টুঙ্গিপাড়ায় বৃষ্টির পানিতে ২৫ হাজার মানুষের সুপেয় পানির সংস্থান
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ৮ অক্টোবর, ২০২৩ (বাসস): বৃষ্টির পানি ট্যাংকে ধরে রেখে সুপেয় পানি পানের সুযোগ পেয়েছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার প্রায় ৮ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ । এ পানি রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন গৃহবধূরা। এতে পুকুর বা নলকূপ থেকে পানি বহন করে আনার কষ্ট লাঘব হয়েছে। তাদরে জীবন সহজ করে দিয়েছে বৃষ্টির পানি।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৫ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৭ হাজার ৮শ’ ৬৫ টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ট্যাংক স্থাপন করেছে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সমূহে সুপেয় পানির অভাব দূর করতে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাংক স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি পরিবারের কাছ থেকে পানির ট্যাংক স্থাপন বাবদ সরকার নির্ধারিত সহায়ক চাঁদা হিসেবে নেওয়া হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কার্যালয়ে থেকে এসব তথ্য জানাগেছে। ওই কর্যালয় থেকে আরো জানাগছে, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বেশিরভাগ স্থানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা যায় না । অন্যদিকে নলকূপের পানি লবণাক্ত ও আর্সেনিক যুক্ত। তাই সুপেয় পানির সংকট দূর করতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পানির ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টুঙ্গিপাড়া উপসহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ মজুমদার বলেন, বৃষ্টি হলেই ঘরের চালের নিচে বসানো পাইপ থেকে পানি ফিল্টারে যায়। তখন ফিল্টার থেকে ভালো পানি ট্যাংকের ভিতরে গিয়ে পড়ে। আর ময়লাযুক্ত পানি ওয়াস আউটের মাধ্যমে বাইরে পড়ে যায়। ট্যাংকে থাকা ট্যাপ ঘোড়ালেই পানি মেলে । কোন ঝামেলা ছাড়াই সুপেয় পানি পাচ্ছে ৭ হাজার ৮শ’৬৫ পরিবারের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ । এই পানি দিয়েই খাওয়া ও রান্নাসহ সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহার করছে উপকারভোগীরা। ৩ হাজার লিটার ট্যাংকটিতে পানি ভর্তি থাকলে কয়েক মাস বৃষ্টি না হলেও তাদের সুপেয় পানি সমস্যা হবে না। ৩/৪ সদস্যের একটি পরিবার ৩ হাজার লিটার ট্যাংকটিতে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে প্রায় সার বছরই পান করতে পারবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির পানি পান করলে শরীরে জমে থাকার টক্সিন বের হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ও রক্তের পিএইচ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে শরীরে অ্যাসিডিটির মাত্রা কমে গিয়ে রোগের প্রকোপ কমে আসে। বৃষ্টির পানিতে আছে অ্যালকালাইন উপাদান। যা পিএইচ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয়।
উপকারভোগী কুশলী ইউনিয়নের গৃহবধূ আলেয়া বেগম বলেন, আমাদের এত টাকা নেই, যে পানি কিনে খাবো। তাই দূর থেকে পানি বহন করে এনে তারপর পান করতে হতো। আর নলকূপ বা পুকুরের পানি দিয়ে রান্না করতাম। এতে আমাদের কষ্টের সীমা ছিলো না। সরকার থেকে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ট্যাংক দেয়ায় খুব উপকার হয়েছে।
বর্নি ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা খালেদা খাতুন বলেন, এত বড় পানির ট্যাংক পেয়ে আমরা খুবই খুশি। বৃষ্টি হলে পানি ট্যাংকিতে গিয়ে পরিস্কার পানি জমা হয়। এ পানি দিয়েই চলে খাওয়া ও রান্না সহএ সংশ্লিষ্ট সব কাজ।
গিমাডাঙ্গা গ্রামের মহিব বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টির পানি ট্যাংকে ধরে রাখায় আমাদের সুপেয় পানির অভাব দূর হয়েছে। ট্যাপ ঘোড়ালেই পানি পড়ছে। আর ধরে রাখা পানিতে কোন গন্ধ নেই। এত কম খরচে এ সুবিধা পাবো কখনো কল্পনাও করতে পারিনি ।