের বৃহত্তম লোকজ মেলা। শুরুর দিন থেকেই শুধু মানুষ আর মানুষ। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন উপজেলা  থেকে মাটির তৈজসপত্র, ঝাড়ু, টনটনি গাড়ি, মাটির শো পিস, টব নিয়ে বোঝাই ট্রাক আসছে একে একে লালদীঘি এলাকায়। উদ্দেশ্য জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে বৈশাখী মেলায় এসব পণ্য বিক্রি করা। চট্টগ্রামের কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্য বজায় রাখতে বলী খেলার ১১৪তম আয়োজনে দম ফেলার ফুসরত নেই কারও। সাজ সাজ রব লালদীঘি এলাকাজুড়ে। লালদীঘি মাঠে বলী খেলার রিং প্রস্তুত। পাশাপাশি মেলায় আসা বিক্রেতারাও তাদের পণ্যের পসরা সাজাচ্ছেন ক্রেতা আকর্ষণ সৃষ্টি করতে।

ঈদের পরপরই মেলা হওয়ায় বন্দর নগরীর বাসিন্দারা উৎসবের আমেজে রয়েছে। লালদীঘি মাঠকে কেন্দ্র করে কোতোয়ালী, নিউমার্কেট, আমতল, আন্দরকিল্লা ও জেল রোডসহ বিরাট এলাকায় রকমারি পণ্যের পসরা। লালদীঘির পশ্চিম পাশে এবং সিনেমা প্যালেস এলাকায় মাটির তৈজসপত্র, পুতুল, অন্যদিকে, পেট্রোল পাম্পের সামনে বসেছে মাটির শৌখিন জিনিসপত্র, ফুলের টব ও টনটনি গাড়ি। অপরদিকে কোর্ট বিল্ডিং এলাকা থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ মার্কেট এবং লালদীঘি এলাকায় বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র, হাতপাখা, মাছ ধরার বিভিন্ন ফাঁদ, মুড়ি মুড়কি, গৃহস্থালি বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসিয়েছে দোকানিরা।

গৃহস্থালি পণ্যের এই সমাহার থেকে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনে নেবেন এমন আশায় থাকেন নগরবাসী। ঈদের ছুটির আমেজ না কাটতেই আরেক উৎসব আমেজ এই বলী খেলা ও মেলা ঘিরে। প্রত্যাশার সেই বলী খেলার ১১৪তম আসর আজ মঙ্গলবার শেষ হলেও মেলা চলবে তিন দিনব্যাপী।

এদিকে জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলাকে ঘিরে লালদীঘি ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে সিএমপি। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি লালদীঘি ও আশপাশের সাত পয়েন্টে দুই শতাধিক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি থাকছে সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও গোয়েন্দা।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদীঘি মাঠে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। পরে সেই মল্লযুদ্ধই জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিত হয়।

চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এই প্রতিযোগিতা জব্বারের বলী খেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। জব্বারের বলী খেলা একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্য মন্ডিত প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচিত। বলী খেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘী ময়দানের আশেপাশে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। এটি বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার সবচেয়ে বৃহৎ বৈশাখী মেলা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button