ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ মালয়েশিয়ার আজ (বৃহস্পতিবার) ৬৬তম স্বাধীনতা দিবস (হারি মারদেকা)। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে সমগ্র মালয়েশিয়া জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। করোনা মহামারির কারণে বিগত তিনটি বছর বিধি-নিষেধের কারণে জাঁকজমকভাবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে না পারায় এবারের স্বাধীনতা দিবসে থাকছে ভিন্ন মাত্রা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কাম্পুং এর (গ্রাম-গঞ্জের) অলিগলি থেকে শুরু করে বান্ডারের (শহরের) প্রশস্ত সড়ক সব জায়গা সাজানো হয়েছে নানা অনুষঙ্গে। রাস্তাজুড়ে উড়ছে নীল, লাল ও হলুদ রঙের মালয়েশিয়ান পতাকা। রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরও ছেয়ে গেছে নানা বর্ণের ব্যানার ও ফেস্টুনে। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম গৌরব ও অহংকারের দিন এটি। পৃথিবীর মানচিত্রে নিজস্ব ভূখণ্ড নিয়ে মালয় জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটে এই দিনে।
এদিন জাতীয় দিবসের প্যারেডে সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে। মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান। প্রতিবছর কুয়ালালামপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্র দাতারান মারদেকায় (স্বাধীনতা চত্বর) দিবসটি উদযাপন করলেও গত বছরের ন্যায় এবারও উদযাপিত হচ্ছে প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায়। তবে দাতারান মারদেকা মাঠ এবং কেএলসিসি পার্কে রাতভর ছিল সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিদেশিদের সরগরম উপস্থিতি। পুত্রাজায়া ছাড়াও দেশটির অন্যান্য প্রদেশেও ব্যাপক আয়োজনে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান।
এই বছরে স্বাধীনতা দিবসের শ্লোগান ছিল ‘মালয়েশিয়া মাদানি : তেকাদ পারপাডুয়ান পেনুহি হারাপান’। যার অর্থ একটি ঐক্যবদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নেতা ও জনগণের সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতীক। প্রায় এক লক্ষেরও অধিক লোকের উপস্থিতিতে এবার স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ সময় প্রভাত ফেরিতে উপস্থিত ছিলেন রাজা ইয়াং আল সুলতান আব্দুল্লাহ রি আয়াত উদ্দিন আল – মোস্তফা বিল্লাহ শাহ, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি, দাতুক সেরি ফাদিল্লাহ ইউসুফসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরাসহ দেশটির অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এসময় মালয়েশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক পাঁচটি হেলিকপ্টারের একটি ফ্লাইটপাস্ট ছিল, যা জাতীয় পতাকা এবং সশস্ত্র বাহিনীর পতাকা, মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনী, রয়েল মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী এবং রয়েল মালয়েশিয়ার বিমানবাহিনীর পতাকা বহন করে। স্কুল ছাত্রদের থেকে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের ১৮ হাজারেরও বেশি লোক প্যারেডে অংশগ্রহণ করে, যা আটটি বিভাগে বিভক্ত ছিল।
মালয়েশিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়াই সর্ব প্রথম ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা তখন থেকেই। ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে রক্তপাতহীন প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতা অর্জন করে দেশটি।