আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা গাজীপুরে পরাজয় আওয়ামী লীগ কোথায়
রাজনৈতিক দলের ক্ষতিটা কে করে জানেন? গাজীপুরের ফলাফল ও বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি দেখে অনেক প্রশ্ন চারদিকে উত্থাপন হচ্ছে। গত সপ্তাহ পুরোটাই বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে উত্তাল হাওয়া বয়েছে। আমেরিকার কঠিন ভিসানীতি ঘাবড়ে দিয়েছে অনেককে। বাড়তি যোগ হয়েছে গাজীপুর নির্বাচনের ফলাফল। জটিল সব রাজনীতি অতি উৎসাহীরা তৈরি করে। সর্বনাশা পরিবেশ তারাই তৈরি করে। জেনেশুনে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বনাশাদের কবলে পড়ে। কঠিন খেসারত দিয়ে সবকিছুর সংশোধন করে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। সরকার পরিবারের একজন দাঁড়িয়েছিলেন। ভোটের বাক্সে তেমন সাড়া মেলেনি। লড়াই হয়েছে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের। টেবিলঘড়ি মার্কার কাছে নৌকা হেরেছে। জাহাঙ্গীরের বিপক্ষে ছিল পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র। নেতারা আজমত উল্লার পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান দেখিয়েছেন।
ঢাকা ও আশপাশ এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট চেয়েছেন নৌকায়। কেউ করেছেন সেলফিবাজি। কেউ জাহাঙ্গীরকে গালাগালি। তারা কামিয়াব হতে পারেননি। জায়েদা খাতুনের ঘরে জয় গেছে। এ নিয়ে তৃতীয় পক্ষের উল্লাসের কিছু নেই। জায়েদা খাতুনও আওয়ামী লীগ পরিবারের। তাঁর ছেলে আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার মনোনয়ন পাননি। মাকে নিয়ে মাঠে নেমে জয় নিয়েছেন ঘরে। নিরপেক্ষ ভোটে আওয়ামী লীগের একজন হেরেছেন। বিজয়ী হয়েছেন আরেকজন। জয়-পরাজয় দুটোই আওয়ামী লীগের ঘরে। বাড়তি যোগ, জাতি দেখল আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠুু নির্বাচনে কোনো বাধা নেই। কোথাও সমস্যা নেই। হেরেও লাভ হলো আওয়ামী লীগের।
আমেরিকার নতুন ভিসানীতি নিয়ে অনেককে উল্লাস করতে দেখছি। আমেরিকা কি কোথাও বলেছে এ ভিসানীতি শুধু আওয়ামী লীগের জন্য প্রযোজ্য। আমেরিকা স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ভোট নিয়ে সব দলের জন্য তাদের একই নীতিমালা। যারাই সুষ্ঠুু ভোট প্রদানে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে আমেরিকা থাকবে। ভোটে বাধা প্রদানকারী যে-ই হোন তিনি এবং তাদের পরিবার-পরিজন কেউই মার্কিন মুলুকের ভিসা পাবেন না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুধু নয়, রাজনৈতিক দলও বাদ যাবে না। এখন বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ বাধাগ্রস্ত হলে তাদের জন্যও এ নীতি প্রযোজ্য হবে না, এমনটি মনে করার কারণ নেই। বিএনপির কেউ আওয়ামী লীগকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তারাও ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় যাবেন। সব দলই এ নীতিমালার আওতায় রয়েছে। আমেরিকা তাদের শক্ত অবস্থানের কথা ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি বিএনপির একজন নেতা কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি প্রদানেরও কঠোর নিন্দা জানিয়েছে তারা। আমেরিকাকে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারও খুশি হওয়ারও কিছু নেই।
আমেরিকা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের গার্মেন্টের সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রারও প্রশংসা বারবার তারা করছে। সবাইকে বুঝতে হবে, বিশ্বকূটনীতি নিয়ে আমেরিকার নিজস্ব নীতিমালা থাকে। ডেমোক্র্যাটরা যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তারা সারা দুনিয়ার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে মাথা ঘামায়। জো বাইডেনের নীতিমালা এক ধরনের, ট্রাম্পের ছিল আরেক। বাইডেন সরকার বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠুু একটা পরিবেশ দেখতে চায়। এতে সমস্যা কোথায়? ভোট নিয়ে বাংলাদেশকে সংবিধানের বাইরে যেতে মতামত তারা দেয়নি। সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হবে নির্বাচনী সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমেরিকার কোনো মাথাব্যথা নেই। শেখ হাসিনা নিজেই স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি সুষ্ঠুুভাবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। তিনি বিএনপিকে অনুরোধ করেছেন তারা যেন ভোটে আসে। ভোটকে প্রাণবন্ত করতে সবার আগে দরকার সর্বজনীন অংশগ্রহণ। বিএনপি ভোটে না এলে কীভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে?
ভোটে জয়লাভ করতে সবার আগে দরকার মানুষের মন জয় করা। আমেরিকা, আমেরিকা বলে চিৎকার করে লাভ নেই। জাতীয় সংসদের আগামী নির্বাচন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। শেখ হাসিনা সেই অবস্থান থেকে এক দিনের জন্যও সরেননি। এ কথা সত্যি, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অকারণে বিতর্কে টেনে নিয়েছিলেন কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা। তাদের অতি উৎসাহে অনেক ক্ষতি হয়েছে। যার কোনো দরকার ছিল না। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের অর্জন সুষ্ঠু ধারার উদার রাজনীতি ও ভোটাধিকার। ২০১৮ সালের ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী বিতর্কে জড়ানো কর্মকর্তাদের ছাড় দেননি। তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়নি। তারা কেউ ভালো পদ পাননি। বুঝতে হবে আওয়ামী লীগ গণমানুষের একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এ দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। তাঁর মেয়ে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেই এখন সারা বিশ্ব বলছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি শেখ হাসিনার অর্জন। আমেরিকাও এ কথা স্বীকার করছে। তারাও বারবার শেখ হাসিনার দেশ চালানোর সাফল্যের প্রশংসা করছে।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সব ইতিবাচক পরিবেশ ছিল আওয়ামী লীগের অনুকূলে। সারা দেশের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছিল একটি কথা, দেশের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে আবার দরকার। সবকিছু ছাপিয়ে ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেশের সব শীর্ষ ব্যবসায়ী অনুষ্ঠান করে বক্তৃতা দিয়ে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সেদিন পিএইচপি গ্রুপের সুফি মিজানুর রহমানের মতো ব্যক্তিত্বকে বক্তব্য দিতে দেখেছিলাম। শুধু ব্যবসায়ীরা নন, আলেম-ওলামা, মিডিয়া সবাই ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কথা বলেছিলেন উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে। বিপরীতে বিএনপির প্রার্থীরা মাঠেই ছিলেন না। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছিলেন কারান্তরিন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। মূল নেতৃত্বের অনুপস্থিতি, মামলা-হামলায় কাবু বিএনপির কর্মীরা ছিলেন মাঠছাড়া।
আওয়ামী লীগ কর্মীরা সেদিন ছিলেন চাঙা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ছিলেন ফুরফুরে। তিনি সারা দেশে সরাসরি ভোটের প্রচারণায় অংশ নেন। কর্মীদের চাঙা করেন। মাঠে ময়দানে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সেই নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগ ২৫০-এর বেশি আসন পেত। বাস্তবতা দেখেই একদল সরকারি কর্মকর্তা মাঠে ময়দানে নিজেদের জাহির করতে সরকারি দল হয়ে উঠলেন। তাদের কেউ কেউ এমপি প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ তুললেন। গুটিকয় কর্মকর্তা ভোটকে বিতর্কিত করলেন। অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডের দায় একটি রাজনৈতিক দলের ওপর বর্তাতে পারে না। এ দায় তখনকার নির্বাচন কমিশন ও সেই কর্মকর্তাদের নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের চিহ্নিত করা হোক। ব্যবস্থা নেওয়া হোক তাদের বিরুদ্ধে। কারণ তাদের কর্মকান্ডের খেসারত এখন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে।
আমেরিকা অবশ্যই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নয়। তারা সরকারেরও বিরুদ্ধে নয়। আমেরিকাকে ভুল বুঝিয়ে এ দেশের বিশেষ গোষ্ঠী ও মহলের বাংলাদেশের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কিছু নেই। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বাংলাদেশের বিশাল উন্নতি -সমৃদ্ধির প্রশংসা করেছে কিছুদিন আগেও। করোনা ও যুদ্ধের অর্থনীতি বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা দেখছে ইতিবাচক অবস্থানে। শেখ হাসিনা সারা বিশ্বের কাছে এখন রোল মডেল। সর্বশেষ ওয়াশিংটন সফরকালে বিশ্বব্যাংক বারবার শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছে। তারা শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। আমেরিকান সরকারের ইঙ্গিত ছাড়া বিশ্বব্যাংকের এত বড় সংবর্ধনা শেখ হাসিনাকে দেওয়ার কথা নয়। তার পরও আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যা কোথায়? হিসাব খুব বেশি কঠিন নয়। আমেরিকা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার শেখ হাসিনার অর্জন। নিরপেক্ষ ভোটের প্রশ্নে আমেরিকার সঙ্গে শেখ হাসিনার কোনো বিরোধ নেই। মুখের কথার সঙ্গে আড়ালের কূটনীতির হিসাব সারা দুনিয়ায় আলাদা। বাংলাদেশ এখন কঠিনভাবে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করছে মার্কিন সরকার। আগামী দিনে এ স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
আমার দাদি বলতেন, ‘গাছ তোমার পরিচয় কী? জবাবে গাছ বলত, ফলে পরিচয়।’ বাংলাদেশে কারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের পক্ষে, কারা বিপক্ষে সারা দুনিয়া জানে। সৃষ্টির পর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি জনকল্যাণমূলক, ইতিবাচক, অসাম্প্রদায়িক। অজুহাত সৃষ্টির দরকারও নেই। মিথ্যাচার, কুৎসা রটিয়ে আওয়ামী লীগকে শেষ করা যাবে না। সবাইকে বুঝতে হবে, নেতিবাচক রাজনীতি রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না। জনকল্যাণহীন জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি দুর্ভোগ বয়ে আনে। এ যুগে এ সময়ে সংঘাত, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিশ্ব। মানুষের সমর্থন থাকলে যে কোনো পরিস্থিতি জয় করা যায়। ১৯৭০ সালে বাংলার জনগণের সমর্থন ছিল বলেই বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। স্বাধীনতার পক্ষে রায় নিয়ে তিনি একক নেতা হিসেবে বেরিয়ে এসেছিলেন। মানুষই বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা করেছে। বুঝতে হবে, ক্ষমতায় তখন ছিলেন ইয়াহিয়া খানের মতো দৈত্য সামরিক আইন প্রশাসক। পাকিস্তানি সেই সেনাশাসককে পালাতে হয়েছিল গণজাগরণের কাছে। স্বাধীনতার পর সামরিক সরকারগুলোর আমলে এ দেশে ভোট মানে হুন্ডা-গুন্ডার লীলাখেলা ছিল। হ্যাঁ-না ভোটের নামে হয়েছিল ভোটাধিকার ধ্বংসের প্রহসনের উৎসব। ১৯৭৯ সালের সংসদে বিরোধী দলের আসন ছিল মাত্র ৩৯। ১৯৮৬ সালে নির্বাচনের ফলাফল এরশাদকে বারবার বদল করতে হয়েছিল। আওয়ামী লীগের জয় ঠেকাতে তা না করে উপায় ছিল না। সংসদীয় ক্যুর ভয়ে সংসদই ভেঙে দিয়েছিলেন এরশাদ। ১৯৮৮ সাল আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। মানুষ আজ ভোটের সেসব পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। সর্বশেষ গাজীপুরের ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশের প্রশংসা করেছে সবাই। এ ভোটে বিএনপির আসার প্রয়োজন ছিল। অন্য সিটিগুলোতেও তাদের প্রার্থী দিলে ভালো করত। ২০১৩ সালের সিটি ভোটে তারা পাঁচটি মেয়র পদে জয় পেয়েছিল। এবারও ভালো করার সম্ভাবনা ছিল। ভোটে না এসে শুধু অভিযোগ করলেই হবে না। দেশ-বিদেশে নালিশ জানালে চলবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তনের একটাই পথ- ভোটে অংশগ্রহণ। বুঝতে হবে, দেশ-বিদেশে নালিশ করে সরকার বদল করা যায় না। নালিশের কূটনীতিতে বিদেশে ভাবমূর্তি নষ্ট হয় দেশের। আর কিছু না।
কোথাও কোনো সমস্যা থাকে না আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে। কোনো চক্রান্ত প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলকে স্পর্শ করতে পারে না। আওয়ামী লীগের সমস্যা ভিতরের কিছু মানুষ। বাইরের কেউ না। অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার পরাজয় এবারই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। তখন জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির অধ্যাপক এম এ মান্নান। অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা মানুষটা ভালো। দলের জন্য তাঁর ত্যাগও রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, বয়সের সঙ্গে তিনি বোধহয় আগের মতো গণমুখী অবস্থানে নেই। ভোটের রাজনীতিতে নেতা-কর্মীদের জয় করে চলতে হয়। টঙ্গীতে শক্ত অবস্থান থাকার পরও আজমত উল্লা একচ্ছত্র ভোট পাননি। গাজীপুরের মানুষ তাঁকে নেয়নি ইতিবাচকভাবে। টঙ্গীতেও নৌকার ব্যাচ পরে কেন্দ্রে গিয়ে মানুষ ভোট দিয়েছে টেবিলঘড়িতে। বিকাল পর্যন্ত নৌকার সমর্থকরা ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। সন্ধ্যার পর থেকে আজমত উল্লাকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা ফেসবুক সয়লাব করে ফেললেন। একবারও বুঝলেন না কঠিন বাস্তবতা।
আজমত উল্লার জন্য খারাপও লাগে। এ বয়সে এসে এভাবে বেইজ্জতি হবেন ভাবেননি। আবার এমন একটা ভোটের পরিবেশ ছিল যা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও সুযোগ নেই। ভোটে হারেননি আজমত উল্লা একা। জয় হয়েছে যারা নৌকাকে হারাতে চেয়েছিলেন তাদের। রাজনীতি আওয়ামী লীগ বনাম অ্যান্টি আওয়ামী লীগের। ধানের শীষের প্রার্থী ছিল না। এ ভোট কোথায় গেছে? তারা কি কেন্দ্রে যাননি? সরকার পরিবারের রনি সরকার কিছু ভোট পেয়েছেন। ভালো ভোট টেনেছেন চরমোনাই সমর্থক হাতপাখার প্রার্থী। জাতীয় পার্টিও খারাপ করেনি। নৌকা হেরেছে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটের কাছে। দলের ব্যর্থ কৌশল ও প্রচারের কাছে। পরাজয়ের দায় শুধু আজমত উল্লার একার নয়, গাজীপুরের সব আওয়ামী লীগ নেতাকেই নিতে হবে। বাদ যাবেন না ঢাকা থেকে গিয়ে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ না করে সেলফিবাজি করা নেতারাও।
ভোটের অনেক ধরনের হিসাবনিকাশ আছে। নায়ক-নায়িকা আর গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা হাঁটাহাঁটি করলে ভোট আসে না। সমস্যা ঘরে-বাইরে। আওয়ামী লীগের কিছু মানুষ নিজেরাই জটিল অবস্থা পাকিয়েছিল। মাঠের কর্মীদের দোষ খুঁজে লাভ নেই। সমস্যা যিনি যত বেশি পেয়েছেন তাদের নিয়ে। আগামী ভোটের আগে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নেত্রীর নির্দেশ মানবেন না, কেন্দ্রকে পাত্তা দেবেন না তাদের আওয়ামী লীগে রাখা কি জরুরি?
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন