আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত যশোর-১ (শার্শা-বেনাপোল)। এক-দুইবার আসনটি তাদের হাতছাড়া হলেও বর্তমানে এই আসনে আওয়ামী লীগ বেশ শক্ত অবস্থানে। যদিও এরই মধ্যে ‘গৃহবিবাদ বেশ। ফলে নির্বাচনি মাঠে দলীয় প্রার্থী চার চারজন। তবে সুখে নেই বিএনপিও। তার প্রার্থী সংখ্যাও তিন। যশোরের রাজনীতিতে অতি গুরুত্বপূর্ন শার্শা সংসদীয় আসন। এখানে রয়েছে দেশসেরা স্থলবন্দর, বড় গরুরহাট সাতমাইল, সম্ভাবনাময় নাভারন বাজার। প্রার্থীরা কেউ কাউকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতায় নিজ নিজ বলয়ে রাজনীতি করছে।
বিএনপিতে রয়েছে বিরোধের চিহ্ন। দলটি নির্বাচনে গেলে সেখানেও ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন প্রার্থী। একাধিক সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, যশোর-১ (শার্শা) আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন এবারও শক্ত প্রার্থী। টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্য যশোরে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছেন। পাশাপাশি দলীয় বিভাজনের সূত্র ধরে মাঠে রয়েছেন বেনাপোলের সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। রয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তবি সরদারের নাতি মুজিবুদ্দ্যেলা কনক।
এমপি পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন নতুন মুখ যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নাজমুল হাসান। অন্যদিকে নির্বাচনে এলে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও বিগত নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি। পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির। মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আক্তারুজ্জামান।
যশোরের শার্শা উপজেলাসহ দুটি থানা, ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এই আসনে অবস্থিত। সব দলের জন্য এই আসনটি মর্যাদার। বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৬ বার, বিএনপি ৩ বার, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একবার করে বিজয়ী হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে যশোর-১ (শার্শা) আসনে ২ লাখ ৯ হাজার ৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি পেয়েছিলেন চার হাজার ৮০২ ভোট।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থীর জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের নাম জোরেসোরে শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে নতুন মুখ হিসেবে মাঠে নেমেছেন তরুণ রাজনীতিক যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নাজমুল হাসান।
এমপি শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী সংগঠন। বারবার আঘাত এলেও এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পরপর তিনবার মনোনয়ন দিয়েছেন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমি আমার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। যশোর-১ আসনের রাজনীতিতে আমি কাউকে বিরোধী মনে করি না। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার অনেকেরই আছে। দল যাকে খুশি তাকে মনোনয়ন দেবে।
বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটনের দাবি, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ৩১ বছর ধরে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। এলাকার আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি তবিবর রহমান সরদারের অনুসারী হয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। বেনাপোলের মেয়র হিসেবে তিনি অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবেন। দল যদি মনে করে, তা হলে নৌকা নিয়েই নির্বাচনি লড়াইয়ে মাঠে নামতে চান তিনি এবং বেনাপোলকে একটি স্মার্ট বন্দরে পরিণত করতে চান।
নতুন মুখ তরুণ রাজনীতিক যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। চায় শিক্ষিত, সৎ, নিষ্ঠাবান একজন নেতা। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন শার্শার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তাই শার্শা-বেনাপোলবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে অবশ্যই দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দেবেন তার সঙ্গেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে আফিল-লিটন দ্বন্দ্বের অবসান না হলে এই আসনে নৌকা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তৃণমূল আওয়ামী লীগের।
দল নির্বাচনে গেলে ধানের শীষ প্রতীকের জন্য বিএনপিরও একাধিক প্রার্থী আশায় বুক বেঁধেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির। বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মফিকুল হাসান তৃপ্তি দীর্ঘদিন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন। তাকে নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে বিরোধ রয়েছে। বিগত নির্বাচনের আগে তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কখনো নির্বাচনে যাবে না। যার নমুনা বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচন বা লোকাল কোনো নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী নেই। তাই আন্দোলন করে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে অবশ্যই তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন চাইবেন। মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের ধরে রেখে আন্দোলন, সংগ্রাম, মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয় রয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শার্শা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু জানান, বিএনপির রাজনীতি করায় আমি কয়েকবার জেলে গিয়েছি, অসহনীয় নির্যাতন ভোগ করেছি, লোভনীয় সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আমি দল ত্যাগ করিনি। উপজেলা পর্যায়ে আমরা নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের নেতা বিএনপির নক্ষত্র তারেক রহমান আমাদের কথা দিয়েছেন। শর্ত সাপেক্ষে দল যদি নির্বাচনে যায় তাহলে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। সে আশায় অপেক্ষায় আছি।
শার্শা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহির জানান, বিগত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন তালিকায় দ্বিতীয় প্রার্থী ছিলেন তিনি। দল যদি নির্বাচনে যায় তা হলে এবারও মনোনয়ন চাইবেন তিনি। দল বিবেচনা করলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ের জন্যই মাঠে নামার প্রত্যয় তার।
জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি আক্তারুজ্জামান জানান, ছাত্রজীবন থেকে আমি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের অনুসারি। চাকুরি জীবন শেষে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যোগ দিই। ২০১৫ সাল থেকে আমি শার্শা উপজেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। ভুল বোঝাবুঝির কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি দল। মনোনয়নের ব্যাপারে এবার শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন যশোর জেলার সেক্রেটারি মাওলানা মো. সোয়াইব হোসেন জানান, যশোর-১ আসনের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। পাঠানো নামের তালিকা সম্পর্কে এ নেতা মুখ খুলতে চাননি।