হারিয়ে যাচ্ছে অভয়নগরের ঐতিহ্য খেজুরের গুড়
যশোরের প্রতি উপজেলায় শীত এলেই গাছিরা ব্যস্থ হয়ে পড়ে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করার জন্য। আগে একই তালে চললেও এখন অভয়নগর উপজেলা এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস। আগের মতন এ এলাকায় খেজুর গাছ দেখা যায় না। কমতে কমতে তা মাত্র আগের তুলনায় শতকরা ১০ ভাগে এসে ঠেকেছে।
দেশের অন্যান্য জেলার থেকেও যশোরের গুড় ও খেজুরের রস বিখ্যাত,গাছিরা খুঁজে খুঁজে, খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহে ব্যস্থ সময় পার করে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সাত সকালে বসতো ছোট-বড় রসের মেলা। তা এখন আর তেমন দেখা যায় না। কালে বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এ খেজুর গাছ।
এলাকায় গড়ে উঠা ইট ভাটার চুল্লীর কারনে গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। একটা সমায়, প্রতি বছর শীতের মৌসুম এলেই গ্রাম-বাঙলার ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে খির-পায়েস, রসের গুড়, ভাঁপা পিঠা এবং গাড় রস তৈরি করে মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির উৎসব চলত। এখন তেমন প্রচলন দেখা না গেলেও দেখা যায়, হাড় কাঁপানো শীতের সকালে মধ্যেও গাছীদের রস সংগ্রহ এবং রস জ্বালিয়ে রসের গুড় তৈরি করার দৃশ্য।
শীত এলেই খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ কাটেন গাছিরা। হেমন্তের শুরুতেই গাছ কাটা শুরু হয়, গাছ থেকে রস বের করার উপযোগী করার জন্য। প্রথম গাছ কাটার পর দ্বিতীয়বার চাঁছ দিয়ে সেখানে বসানো হয় বাঁশ/কঞ্চির বিশেষভাবে তৈরির নলি। তার পাশে বাঁশের তৈরি ছোট শলাকা পোতা হয় ভাঁড়/কলস টাঙানোর জন্য। চোঁখ বেয়ে নলি দিয়ে রস পড়ে ভাঁড়ের ভেতরে।
খেজুরগাছ কাটা ও তা থেকে রস বের করার মধ্যেও কিছু কৌশল আছে। চাইলেই যে কেউ ভালো করে গাছ কাটতে কিংবা রস বের করতে পারেন না খেজুর গাছ থেকে। যে কারণে উপজেলার প্রশাসনের আয়োজনে খেজুর গাছের সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এই এলাকার কিছু গাছীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে গাছের যত্ন করা শুরু করেছে। তা থেকে রস আহরণ করা শুরু করেছেন গাছীরা। কিন্তু আগের মতো গ্রাম্য রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেজুর গাছ আর নেই বল্লেই চলে।
গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও যশোর জেলার খেজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও কিছু কিছু রাস্তার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক খেজুর গাছ।
আগের মতো যেমন নেই খেজুর গাছ তেমন নেই গাছিও। তারপরও শীত এলেই শহর থেকে গ্রামে ছুটে আসেন প্রিয় জনেরা, কেননা শীতের সময় টাতেই গ্রামে তৈরি হয় খেজুরের রস দিয়ে রসের বিভিন্ন পিঠা। যা খেতে খুবই মজাদার। যারা খেজুরের রসের নাস্তার স্বাধ একবার পেয়েছে তারাই শীত এলে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসে গ্রাম বাংলায়। অনেকেই আবার প্রবাস থেকে ছুটি কাটিয়ে শীতের এই সময় টাকে টার্গেট করে আসেন দেশে বা গ্রামে।
জানা যায়, অভয়নগরে খেজুরের রসের পাটালি গুড়েরও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। এই গুড় দিয়ে নানা রকম পিঠা তৈরি করা হয়। ভাপা, সিদ্ধপুলি, রসের চিতই এর মতো হরেক রকমের পিঠা সহ অরো অনেক মজাদার মজাদার খাবার। আর এই পিঠা বানানোকে ঘিরে শিশু-বৃদ্ধার বসে থাকার দৃশ্য বাংলার এক পুরনো সংস্কৃতিরই অংশ। মনে হয় শীত যতো বেশি, তাদের পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি,আনন্দটাও ততো বেশি।
কবি সুফিয়া কামাল বলেছিলেন-পৌষ পবনে পিঠে খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে। বড় উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে”যুগ যুগ ধরে বহু পুরনো যশোরের এই ঐতিহ্য শীতের খেজুরের রস।
গাছি শহিদুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, খলিল গাজী, নাসির সরদার, সোহরাব মোল্লা জানান, গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহের অভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও যশোর জেলার খেজুরের রস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও কিছু কিছু রাস্তার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক খেজুর গাছ। আগের মতো যেমন নেই খেজুর গাছ তেমন নেই গাছিও। আমরা যারা আছি কোন মতে পেশাটাকে টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের কাছ থেকে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম থেকে অনেকেই রস ও গুড় নিতে আসে।
উপজেলা কৃষি কমকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, উপজেলা থেকে শীতের ঐতিহ্য খেজুরের রস,গুড় হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা খেজুর গাছের সম্মেলন করেছিলাম। এবং উপজেলার গাছীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলাম। যাতে করে এ পেশা থেকে হারিয়ে না যায় গাছিরা। আমরা তাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য। কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।