মোটর মেকানিক থেকে আবিষ্কারক,সমাজসেবকের রোল মডেল উদ্ভাবক মিজান
মানুষের মুখে মুখে ‘ফ্রি খাবার বাড়ি’.
যশোরের শার্শা উপজেলার মোটরসাইকেল মেকানিক মিজান এখন দেশসেরা আবিষ্কারক, উদ্ভাবক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক। মিজানের একাডেমিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও আজ সে নিজের আলোয় আলোকিত হয়ে দেশসেরা উদ্ভাবক ও সমাজসেবার রোল মডেল এর উদাহরণ। নতুন চিন্তা আর নতুন গবেষণায় এখন পর্যন্ত তার আবিষ্কারের সংখ্যা ৮টি। এছাড়া আছে তার বিভিন্ন সামাজিক কাজ। এর মধ্যে তার গবেষণা ও উদ্ভাবন নিয়ে দেশ জাতি এখন গর্বিত। মিজানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন স্বপ্ন দেখছে গোটা দেশ ও জাতি।
সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে জীবন আত্মার তৃপ্তি খোঁজেন যশোরের শার্শা উপজেলার কৃতি সন্তান মিজানুর রহমান। জীবনের কর্মব্যস্ততার পাশাপাশি নতুন-নতুন উদ্ভাবন করেও থেমে থাকেননি তিনি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, ছিন্নমূল পথ শিশু ও রাস্তায় থাকা মানুষের বাসস্থান ও খাবারের ব্যবস্থা করতে থাকেন মিজানুর। দীর্ঘ ১৫টি বছর তিনি নিঃস্বার্থভাবে পরিবেশ ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে সেবা করে যাচ্ছেন।
সামাজিক কর্মকান্ড ও সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় ইতোমধ্যে তার ঝুলিতে জমা হয়েছে স্বর্ণ পদক সহ অসংখ্য সম্মাননা স্মারক।
করোনা কালীন সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাক্স, হ্যান্ডগ্লাফস, হ্যান্ড ওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণসহ ঘরে থাকা কর্মহীন মানুষের জন্য প্রতিনিয়ত খাদ্য সরবরাহ করেন তিনি। নিজের অর্থ দিয়ে তিনি পরিবেশ ও মানুষের জন্য একাগ্রচিত্রে কাজ করে যাচ্ছেন শুরু থেকে।
নিজের দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, আত্মতৃপ্তির স্বাদ মিটাতে দিনে রাতে রাস্তায় থাকা পাগল ও অভূক্ত প্রাণী কূলে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন নিজেরই তৈরি মোটর গাড়িতে করে।
নিজের এলাকা ছাড়াও সারা দেশে ১ লাখ কোরআন বিতরণের মিশনে নামেন মিজানুর রহমান যা এখনো চলমান রয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, অসহায়কে খাদ্য সামগ্রী প্রদান, নিরাপদ খাবার পানির জন্য টিউবওয়েলের ব্যবস্থা ও পথে থাকা অসাহায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য বাসস্থান ও খাবারের ব্যবস্থা তার নিত্য দিনের কাজের বড় একটি অংশ হিসেবে পরিচালনা করছেন নিজ হাতে সে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মিজানুর রহমান মাস্টার্স পাশ করা প্রতিবন্ধি শাহিদা খাতুনের নামে প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি অসংখ্য প্রতিবন্ধিকে হুইল চেয়ার ও ক্রেস প্রদান করে চলাচলের সুব্যবস্থা করেছেন। মাতৃ দুধের অভাব পূরণ করতে অসংখ্য শিশুর মুখে শিশু খাদ্য তুলে দিয়েছেন মিজানুর রহমান।
শুধু তাই নয় মানবদরদি মিজান প্রতিদিন তার উদ্ভাবনী গাড়িতে করে খাবার প্যাকেট করে ঘুরতে থাকেন রোডে রোডে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। পথের পাশে পড়ে থাকা চলাচলে অযোগ্য মানুষকে খুঁজে খুঁজে তাদের মুখে এখনো খাবার তুলে দিচ্ছেন দরদী মিজান।
শীতার্ত আবহাওয়ায় মানুষ যেখানে যবুথবু সেই পরিস্থিতিতে ঘরে মন বসেনা মিজানের। কম্বল নিয়ে ঘুরে বেড়ান গরীব অসহায় পরিবারের মাঝে ও খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে শীত নিবারন করার চেষ্টা করছেন তিনি।
তার এতোসব কর্মকান্ডে মানুষের কাছে তিনি আজ মানবতার ফেরিওয়ালা হিসাবে পরিচিত। হয়েছেন একজন সফল মানবাধিকার কর্মী। বর্তমানে তিনি সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন যশোর জেলা শাখার সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ইতোমধ্যে সমাজ সেবক মিজানুর রহমান শার্শার শ্যামলাগাছীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন হযরত শাহজালাল (রাহ:) লতিফিয়া ফ্রি মডেল মাদরাসা ও এতিমখানা। যেখানে বর্তমান ৪০ জন এতিম শিশু ও ছিন্নমূল পথ শিশুরা বিনা খরচে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা পাচ্ছে।
লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদেরকে কর্মদক্ষতায় গড়ে তুলতে তৈরি করেছেন সকলের জন্য উন্মুক্ত ফ্রি কারিগরি ট্রেনিং সেন্টার ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। মাদরাসা ও এতিমখানার সাথে রয়েছে অসহায় পাগল ফকির ও অভূক্ত মানুষের জন্য ক্ষুধা লাগলে খেয়ে যান ফ্রি খাবার বাড়ি। যেখানে তিন বেলা খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলার দেউলি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন বেওয়ারিশ পূর্ণবাসন কেন্দ্র ও বৃদ্ধাশ্রম। এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মিজানুর রহমান বলেন, সমাজ সংসারে সন্তানদের কাছে বৃদ্ধ মা বাবা বোঝা হয়ে গেছে।
বৃদ্ধ মা বাবারা যাতে এই বৃদ্ধাশ্রমে ভাল ভাবে অতি যত্নে থাকতে পারে সে জন্য এবং এই পূর্ণবাসন কেন্দ্রে পথশিশু অসহায় ও ছিনমূল মানুষগুলো থাকতে পারবে। সেই সাথে তাদের ছোট ছোট শিশুদের পাশাপাশি সকলের জন্য কোরআন ও অন্যান্য শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই বেওয়ারিশ পূর্ণবাসন কেন্দ্র ও বৃদ্ধাশ্রমের কেউ মারা গেলে তাদেরকেসহ অন্যান্য এলাকার মানুষের জন্য দাফন কাফন মরদেহ কবরস্থ করতে একটি টিম বিনা খরচে কাজ করবে।
যশোরের শার্শা উপজেলার এই মোটরসাইকেল মেকানিকের কোনো প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও আজ তিনি নিজের আলোয় আলোকিত। নতুন চিন্তা আর গবেষণা তার ধ্যান-জ্ঞান। তবে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রায়ই থমকে যায় তার উদ্ভাবন প্রক্রিয়া ও সমাজিক কর্মকান্ড।
মিজান জানান, তার স্বপ্ন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন সমাজ সেবা ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যেতে চাই। সমাজে শুধু একজন মিজান হলে সমাজ পরিবর্তন হবেনা। পরিবেশ ও মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
‘ক্ষুধা লাগলে খেয়ে জান’ এমন অভিনব শ্লোগান দিয়ে যশোরের শার্শায় পরিচালিত হচ্ছে একটি ‘ফ্রি খাবার বাড়ি’।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, গরিবঅসহায়, ছিন্নমূল পথ শিশু ও এতিম শিশুদের মাঝে এখানে তিনবেলা খাওয়ার জন্য ফ্রি খাবার বাড়িটি গড়ে তুলেছেন শার্শার কৃতী সন্তান দেশ সেরা উদ্ভাবক মিজানুর রহমান। দিন পরিবর্তনের পাশাপাশি উদ্ভাবক মিজানের ফ্রি খাবার বাড়িটি ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মুখে মুখে। সপ্তাহের শুক্রবার বিশেষ আয়োজন ছাড়াও প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে শিশুসহ সব বয়সি নারী-পুরুষ খেতে আসে উদ্ভাবক মিজানের ফ্রি খাবার বাড়িতে। ২০১৮ সাল থেকে উদ্ভাবক মিজান গড়ে তুলেছেন এই ফ্রি খাবার বাড়িটি। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এভাবে অসহায়ের মুখে তিনবেলা খাওয়ার তুলে দিচ্ছেন তিনি। প্রথম অবস্থায় স্বল্প পরিসরে খাওয়া-দাওয়ার কার্যক্রম চললেও আজ উদ্ভাবক মিজানের ফ্রি খাবার বাড়ি ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। তিন বেলা এখানে ফ্রিতে খাবার পেয়ে বেজায় খুশি খেতে আসা অসহায় মানুষগুলো। শার্শার শ্যামলাগাছীতে উদ্ভাবক মিজানের ফ্রি খাবার বাড়ির পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন হযরত শাহজালাল (রাহ.) মডেল মাদ্রাসা ও এতিমখানা। যেখানে ফ্রিতে থাকা খাওয়ার পাশাপাশি কোরআন শিক্ষা করেন কোমলমতি এতিম ও ছিন্নমূল পথ শিশুরা। মিজানুর রহমান বলেন, ‘খামার বাড়ি মহামারি করনাকালীন সময় থেকে চলমান আছে। আজীবন ধরে রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু একজন মিজানের পক্ষে সম্ভবনয়। এভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘আমার এই খাবার বাড়ির পাশাপাশি বড় একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা সম্পূর্ণ ফ্রিতে চলে, কোনো বেতন নেওয়া হয় না। অসহায় এতিম শিশুদের পড়ানো হয়।’
এই মোটরসাইকেল মেকানিক মিজান এখন দেশসেরা আবিষ্কারক, উদ্ভাবক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক। মিজানের একাডেমিক কোনো শিক্ষা না থাকলেও আজ সে নিজের আলোয় আলোকিত। নতুন চিন্তা আর নতুন গবেষণায় এখন পর্যন্ত তার আবিষ্কারের সংখ্যা ৮টি। এছাড়া আছে তার বিভিন্ন সামাজিক কাজ। এর মধ্যে তার গবেষণা ও উদ্ভাবন নিয়ে দেশ জাতি এখন গর্বিত। মিজানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন স্বপ্ন দেখছে গোটা দেশ ও জাতি। এয়াড়া তিনি এখন সমাজসেবার রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
শার্শা উপজলোর নিজামপুর ইউনিয়নের আমতলা গাতিপাড়ার অজপাড়াগায়ে ১৯৭১ সালের ৫ই মে জন্ম গ্রহণ করেন মিজান । তার ভালো নাম মিজানুর রহমান। পিতা আক্কাস আলী ও মাতা খোদেজা খাতুন। আজ তারা কেউ বেঁচে নেই। পিতামাতার ও সন্তানের মধ্যে মিজান ছোট। বর্তমান শার্শা উপজেলা সদরের শ্যামলাগাছি গ্রামে তিনি বাস বরেন। দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি মিজান। ৮-৯ বছর বয়সেই বেঁচে থাকার তাগিদে নেমে পড়েন মজুরের কাজে। মাঠে শ্যালো মেশিন চালানো এবং মেরামতের কাজ করেন মিজান। পরে নাভারন বাজারে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে কাজ পান তিনি। সেখান থেকেই মোটর মেকানিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তার। বর্তমানে শার্শা বাজারে ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নামে একটি মোটরসাইকেলের প্যারেজ রয়েছে তার।