সাব হেডিং: কর্ণফুলীর ব্রিজঘাটে স্থায়ী বাজারের ব্যবস্থা নেই, তাই ভাঙে আর ইজারা দেয়!
জে, জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
২০ বছর পর আবারও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) গত ২ দিন ধরে উচ্ছেদ করেছেন কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ব্রিজঘাট কাঁচা বাজার টু পুরাতন ব্রিজঘাট বাজার। অভিযানে প্রায় আড়াই শত দোকান ঘর গুড়িয়ে দিয়েছেন। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ (সিডিএ) এর স্পেশাল মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আফরোজ চৌধুরী।
একাধিকসূত্র বলছে, কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ কিংবা সিডিএ স্থায়ী ভাবে কোন দোকানঘর নির্মাণ না করায় বার বার ভাঙনের মুখে পড়েছে পুরাতন ব্রিজঘাট কাঁচা বাজার ও দোকানঘর। এতে গত দুই দিনে প্রায় ৬শ’ মানুষ তাঁর ব্যবসাস্থল হারিয়েছে। এসব ৬শ’ পরিবারের ২০ হাজার লোকজনের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। তাঁদের আয় ইনকামের পথ বন্ধ হয়েছে। অনেকে ভাঙা দোকানের ধ্বংসস্তূপে বসে অঝরে কেঁদেছেন। কিন্তু স্থানীয় কোন প্রশাসন, চেয়ারম্যান বা নেতারা পাশে দাঁড়াননি।
জানা যায়, ২০২০ সালে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের সব উপজেলায় তিন তলা বাজার নির্মাণ করে দেবেন। তিনি বলেছিলেন, গ্রামীণ এলাকায় বাজার উন্নয়নের জন্য এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ টাকায় ৪৯১টি উপজেলায় ৫২০টি বাজার নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় তিন তলা বাজার হবে। যার আয়তন হবে চার হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুটের। এতে গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন ও কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। কিন্তু এ সুযোগ সুবিধা কর্ণফুলী উপজেলায় এখনো পৌঁছায়নি।
যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ঘোষণা দেন, তাঁদের আওতাধীন এলাকা কর্ণফুলী নদীর বামতীর মইজ্জারটেক হতে ষ্টোর ইয়ার্ড ফর ফ্লোটিং ব্রীজ (ভাসমান সেতু) পর্যন্ত (পিসি রোড) সড়কের উভয় পার্শ্বে ভাসমান অবৈধ স্থাপনা/অবকাঠামো উচ্ছেদ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে সংস্থাটি দুদিনের অভিযান শেষ করলেও উচ্ছেদ এলাকায় ১৫ দিন ধরে কাজ করবেন। পাশপাশি পরে আবারও অভিযান পরিচালনা করবেন।
এলাকার সাধারণ লোকজন ও চরপাথরঘাটার ব্যবসায়িরা বলেছেন, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর পর ব্রিজঘাট কাঁচাবাজার ইজারা ও সিডিএ’র জমি খাস ঘোষণার পরেই উপজেলা প্রশাসন ও সিডিএ’র মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে অনেক চিঠি চালাচালি হলেও কোন সুরানা হয়নি। অনেকেই এর জের ধরে সিডিএ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান। কিন্তু সিডিএ বলছেন এটি তাঁদের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর আগেও একাধিকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২০০৩ সালেও এসব স্থাপনা ভেঙেছিলেন।’
সিডিএর এস্টেট শাখার অফিসার মো. আলমগীর খান বলেন, ‘ব্রিজঘাট কাঁচাবাজার থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট পর্যন্ত দুপাশ যতটুকু দোকানঘর ভেঙেছে তাতে সিডি অস্থায়ী বাউন্ডার নির্মাণ করবেন। এত টুকুতেই দুদিনের অভিযান সমাপ্তি হবে। পরে আবারো উচ্ছেদ অভিযান করা হবে। তবে সিডিএর পরিকল্পনা রয়েছে ব্যবসায়িদের জন্য স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণের ।’
ব্রিজঘাটের মাথায় কয়লার মাঠ ও ডান পাশের মার্কেট ভাঙা হলো না কেন? এমনকি কয়লার মাঠের বিষয়ে সিডিএ’র সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কি জানতে সিডিএ নির্মাণ বিভাগ-১ এর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের অফিসে মামলার কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যখন দেখব কোন আদেশ নেই। তখন ওসব এলাকা ও শিগগরই ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
মইজ্জারটেক টু ব্রিজঘাট পুরো এলাকা উচ্ছেদ করা হরা হবে কী না? নাকি উপজেলা প্রশাসন বাজারের যে অংশটি সম্প্রতি ইজারা দিলেন, তা উচ্ছেদ করলেন? না যতটুকু জমি উপজেলা প্রশাসন রিজুম বা খাস করে ফেলতেছে ওটাই উচ্ছেদ করলেন? এমন প্রশ্ন করলে সিডিএ সচিব মো. মিনহাজের রহমান কোন উত্তর দেননি। শুধু জানালেন ‘নিয়ম অনুযায়ি উচ্ছেদ করা হচ্ছে ।’
অন্যদিকে সকাল থেকে সিডিএ’র চেয়ারম্যানকে ৪৫ বার মুঠোফোনে কল করলে শুধু একবারই ফোন রিসিভ করেন। তখন উচ্ছেদের বিষয়টি জানিয়ে পুনর্ভাসন করার জন্য স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, ‘আমাদের লোকজন এখনো উচ্ছেদ অভিযানে রয়েছেন। তাঁরা দুই দিনের অভিযান শেষ করে আমাকে রিপোর্ট জানাবেন। তারপর সকল বিষয় বিবেচনা করে দোকানদারদের জন্য স্থায়ী কিছু করার চিন্তা করব (ইনশাল্লাহ)।’
সিডিএ’র এই অভিযানে পরিচালনাকালে নিরাপত্তায় ছিলেন সিএমপির ৮০ পুলিশ সদস্য (১৫ জন নারীসহ) ও কর্ণফুলী থানা পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশ ফোর্স। এছাড়াও অভিযানের সময় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সিডিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন।