৪৪ হাজার কর্মী মাঠে নামলে জিন ভূত থাকবে না: মো. হারুন চৌধুরী (নেভী)
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
‘পদত্যাগ করে ফেলছি কারণ এখন তো আর বল শক্তি নাই। আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চাওয়ার। সুন্দরবনের বাঘেরও যখন বল শক্তি পড়ে যায়। তখন হরিণও মশকরা করে। আমার বেলাতেও হয়তো এমন হচ্ছে। শুধু আমি না; বিগত সময়ে কর্ণফুলী উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ জামাল আহমদ, থানা আ.লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনিও যেভাবে রাজনৈতিক মারপ্যাচে কোণঠাসা হয়ে ব্যাকফুটে চলে যান। ঠিক তেমনি আমিও পরিস্থিতির শিকার।’
২৯ মে দুপুরে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী-কমিটি ঘোষণার ৩২ দিন পর পদত্যাগ করা কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. হারুন চৌধুরী (নেভী) প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করার আগে বলেছিলাম কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো ওয়ার্ড থেকে সব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করলে ২৩ হাজার পদ সৃষ্টি হয়। ২৩ হাজার পদ থেকে ৪৬ হাজার কর্মী উঠে আসে। এক সাথে যদি ৪৪ হাজার কর্মী মাঠে নামে বিএনপি তো দুরে থাক। জিন ভূতও ধারে কাছে থাকবে না। কিন্তু আমার কথা কেউ তো শোনে না। তাঁরা শোনে ভুট্টো সাহেবদের কথা। তাঁরা তৃণমূলে কর্মী তৈরি করতে পারেনি কিন্তু গুটিকয়েক নেতা তৈরি করছেন।’
গত ২৪ মার্চ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার ৩২ দিন পর কেন পদত্যাগ করলেন জানতে চাইলে সাবেক এই কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘যে কমিটি ঘোষণা করা করেছে তাতে দেখি জায়গা পেয়েছে জুলধার তেল শুক্কুর। অথচ বঙ্গবন্ধু কণ্যা বিদেশে লবিং করে তেল আনেন। দেশের উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে আর তেল শুক্কুর জুলধার ডাঙারচর বসে সে তেল চুরি করেই ব্যবসায়ি সেঁজেছেন। তিনি এখন বড় আওয়ামী লীগার। আবার আপনারা দেখেন কর্ণফুলীতে এক দিনের জন্যও রাজনীতি করেনি। এমন লোকও কমিটিতে ডুকা মাত্রই সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন। আর আমি গত ২০ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক। একই পদে আমার ২০ বছর শেষ। আমি পদত্যাগ না করে কে করবে। আদু ভাইয়ের মতো কী ২০ বছর এক পদে থাকা যায়।’
কিন্তু সদ্য ঘোষিত কমিটিতে এমনও বহু নেতা রয়েছেন, যারা এবারও একই পদে রয়েছেন তাঁরা তো পদত্যাগ করেননি তাহলে আপনি কেন পদত্যাগ করেছেন এমন প্রশ্নে নৌ বাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি তো কোন পদ পদবি চাইনি। আমাকে কেন আবারও একই পদ দেওয়া হলো। গত উপজেলা নির্বাচনে ৪টি ইউনিয়নের আ.লীগ নেতারা এক জোট হয়েছিল নৌকাকে ডুবানোর জন্য। এমন কি চরপাথরঘাটার চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমেদ নৌকাকে ডুবাতে দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন। এখন তিনি নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি। আসলে কী জানেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয়কে গুটিকয়েক লোক পাহারা দিয়ে রাখেন। সাধারণ মানুষকে কাছে ঘেঁষতে দেন না। মন্ত্রীর সাথে কথা বলার সুযোগ পায় না। অন্যান্য নেতা কিংবা এলাকার সাধারণ মানুষজন খুব অসহায়। তবে আমাদের মন্ত্রী খুব ভালো লোক। দোষ কিন্তু উনার না, দোষ হলো চামচাদের। দোষ হলো মন্ত্রীকে যারা পাহারা দিয়ে রাখেন।’
পদত্যাগ করার পর বর্তমানে কিভাবে সময় কাটে জানতে চাইলে মো. হারুন চৌধুরী নেভী বলেন, ‘আমি এখন গরু ছাগল পালন করি। চাষাবাদ করি। তাই তাঁরা আমাকে হাল চাষ করার জন্য ডাকেন। জমি চাষ করার জন্য ডাকেন। চারা রোপন করার জন্য ডাকেন কিন্তু ধান কাটার সময় তাঁরা কেটে নিয়ে যান। এটাই কর্ণফুলীর রাজনীতি।’
প্রসঙ্গত, মো. হারুন চৌধুরী (নেভী) ২০০৩ সালে পশ্চিম পটিয়া কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। ২০০৮ সালে শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর পরপর ৪ বার উপজেলা আ.লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক।
বাংলাদেশ নৌ বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণের পর কর্ণফুলীর শিকলবাহা চৌমুহনীতে গড়ে তুলেন ‘শাহনাজ ডেইরি ফার্ম’। আমেরিকান সাহায্যকারী একটি সংস্থার আওতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাত্র দুইটি গাভী নিয়ে ডেইরি ফার্ম ও গরুর ঘাস উৎপাদনের কাজ শুরু করেন।
ডেইরি শিল্পে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে অর্জন করেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার (স্বর্ণ), ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন ফার্মার অব দি ইয়ার ‘স্ট্যাণ্ডার্ড চাটার্ড এগ্রো এ্যাওয়ার্ড, ২০২২ সালে দেশের সেরা কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পান ‘এসিআই দীপ্ত কৃষি এ্যাওয়ার্ড’, একই বছরে পান ‘ডেইরি আইকন এ্যাওয়ার্ড’।
পাশাপাশি এ প্রকল্পের আওতায় স্থানীয়ভাবে এলাকার তরুণ সমাজকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং ডেইরি খামার গড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তিনি দেশ সেরা উদ্যোক্তা নির্বাচত হন। পান স্বর্ণপদকসহ একাধিক পুরস্কার। এরমধ্যে ২০১৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার।