শীর্ষ নিউজ

আশঙ্কাজনক হারে ফসলি জমি কমছে চৌগাছায়


মালিক উজ জামান, যশোর : যশোরের চৌগাছা উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে ফসলি জমি কমছে। প্রতি বছর কমছে জমি, যা ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। গত এক দশকে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি কমেছে। বাড়িঘর, মিল কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়ক, স্কুল কলেজ নির্মাণের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি বলে অনেকের অভিমত।
একদিকে চৌগাছায় হু হু করে বাড়ছে জনসংখ্যা অন্যদিকে মারাত্মক আকারে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। ফসলি জমি কমে যাওয়ার ঠেকাতে না পারলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে এর খেশারত দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ১টি পৌরসভার ১৬১টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত উপজেলাতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বসবাস। জনশ্রুতি আছে, চৌগাছা প্রথমে থানা পরবর্তীতে উপজেলা হওয়ার পর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপজেলা সদরকে নিয়ে ২০০৪ সালে পৌরসভা গঠন করার পর অভূতপূর্ব উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে সর্বত্র। যে কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এখানে সব ধরনের ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেতে শুরু করে, নির্মিত হয় গার্মেন্টস শিল্পের মত বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াত সব কিছুতে অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে। সব দিকে যখন শুধু উন্নয়ন ঠিক সেই সময়ে চৌগাছাবাসীর জন্য ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ হচ্ছে আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে তিন ফসলি উর্বর জমি। প্রতি বছর কোন না কোনভাবে নষ্ট হচ্ছে জমি এবং তা ব্যাপক আকারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দশ বছর আগে চৌগাছা উপজেলায় মোট ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২২৭৭৫ হেক্টর। দশ বছর পরে এসে বর্তমানে সেই জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৫০০ হেক্টরের ও কম। অর্থাৎ গত দশ বছরে ফসলি জমি কমেছে প্রায় ৩০০ হেক্টর। বিঘায় হিসেব করলে দাঁড়ায় প্রায় ২০৬৩ বিঘা জমি। গত দশ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পার হয়েছে বলে ধারণা অনেকের। বছর বছর মানুষ বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না ১ ইঞ্চি জমি। অথচ নানা কারণে শুধুই কমছে বিঘার পর বিঘা ফসলি জমি। জমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে যত্রতত্র বসত বাড়ি ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কলকারখানাা ও সড়ক নির্মাণ মনে করেন বিশ্লেষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান ৫ সড়ক, চৌগাছা-যশোর,ঝিকরগাছা,কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও পুড়াপাড়া সড়কের দুই পাশে প্রতি দিন বাড়ছে বসতবাড়ি ব্যবসা কিংবা মিল কলকারখানা। একই অবস্থা শহর ও শহরতলীর প্রতিটি পাকা কিংবা কাঁচা সড়কের পাশে এমনকি ফাঁকা মাঠের মধ্যেও হচ্ছে বাড়িঘর। সরকার থেকে যখন ঘোষণা আসছে কোনক্রমেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না, জমি রক্ষা করে বসতবাড়ি মিল কলকারখা স্থাপন করতে হবে, সেই সময়ে চৌগাছাতে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেভাবে দিন দিন ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে তাতে করে আগামী দিনে সব ধরনের ফসল উৎপাদনে চরম ধ্বস নামতে পারে। শুধু তাই না এর প্রভাব পড়বে ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর। ফসলি জমি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস জানান, বসতবাড়ি, শিল্প কলকারখানা, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ বেশ কিছু কারণে জমি কমে যাচ্ছে। ফসলি জমি কমে যাওয়া কারো জন্য সুখকর যেমন নয় তেমনি তা অনাকাঙ্খিত। প্রতিটি মানুষকে চাষাবাদের জমি রক্ষা করে বসতবাড়ি মিল কলকারখানা নির্মাণসহ উন্নয়ন কাজ করার পরামর্শ তার। এটি সরকারি সিদ্ধান্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button