রেকর্ড গড়া জয়ে মিচেল মার্শের নেতৃত্বের পথচলা শুরু
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেতৃত্বের অভিষেকে দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিলেন মিচেল মার্শ। তার সঙ্গে ঝড়ো ফিফটি করলেন টিম ডেভিড। হুট করে পাওয়া সুযোগ দুই হাতে কাজে লাগালেন তানভির স্যাঙ্ঘা। চমৎকার বোলিংয়ে অভিষেক রাঙালেন এই তরুণ লেগ স্পিনার। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
ডারবানে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ১১১ রানে। এই সংস্করণে রানের দিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় জয় এটিই। ২০২০ সালে জোহানেসবার্গে ১০৭ রানে জয় ছিল আগের রেকর্ড। অস্ট্রেলিয়া রেকর্ড গড়ে ম্যাচের মাঝপথেও। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে এই মাঠের সর্বোচ্চ ২২৬ রান করে সফরকারীরা। ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ২১৮ ছিল এখানে আগের সেরা।
৪৯ বলে অপরাজিত ৯২ রানের ইনিংস খেলে দলের রেকর্ড সংগ্রহে বড় অবদান রাখেন অস্ট্রেলিয়ার নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মার্শ। ১৩ চার ও ২ ছক্কায় গড়া ইনিংসের সৌজন্যে ম্যাচের সেরা তিনিই। ২০২১ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী অপরাজিত ৭৭ ছিল মার্শের আগের সেরা। ২৮ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ডেভিড। মার্শের সঙ্গে তার ৫০ বলে ৯৭ রানের জুটি পঞ্চম উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড। ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রিকি পন্টিং ও সাইমন ক্যাটিচ জুটির ৮৩ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।
রান তাড়ায় ১৫.৩ ওভারে ১১৫ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রিজা হেনড্রিকসের ৪৩ বলে ৫৬ ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য কিছু করতে পারেননি আর কেউ। দুই অঙ্কেই যেতে পারেন তিনি ছাড়া আর কেবল দুজন। এই ম্যাচে যার খেলারই কথা ছিল না, সেই স্যাঙ্ঘা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে ৪ ওভারে ৩১ রানে নেন ৪ উইকেট। ১৮ রানে ৩ উইকেট নেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস।
ওয়ানডে সিরিজ সামনে রেখে টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া বিশ্রাম দিয়েছে ডেভিড ওয়ার্নার, ক্যামেরন গ্রিন ও জশ হেইজেলউডকে। চোটের কারণে নেই স্টিভেন স্মিথ, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বাঁহাতি ফাস্ট বোলার স্পেন্সার জনসন, পেস বোলিং অলরাউন্ডার অ্যারন হার্ডি ও স্পিনিং অলরাউন্ডার ম্যাথু শর্টের অভিষেক নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা অসুস্থতার কারণে শেষ মুহূর্তে ছিটকে যাওয়ায় সুযোগ পান স্যাঙ্ঘা।
দক্ষিণ আফ্রিকাও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছে কুইন্টন ডি কক, হাইনরিখ ক্লসেন, ডেভিড মিলার, আনরিখ নরকিয়া, কাগিসো রাবাদার মতো তারকাদের। প্রোটিয়াদের হয়ে এ দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তুমুল প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের, ব্যাটিংয়ের ধরনে এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে অবিশ্বাস্য মিল থাকায় যাকে ডাকা হয় ‘বেবি এবি’ নামে। যদিও ভালো করতে পারেননি তিনি। টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেকের পর টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পান জেরল্ড কুটসিয়া।
কিংসমিডে বুধবার ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের দ্বিতীয় বলে মার্কো ইয়ানসেনকে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ট্রাভিস হেড। এরপর মার্শ ও শর্ট তোলেন ঝড়। দ্বিতীয় ওভারে লুঙ্গি এনগিডিকে তিনটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন মার্শ। পরের ওভারে ইয়ানসেনের টানা তিন বলে দুই চার ও একটি ছক্কা হাঁকান শর্ট। তাদের জুটির পঞ্চাশ স্পর্শ করে স্রেফ ২১ বলে।
শর্টকে (১১ বলে ২০) ফিরিয়ে ২৬ বলে ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন লিজাড উইলিয়ামস। পরের দুই ওভারে অস্ট্রেলিয়া হারায় আরও দুই ব্যাটসম্যানকে। দ্রুত বিদায় নেন জশ ইংলিস ও মার্কাস স্টয়নিস।প্রথম পাঁচ ওভারেই অস্ট্রেলিয়া তুলে ফেলে ৭০ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারটি উইকেট মেডেন নেন অভিষিক্ত কুটসিয়া। এই মাঠে পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ৬ ওভারে সর্বোচ্চ রান এটি। ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ারই ৬৯ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ।
মার্শ ফিফটি করেন ২২ বলে, এই সংস্করণে যা তার নিজের দ্রুততম, আগেরটি ছিল ২৪ বলে। তিনি ম্যাচের সেরা জুটি গড়েন ডেভিডের সঙ্গে। যেখানে অগ্রণী ভূমিকা ডেভিডের। খুনে ব্যাটিংয়ে ডেভিড ফিফটি পূর্ণ করেন ২৪ বলে। বাউন্ডারির কাছে টেম্বা বাভুমার দুর্দান্ত ক্যাচে থামে তার ইনিংস। ডেভিডের বিদায়ের পর অভিষিক্ত হার্ডি উইকেটে গিয়ে ৩ চার ও এক ছক্কায় খেলেন ১৪ বলে ২৩ রানের ক্যামিও। শেষ ওভারে জীবন পেয়ে অপরাজিত রয়ে যান মার্শ।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই টেম্বা বাভুমাকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ধাক্কা সামলে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন রাসি ফন ডার ডাসেন ও হেনড্রিকস। প্রথম ২ ওভারে স্বাগতিকদের রান ছিল স্রেফ ৪, পরের ২ ওভারে আসে ৩২। তবে বড় হয়নি জুটি। পঞ্চম ওভারে ফন ডাসেনকে (১১ বলে ২১) ফিরিয়ে ২৪ বলে ৪৬ রানের জুটি ভাঙেন শন অ্যাবট। এরপর নিয়মিতই উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এইডেম মারক্রামকে ফিরিয়ে প্রথম শিকার ধরেন স্যাঙ্ঘা। ২১ বছর বয়সী বোলার নিজের পরের ওভারে টানা দুই বলে বিদায় করেন ব্রেভিস ও ট্রিস্টান স্টাবসকে। ৬ রান করে লং অফে ধরা পড়েন অভিষিক্ত ব্রেভিস। স্টাম্পড হয়ে গোল্ডেন ডাক এর তেতো স্বাদ পান স্টাবস। নিজের কোটার শেষ ওভারে ইয়ানসেনকে বোল্ড করে দেন স্যাঙ্ঘা। শেষ দুটি উইকেট নেন আরেক অভিষিক্ত, পেসার জনসন। একই মাঠে আগামী শুক্রবার হবে দ্বিতীয় ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ২২৬/৬ (শর্ট ২০, হেড ৬, মার্শ ৯২*, ইংলিস ১, স্টয়নিস ৬, ডেভিড ৬৪, হার্ডি ২৩, অ্যাবট ৩*; ইয়ানসেন ৪-০-৪৫-১, এনগিডি ৪-০-৪৯-০, কুটসিয়া ৪-১-৪০-১, উইলিয়ামস ৪-০-৪৪-৩, শামসি ৪-০-৪২-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৫.৩ ওভারে ১১৫ (হেনড্রিকস ৫৬, বাভুমা ০, ফন ডাসেন ২১, মারক্রাম ৭, ব্রেভিস ৫, ইয়ানসেন ২০, কুটসিয়া ১, উইলিয়ামস ১, এনগিডি ২*, শামসি ০; স্টয়নিস ৩-০-১৮-৩, জনসন ৩.৩-০-৩৩-২, অ্যাবট ২-০-১৭-১, এলিস ২-০-১১-০, স্যাঙ্ঘা ৪-০-৩১-৪, হার্ডি ১-০-৫-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ১১১ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
ম্যান অব দা ম্যাচ: মিচেল মার্শ