লক্ষ্ণৌয়ের জয়ে প্লে অফের সম্ভাবনা কমলো কলকাতার
অনভিজ্ঞ মহসিন খানের বাজিমাত। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। মাত্র ৫ রান দিলেন তিনি। প্রথম বলে রান পাননি গ্রিন। দ্বিতীয় বলে এক রান নেন। শেষ ৪ বলে দরকার ছিল ১০ রান। আবার এক রান। ৩ বলে ৯ রান করতে ব্যর্থ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের দুই বিগ হিটার টিম ডেভিড এবং ক্যামেরুন গ্রিন। শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ৫ রানে হারল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস।
লক্ষ্ণৌয়ের ভাগ্য ফিরলেও কলকাতার শিল্পপতির দলের জয়ে কপাল পুড়ল নাইটদের। কেকেআরের টিকে থাকার জন্য লক্ষ্ণৌয়ের পয়েন্ট খোয়ানো দরকার ছিল। কিন্তু এই জয়ের ফলে ১৩ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উঠে এলেন ক্রুনাল পাণ্ডিয়ারা। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্লে অফের ছাড়পত্র সংগ্রহ করে ফেলেছে গুজরাট। চেন্নাই এবং লক্ষ্ণৌয়ের ১৭ পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছনোর সুযোগ রয়েছে। বাকি দুই দল পাঞ্জাব এবং ব্যাঙ্গালুরও নিজেদের শেষ দুটো ম্যাচ জিতলে ১৬ পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে পারবে। সেখানে বাকি এক ম্যাচ জিতলেও সর্বোচ্চ ১৪ পয়েন্টে শেষ করতে পারবে নাইটরা। অর্থাৎ লক্ষ্ণৌয়ের জয়ে প্লে অফের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হল বা আর থাকল না বলা চলে কলকাতার।
মঙ্গলবার (১৬ মে) প্রথমে ব্যাট করে ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১৭৭ রান তোলে লক্ষ্ণৌ। জবাবে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রানে থেমে যায় মুম্বাই। হারের ফলে সমস্যার পড়ে গেলেন রোহিত শর্মারা। শেষ ম্যাচ জিতলে ১৬ পয়েন্টে শেষ করবে মুম্বই। সেখানে পাঞ্জাব এবং আরসিবিও একই পয়েন্টে শেষ করতে পারে। তিন দলের সমান পয়েন্ট হলে রানরেট দেখা হবে। সেক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে থাকবে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
এদিন একাই ম্যাচের রং বদলে দেন মার্কস স্টোইনিস। ছয়ের বন্যা বইয়ে দেন। ৪৭ বলে ৮৯ রানে অপরাজিত। বিধ্বংসী ইনিংসে ছিল ৮টি ছয়, ৪টি চার। আইপিএলে সর্বোচ্চ রান অজি অলরাউন্ডারের। শেষ ৩ ওভারে ৫৪ রান তোলেন। ১৫তম ওভারে একশো রানের গণ্ডি পার করে লক্ষ্ণৌ। কিন্তু শেষ পাঁচ ওভারের পূর্ণ ফায়দা তোলেন স্টোইনিস। আবার শেষদিকে এত বেশি রান দেওয়ার জেরেই ডুবতে হল মুম্বাইকে,
টসে জিতে লক্ষ্ণৌকে ব্যাট করতে পাঠান রোহিত। কাইল মেয়ার্স না থাকায় এদিন কুইন্টন ডি’ককের সঙ্গে ওপেন করেন দীপক হুডা। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। ৫ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ব্যাক টু ব্যাক বলে জোড়া উইকেট তুলে নেন জেসন বেহরেনডর্ফ। প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরেন প্রেরক মনকড়। মাত্র ১২ রানে জোড়া উইকেট হারায় লক্ষ্ণৌ। রান পাননি ডি’ককও। ১৬ রানে ফেরেন প্রোটিয়া ওপেনার। ৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে গিয়েছিল লক্ষ্ণৌ। কিন্তু পরিত্রাতার ভূমিকায় ক্রুনাল পাণ্ডিয়া এবং মার্কাস স্টোইনিস। ৪২ বলে ৪৯ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হন লক্ষ্ণৌয়ের নেতা। তার আগে ৮২ রান যোগ করে এই জুটি। শেষ পাঁচ ওভারে শুধুই স্টোইনিস শো। রুদ্রমূর্তিতে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ানকে। জর্ডানের এক ওভারে ২৪ রান নেন। নির্ধারিত ওভারের শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রান তোলে লক্ষ্ণৌ। জোড়া উইকেট নেন বেহরেনডর্ফ।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা দারুণ করে মুম্বাই। প্রথম উইকেটে ৯০ রান যোগ করেন রোহিত শর্মা এবং ঈশান কিষাণ। দীর্ঘদিন পরে পুরোনো রোহিতের ঝলক দেখা যায়। তিনটি ছক্কা হাঁকান হিটম্যান। যেভাবে শুরু করেছিলেন, মনে হয়েছিল আজকে হয়তো অর্ধশতরান পাবেন। কিন্তু বিষ্ণোইয়ের বলে বড় শট মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন। ২৫ বলে ৩৭ রান করে আউট হন মুম্বাইয়ের অধিনায়ক। ৯০ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। উইকেটের অন্য প্রান্তে দুরন্ত ঈশান কিষাণ। ৩৫ রানে অর্ধশতরান তুলে নেন। শেষপর্যন্ত ১টি ছয় এবং ৮টি চারের সাহায্যে ৩৯ বলে ৫৯ রানে আউট হন। ১০৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় মুম্বই।
তখনও ম্যাচ রোহিতদের দখলেই ছিল। কিন্তু নিজেদের দোষেই ম্যাচটা কঠিন করে ফেলে মুম্বই। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার যশ ঠাকুরের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে স্কুপ শট মারতে গিয়ে নিজেই উইকেটে মারেন সূর্যকুমার। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। মাত্র ৭ রানে ফেরেন গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান। নেহাল ওয়াধেরা শুরুটা ভাল করলেও ১৬ রানে ফিরে যান। দারুণ অধিনায়কত্ব ক্রুনাল পাণ্ডিয়ার। রোহিত, ঈশানের দারুণ শুরুর পরও বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে লক্ষ্ণৌকে ম্যাচে ফেরান। তবে কেন ক্যামেরুন গ্রিনের আগে বিষ্ণু বিনোদকে নামানো হয়েছিল বোঝা গেল না। কোনও অবদানই রাখতে পারেননি মুম্বাইয়ের ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার। ম্যাচের ভাগ্য নির্ভর করছিল টিম ডেভিড-ক্যামেরুন গ্রিনের জুটির ওপর। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩০ রান। দলকে জয় এনে দিতে পারেননি মুম্বাইয়ের দুই বিগ হিটার। উল্টে শেষ ওভারের নায়ক মহসিন খান।