যেভাবে ‘জিপিএস গার্ল’ হয়ে উঠলেন ক্যারেন
যে কোনো রাস্তায় গাড়ি নিয়ে আটকে পড়লে, পথ খুঁজে হয়রান। কোনো চিন্তা নেই। গাড়ি বা স্মার্ট ফোনের জিপিএসে গন্তব্যের নাম লিখলেই সমস্যার সমাধান। এক শান্ত, সুস্পষ্ট নারীকণ্ঠ পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে গন্তব্যে। সেই নারীকণ্ঠ অতি পরিচিত। কিন্তু তার নাম এবং পরিচয় অনেকেরই অজানা।
জিপিএসে যে নারীকণ্ঠ শুনতে পাওয়া যায়, তা ক্যারেন এলিজাবেথ জ্যাকবসেনের। তিনি ‘দ্য জিপিএস গার্ল’ নামেও পরিচিত। ক্যারেনের জন্ম অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ম্যাকয়ে। সাত বছর বয়স থেকেই তিনি গান লিখতেন এবং গাইতেন। কুইন্সল্যান্ড কনজারভেটরিয়াম গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হওয়ার পর পিয়ানো নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।
ছোটবেলা থেকে গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ক্যারেন। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পাড়ি দেন তিনি।
গায়িকা হিসাবে একবার সুযোগ পাওয়ার আশায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থায় আসাযাওয়া করেন তিনি। কিন্তু দু’বছর পর্যন্ত তার ভাগ্যে শিঁকে ছেড়েনি।
২০০২ সালে ক্যারেনের সুযোগ আসে। কণ্ঠশিল্পী হিসাবে কাজ করার প্রস্তাব আসে তার কাছে। এই কাজ নিয়ে ক্যারেনের মধ্যে সে রকম কোনও উত্তেজনা না থাকলেও তিনি কাজটি করতে রাজি হয়ে যান। এরপর কণ্ঠশিল্পী হিসাবে অডিশন দেন ক্যারেন। ওই কাজের জন্য নির্বাচিতও হন তিনি।
ক্যারেন জানিয়েছেন, যে সংস্থার হয়ে আমি অডিশন দিতে গিয়েছিলাম, সেই সংস্থা এমন এক জন কণ্ঠশিল্পীকে খুঁজছিল যে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও আমেরিকায় বসবাস করে। সব কিছুই আমার সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। আবার আমার কণ্ঠও তাদের পছন্দ হয়েছিল।
ক্যারেন আরও বলেন, ওই সংস্থা এমন একটা কণ্ঠ চাইছিল, যা শান্ত, সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং স্পষ্ট। আর সেই কারণেই আমাকে কাজটি দেওয়া হয়।
ক্যারেনকে জানানো হয়, তার কণ্ঠ জিপিএসে ব্যবহার করা হবে। এর পর তার আর খুশির অন্ত ছিল না। ধীরে ধীরে ওই কাজের প্রতি তার আগ্রহও বাড়ে। জিপিএসে ব্যবহৃত হবে এমন একাধিক ইংরেজি শব্দবন্ধ ক্যারেনের কণ্ঠে রেকর্ড করে ওই সংস্থা। প্রায় ৫০ ঘণ্টা ধরে সেই রেকর্ডিং চলে।
কাজের মধ্যে চার ঘণ্টা পর পর বিশ্রাম পেতেন ক্যারেন। তার পর আবার রেকর্ডিং প্রক্রিয়া চলত। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই কণ্ঠ জিপিএসে সংযোজন করার পর তার তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০০২ সালে ক্যারেনের রেকর্ড করা সেই কণ্ঠই এখনও বিশ্বের কোটি কোটি গাড়ি এবং স্মার্টফোনের জিপিএসে শুনতে পাওয়া যায়।
এই প্রসঙ্গে ক্যারেন বলেন, ‘আমার কণ্ঠ জনপ্রিয় কারণ মানুষ বর্তমানে জিপিএসের উপর নির্ভরশীল। রাস্তাঘাটে যখন-তখন জিপিএসের প্রয়োজন পড়ে। তাই আমি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছি।’
জিপিএসে কণ্ঠ দেওয়ার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ক্যারেনকে। একে একে অনেক কাজের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন তিনি।
ক্যারেন বর্তমানে এক জন জনপ্রিয় বিনোদনকারী, গায়িকা, গীতিকার, কণ্ঠশিল্পী এবং প্রেরণামূলক বক্তা। টেলিভিশনের একাধিক অনুষ্ঠানে সঞ্চালক হিসাবেও কাজ করতে দেখা গেছে তাকে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমেরিকা আসার পর থেকে কমপক্ষে ১০টি মিউজিক অ্যালবামে গান গেয়েছেন ক্যারেন। নিজের জীবনের সাফল্যের কাহিনি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে দু’টি বইও লিখেছেন। ‘দ্য জিপিএস গার্ল’স রোড ম্যাপ ফর ইয়োর ফিউচার’ এবং ‘রিক্যালকুলেট-ডিরেকশনস ফর ড্রাইভিং পারফরম্যান্স সাকসেস’।