শুধু এক প্রতিষ্ঠানেই ড. ইউনুসের হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি
ড. ইউনুসের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমেই প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ প্রকাশিত হয়েছে কীভাবে ড. ইউনুস দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করেছেন, কীভাবে শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আদালতে বিচারাধীন মামলার রায় নিজের পক্ষে আনার লক্ষ্যে বিচারকসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার জন্য একটি দালাল চক্রের সাথে ঘৃণ্যতম চুক্তি করেছেন। বাংলাদেশের অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন এবং দণ্ডবিধি অনুযায়ী এসকল কাজ গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। ড. ইউনুসের অর্থপাচার, দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এবার তার বিস্ময়কর কর ফাঁকির অপরাধের ঘটনা সংশ্লিষ্ট সকলকে হতবাক করেছে। কর ফাঁকির ব্যাপকতা, গভীরতা ও অপরাধের অভিনবতা বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর ফাঁকির ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রামীণ টেলিকম তথা গ্রামীণফোনের লাইসেন্স গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। লাইসেন্স গ্রহণের পূর্বে তিনি সরকারের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নিতে চাচ্ছেন। অঙ্গীকার করেছিলেন কোনও মুনাফার জন্য নয় বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সেবা প্রদানই হবে এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। মূলত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ টেলিকমের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। লাইসেন্স গ্রহণকালে দেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অঙ্গীকার করলেও ড. ইউনুস দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যা যা করণীয় তার প্রতিটিই করেছেন। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্রামীণফোনের অধিকাংশ শেয়ার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছেন।
গ্রামীণ টেলিকম বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার, যার মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর গ্রামীণফোন থেকে হাজার কোটি টাকার উপর ডিভিডেন্ড পায়। কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গঠিত এই অলাভজনক কোম্পানির কোনও শেয়ার মূলধন নেই, কোন ব্যক্তি মালিকানা নেই । আইন অনুযায়ী এর কোনও ডিভিডেন্ট অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সুযোগ নেই। অথচ ড. ইউনুস প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকার উপর ডিভিডেন্ট সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কয়েক হাত ঘুরিয়ে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করে আত্মসাৎ করছেন। ড. ইউনুসের এই অপরাধ অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ।
গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪ -এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬% বিতরণ করে আসছে যদিও গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়। আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসেবে বুক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০% হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫% থেকে ৩৭.৫% পর্যন্ত।
এই করপোরেট রেট এবং ডিভিডেন্ড ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি। কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনওভাবেই গ্রামীণ টেলিকম এর লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়। গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সকল কর ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের। ড. ইউনুসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। ড. ইউনুস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনা সমূহ হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অংকের।
গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড. ইউনুস প্রতিবছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনুস ২৫% কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০%। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনুস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০%। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫%। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনুস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫% কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫%, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০%।
এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনুস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করে রেখেছেন। এ সকল মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনুসকে যেন আইনের মুখোমুখি হতে না হয়। ড. ইউনুসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ড. ইউনুসের কর ফাঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত তদন্তে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ড. ইউনুস নিজে এবং তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনাতেই কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত।