অর্থ ও বাণিজ্যশীর্ষ নিউজ
সিগারেট কোম্পানিতে শেয়ার ও সরকারের প্রতিনিধি সাংঘর্ষিক
– দূর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান
সিগারেট কোম্পানিতে সরকারের সামান্য শেয়ার এবং একাধিক প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। যারা তামাক কোম্পানিতে আছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন। এজন্য তারা সবসময় কোম্পানির স্বার্থ দেখেন, দেশের কল্যাণ বা জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন তাদের কাছে উপেক্ষিত থেকে যায়। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রধান বাধা। এজন্য তামাক কোম্পানি হতে সরকারের শেয়ার এবং প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। আজ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে “তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ” আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান এমপি।
তিনি আরো বলেন, উদ্বেজনক বিষয় হলো, তরুণদের যাতায়াতে করে এমন স্থানগুলোতে ধূমপানের আলাদা স্থান করে দিয়ে নেশায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তামাকের কারণে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। জিডিপি এবং সার্বিক প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়ে। একটি পরিবারে উপার্জন সক্ষম মানুষ তামাকের কারণে মৃত্যুবরণ করলে পরিবারে চরম প্রভাব পড়ে। এজন্য তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। শক্তিশালী আইনের মাধ্যমে তামাক নির্মূল করা প্রয়োজন।
মানস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অতিথি ছিলেন অসীম কুমার উকিল এমপি, বাসন্তী চাকমা এমপি, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-বাংলাদেশ এর হেড অব প্রোগ্রামস্ মোঃ শফিকুল ইসলাম। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
প্রবন্ধে বলা হয়, জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে দেশের সংবিধানে ক্ষতিকর দ্রব্যাদি নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাষ্ট্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। তবে অসংক্রামক রোগ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আর্বির্ভূত হয়েছে। যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে সিগারেট কোম্পানি থেকে শেয়ার ও প্রতিনিধি প্রত্যাহার করতে হবে। অনেক বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার আছে, কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিনিধি খুবই কম। অথচ বিএটি’র পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধি বেশি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় বিরোধীতা করছে সিগারেট কোম্পানিগুলো।
অসীম কুমার উকিল এমপি বলেন, গণপরিবহনে ধূমপান কমেছে। এটা বড় অগ্রগতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং যত্রতত্র সিগারেট বিক্রয় বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর প্রভাব কমাতে সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাসন্তী চাকমা ্এমপি, বলেন, পাহাড়ী অঞ্চলে তামাক চাষে কৃষককে প্রলুব্ধ করা হয়। এ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। তামাক চাষ কমিয়ে আনতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালকে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও তামাকমুক্ত করার টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এ লক্ষ্যে সরকারের সহযোগী হিসেবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি যাতে করে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ধূমপান দিয়ে শুরু করে ভয়ঙ্কর মাদকের দিকে ধাবিত না হয়।
অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে চান। এক্ষেত্রে তামাক বড় বাধা। যুব সমাজ তামাকে আসক্ত হলে তারা স্মার্ট সিটিজেন হতে পারবে না। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন বিঘ্ন হবে।
মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পরে চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। দেশে সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সস্তা বাজার। সহজলভ্যতার কারণে তামাকের ব্যবহার বাড়ছে। তামাকের কারণে বিপর্যয়, দূর্যোগ বাড়ছে। এজন্য তামাক কোম্পানগুলোর অনৈতিক কার্যক্রম শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নারগিস মোরশেদা ও মোহাম্মাদ সাদেকুর রহমান, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মীর আলমগীর হোসেন, ডাস এর টিম লিড আমিনুল ইসলাম বকুল, টিরিআরসি-ডিআইইউ এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ বজলুর রহমান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমুখ।