হায়দার আলী রনি সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় কর্ণফুলীতে বাধভাঙা উচ্ছ্বাস
হায়দার আলী রনি, তৃণমূল নেতাদের চোখে ‘চমক’
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব হায়দার আলী রনি। জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণার প্রায় ৯ মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ৭৫ সদস্যের এই কমিটিতে তিন সাংগঠনিক সম্পাদকের একজন তিনি।
সোমবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি পদে রয়েছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মফিজুর রহমান।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া হায়দার আলী রনির বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলার খোয়াজনগরে। সদ্য ঘোষিত কমিটিতে তিনি সম্পাদকীয় পদ পাওয়ায় কর্ণফুলীর বিভিন্ন গ্রামে সাধারণ মানুষেরা খুশিতে মিষ্টিমূখ করেছেন। ফলে, কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা বলেন, ‘আগামী রাজনীতিতে টিকিয়ে থাকতে হলে এবং ভেঙ্গে পড়া সাংগঠনিক কাঠামোকে দাঁড় করাতে চাইলে তৃণমূল পর্যায় থেকে ওঠে আসা নেতাদের কোন বিকল্প নেই। কারণ জনতার আদালতে নানাভাবে পরীক্ষিত নেতারাই দলের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায়। আলহাজ্ব হায়দার আলী রনি মাঠ থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব। তাকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করায় তৃণমূলের ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে নিশ্চয় দলকে সুসংগঠিত করবেন। এ প্রত্যাশা আমাদের।’
অনুভূতি জানতে চাইলে হায়দার আলী রনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞপন করছি আমার প্রাণ প্রিয়নেতা, আমার রাজনৈতিক অভিভাবক মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আলহাজ্ব সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয়ের প্রতি। প্রিয়নেতার কাছে আমি ঋণী হয়ে গেলাম। আরো কৃতজ্ঞতা হাজারো তৃণমূল নেতা-কর্মীর প্রতি। যারা সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আপনাদের ভালোবাসা আমার চলার পথকে আরো বেশি মসৃণ করবে (ইনশাল্লাহ )।’
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘কমিটিতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম নেতৃত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। বৃহত্তর ভাবে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যাঁরা পূরণ করতে পারবেন, তাঁদের আমরা কমিটিতে নিয়ে এসেছি। যারা দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের মূল্যায়ণ করার করা হয়েছে।’
আলহাজ্ব হায়দার আলী রনির বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনঃ
অতীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন শাখার সভাপতি ছিলেন (১৯৯৪-২০০৩ সাল), বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা সদস্য (২০০৩-২০০৫ সাল), বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কর্ণফুলী থানা শাখার আহ্বায়ক (২০০৫-২০০৯ সাল), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্ণফুলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক (২০০৯-২০২৩ সাল), দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একই সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সদস্য (২০১৮-২০২৩ সেপ্টেম্বর) ছিলেন।
দলের প্রয়োজনে রাজনৈতিক ভূমিকাঃ
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক ১৯৯৩ সালে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে পথচলা শুরু হয়। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোটের প্রচারণায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ২০০৩ সালে কলেজ শাখার কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন। বিএনপি জোট সরকার আমলে মামলা-হামলা ও বহু নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়াও ১/১১ এর সময় আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তির লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করেন। ২০১৪ সালে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন ঠেকাতে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।
সামাজিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন ও ভূমিকাঃ
হায়দার আলী রনি আয়ুব বিবি সিটি কর্পোরেশন স্কুল এন্ড কলেজ এর ভূমিদাতা, আয়ুব বিবি ট্রাস্ট ও আজিম হাকীম স্কুল এন্ড কলেজ এর ফাউন্ডার ও পরিচালক, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য। পারিবারিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর পিতা মরহুম আয়ুব আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ছাত্র ও যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করে ছিলেন। বড় ভাই আলহাজ্ব আজিম আলী বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড এর পরিচালক।