রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তফসিল হতে পারে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই। সম্প্রতি শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই রাঙ্গুনিয়ার সর্বত্রই আলোচনা চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। সেই নির্বাচনটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতো উন্মুক্ত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের খবরে রাঙ্গুনিয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার খবরে সাধারণ মানুষের ধারণা দলীয় হস্তক্ষেপ না থাকলে জনপ্রিয় প্রার্থীরাই চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং জিতে আসবেন। এক্ষেত্রে এই তিনপদে প্রার্থী সংখ্যাও দীর্ঘ হবে বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তৎপরতা দেখা গেলেও নীরব ভূমিকায় বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। বিএনপি এবারও জানিয়ে দিয়েছে, এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ দুই রকম, বিএনপি না এলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করা এবং দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে জাতীয় পার্টি ও তৃণমূল বিএনপিসহ অন্যান্য দল থেকেও প্রার্থীরা অংশ নিতে পারেন বলে এসব দল সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, প্রার্থী হতে এখন থেকেই তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অন্তত ডজনখানেক প্রার্থী। দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হলেও দলের সমর্থন পেতে রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে বিভিন্নভাবে নিজেদের উপস্থাপনে ব্যস্ত সম্ভাব্য এই প্রার্থীরা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিভিন্নভাবে প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন তারা। নিজেদের রাজনৈতিক ত্যাগ, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জনপ্রিয়তা তুলে ধরছেন। তবে কারা কারা প্রার্থী হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার, সাবেক চেয়ারম্যান এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মুহাম্মদ আলী শাহ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুল ইসলাম চৌধুরী, উত্তর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার, কনকর্ড ইন্টারন্যাশনাল ও আটাবের চেয়ারম্যান এবং বায়রার ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবু জাফর, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এফবিসিসিআয়ের সদস্য এবং আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গিয়াস উদ্দিন খান স্বপন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আকতার কামাল চৌধুরী সিআইপি, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং রাঙ্গুনিয়া পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শেষর বিশ্বাস, সরফভাটা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল ইসলাম সরফী, সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের কাজী এমএন আলম। এরপর এই পদে আসেন চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রয়াত এম এ জব্বার। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন বর্তমান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ হাসনাত। সামান্য ভোটের ব্যবধানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কনকর্ড ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ আবু জাফর। এরপর ২০১৪ সালে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এই পদে আসেন আওয়ামী লীগের মুহাম্মদ আলী শাহ। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খলিলুর রহমান চৌধুরী। তিনি ২০২০ সালের ২২ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে মৃত্যুবরণ করলে একই বছরের ২ নভেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। এরপর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবার একই বক্তব্য- আধুনিক রাঙ্গুনিয়া গড়ার রূপকার বীর চট্টলার মানুষের সুখ- দুঃখের সাথী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগা সাধারণ সম্পাদক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সকলের অভিভাবক। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তিনি চনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত মেনেই তারা কাজ করতে চান।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের আলাপ-আলোচনা হয়। এ দিন সন্ধ্যায় তার কক্ষে অবস্থান করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী ও আনিসুর রহমানসহ অনেক। সেখানেও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানা যায়।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার (উপজেলা) (সংশোধন) বিল-২০১৫ এ বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুটি ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ ও সংরক্ষিত) পদের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। আইনটি পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হয় উপজেলায়। তারপর থেকে সকল স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে। তবে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই সময়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো দলীয় প্রার্থী রাখা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করেছিল।