পরামর্শমূলক সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা
রোগ কমাতে তামাক কর নীতি প্রণয়ন জরুরি
স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় ও চাপ কমাতে হলে রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমাতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগের কারণে হয়। আর এ অসংক্রামক রোগের কারণ একটি বড় জনগোষ্ঠীর তামাক ব্যবহার। দেশে আইনের পাশাপাশি তামাক কর ব্যবস্থা জোরদারের বিকল্প নেই। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় মাননীয় প্রধামন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় তামাক করনীতি প্রণয়ণ করা জরুরি। যেহেতু তামাক জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তামাক করনীতি প্রণয়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করে জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা।
আজ ১৪ আগস্ট ২০২৩, সোমবার, সকাল ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কর নীতির প্রয়োজনীয়তা’শীর্ষক পরামর্শমূলক সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বকারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার ও সিটিএফকের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ড. সৈয়দ মাহফুজুল হক। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
সভায় বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এ জন্য একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের প্রত্যয় করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিইআর একটি তামাক কর নীতির রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এই রূপরেখা অনুসরণ করে তামাক কর নীতির খসড়া প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে। আশা করি সরকারের সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও এর কার্যকর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তারা আরও বলেন, বিআরের গবেষণায় আমরা দেখেছি, সারাদেশে মোড়কের গায়ে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। যার উপর কর আদায় করা গেলে সরকারের বছরে প্রায় ৪৫০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হতো। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করে কর ফাঁকি বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসময় তারা তামাকের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনতে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য অধিক পরিমানে বৃদ্ধি; তামাকে কর ফাঁকির জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে নিয়মের মধ্যে আনতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে জরুরিভিত্তিতে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রতিনিধিসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।