ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি পরাজয়ের ভয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং জনগণের কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষমতায় আসার অন্ধকার গলি খুঁজছে।
তিনি বলেন, ‘তারা জানে জনগণ তাদের বর্জন করেছে। এ কারণেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। তাই, তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ক্ষমতা যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। তারা এখন নির্বাচনে আলোর পথ এড়িয়ে অন্ধকারের গলির দিকে তাকিয়ে আছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণকালে একথা বলেন।
সরকার প্রধান প্রবাসীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।
তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত চক্র) এখন নির্বাচন বাতিলের দাবি করছে।’
২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩ আসন পেয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন থেকেই তারা কোনো নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনে আগুন লাগিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। তারা যত বেশি সন্ত্রাসী কর্মকা- অগ্নিসন্ত্রাস করবে, জনগণ তত বেশি তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই তারা জানে যে, জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে বর্জন করেছে সেজন্য নির্বাচন করতে চায় না। এজন্যই নির্বাচন বানচাল করে কীভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায় তারা সেই পথ খুঁজে বেড়ায়। অন্ধকার গলি খুঁজে বেড়ায়, আলো ঝলমল নির্বাচন আর জনগণের পথ হারিয়ে ফেলে।’
সরকার প্রধান বলেন, নিজেরা অফিসে তালা দেয়, আবার নিজেরাই ভাঙ্গে। এনিয়ে আবার গর্ববোধ কর, যে চাবি হারিয়েছে। চাবি গেল কোথায়? তালাতো তাদেরই দেওয়া ছিল। তাদের চাবি খোয়া যাবে, চাবি হারাবে এবং তারা পথও হারাবে। তারা পথ হারানো পথিক হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বিএনপি সম্পর্কে বলেন, তাদের একটাই দক্ষতা আছে, অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন, লঞ্চে ট্রেনে আগুন দেওয়া, রেলের লাইন খুলে দিয়ে, রেলের পাত খুলে ফেলে মানুষ হত্যা করা। মানুষ মারার ফাঁদ পাতায় তারা ওস্তাদ। তাদেরকে জনগণ শুধু নির্বাচন নয়, বারবারই তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং হারার ভয়েই নির্বাচন করেনি। কিন্তু জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ নির্বাচনে বিজয় বাংলাদেশের জনগণের বিজয়। নির্বাচনে বিজয় গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতার বিজয়।’
তিনি দেশ পরিচালনায় সকলের সহযোগিতা এবং দোয়া কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দোয়া করবেন, এখনো চক্রান্ত শেষ হয়নি। এখনো শুনি তারা আবার লাফালাফি করে। নির্বাচন বাতিল করতে হবে, এই করতে হবে সেই করতে হবে। যাই হোক জনগণের ভোটে আমরা সরকারে এসেছি জনগণের কল্যাণেই কাজ করে যাব।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালিসহ ২৯টি দেশের প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে তাদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে রেকর্ড পঞ্চম এবং টানা ৪র্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর গণভবনে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই কারণ জনগণ এবার স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আপনারাও নির্বাচনের জন্য এসেছেন এবং নিজের নিজের এলাকায় দেখেছেন জনগণ কিভাবে স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনে আর একটি বিষয় লক্ষণীয় নারীদের অংশগ্রহণ। সেই ১৩০ বছরের বয়োবৃদ্ধ বলেছেন ‘হাসিনাকে ভোট দেব’। এর থেকে বড় পাওয়া মনে হয় জীবনে আর কিছু নেই, এই যে মানুষের আস্থা ও বিশ^াস এটাই সব থেকে বড় পাওয়া।
জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে যাওয়াই তাঁর লক্ষ্য উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, যেন জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি। অন্তত এটুকু বলতে পারি গত ১৫ বছর আমরা সরকারে আছি বলেই আজকে বাংলাদেশে খাদ্যের অভাব নেই। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, বাংলাদেশের মানুষ এখন আরো উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে।
তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির যে নির্বাচন, সে নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি। আমি বলবো এটা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, যেটা আমরা নিশ্চিত করেছি।
তিনি বলেন, “আমরা তো নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। হ্যাঁ নৌকা মার্কা দিয়েছি, সেই সঙ্গে বলেছি যারা নির্বাচন করতে চায় করতে পারবে। উন্মুক্ত করে দিয়েছি, কাজেই সেখানে নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে রয়েছি। সেখানে নারী হত্যা, শিশু হত্যা হচ্ছে যা গণহত্যার শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দাও জানিয়েছি। কিছু সহযোগিতাও পাঠানো হয়েছে এবং আরো পাঠানো হবে।
তিনি এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জন্য বিভিন্ন ফোরামে, যখনি বিদেশে গিয়েছেন কথা বলেছেন বলেও উল্লেখ করেন ।
বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে এবং জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমাদের দেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গের উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারে যখন ঝামেলা হয়েছিল তখন আমরা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি এবং এ নিয়ে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোন বিবাদে জড়াইনি বরং আমরা আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্বে চলমান অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধের আহবান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন ফোরামে যেখানে কথা বলেছি সেখানেই অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে এই অস্ত্রের টাকা শিশুদের খাদ্য, শিশুদের চিকিৎসা এবং তাদের শিক্ষার জন্য এবং মানবকল্যাণে ব্যয় করার কথা বলেছি।
তিনি বলেন, যেসব দেশ অস্ত্রের জন্য টাকা ব্যয় করছে সেগুলো তো সেদেশের জনগণ যে ট্যাক্স দেয় সেই ট্যাক্সেরই টাকা। কাজেই তাদের টাকা ধ্বংসের জন্য কেন ব্যয় হবে?
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আমাদের উন্নয়নে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় রেমিটেন্স বৈধ চ্যানেলে পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যদি অনলাইনে ব্যাংকিং এর সুযোগ নিয়ে টাকাটা পাঠায় তাহলে যেটুকু পরিবারের জন্য খরচ হবে বাকিটা তার একাউন্টে জমা থাকবে এবং নিজেরও একটা ভরসার জায়গা থাকবে। তিনি তাঁর সরকারের চালু করা সার্বজনীন পেনশন স্কিম এবং প্রবাসী পেনশন স্কিম গ্রহণ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষের কল্যাণ হোক, তাদের জীবন মান উন্নত হোক। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সমস্ত কার্যক্রম। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়ে গিয়েছিলেন, তার থেকে একধাপ এগিয়ে আমরা দেশকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে তুলে এনেছি এবং ২০২৬ সাল থেকে তা কার্যকর হবে। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন গণআন্দোলন এবং সর্বোপরি দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় প্রবাসে বসবাসরত বাঙালিদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন।