জেরুজালেম, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ (বাসস ডেস্ক): ইসরায়েলেী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বুধবার হামাসের যুদ্ধবিরতির দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং গাজার দক্ষিণে রাফাহ শহরে সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাতের কয়েক ঘণ্টা পর তেল আবিবে বক্তৃতায় বলেছেন, তিনি এখনও ‘চুক্তিতে পৌঁছানোর জায়গা’ দেখেছেন এবং তিনি ইসরায়েলি নেতাকে এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, এতে ‘উত্তেজনা বৃদ্ধি’ পাবে। নেতানিয়াহু একটি টেলিভিশন ব্রিফিংয়ে বলেছেন, তিনি রাফাতে সৈন্যদের ‘অভিযানের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ মাত্র কয়েক মাস দূরে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের ‘অদ্ভুত দাবি’ মেনে নেওয়া জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দিকে পরিচালিত করবে না বরং ‘এটি কেবল আরেকটি গণহত্যাকে আমন্ত্রণ জানাবে’।
বৈরুতে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, নেতানিয়াহুর ‘আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া সম্পূণরূপে নিশ্চিত করে যে, এর লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো।’
হামাসের কর্মকর্তা ওসামা হামদান, ‘সকল প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার’ এবং ইসরায়েলি ‘এই সংঘর্ষের শেষ পর্যায়ে বিশ্বাসঘাতকতা’ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
নভেম্বরে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি নেতার উপর চাপ সৃষ্টি করেন।
নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে আদিনা মোশে বলেন, ‘সবকিছুই আপনার হাতে’।
তিনি বলেছিলেন, ‘আপনিই একজন এবং আমি খুব ভয় পাচ্ছি এবং খুব উদ্বিগ্ন যে আপনি যদি হামাসকে ধ্বংস করার মনমানসিকতা পরিহার না করেন, তাহলে মুক্তির জন্য কোনো জিম্মি অবশিষ্ট থাকবে না।’
এরআগে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তার পঞ্চম মধ্যপ্রাচ্য সফরে একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির জন্য আশা প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, ‘অনেক কাজ করতে হবে।’
‘তবে আমরা সেই কাজটি করার দিকে খুব বেশি মনোযোগী এবং আশা করছি যে নভেম্বরে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির পর বাধাপ্রাপ্ত জিম্মিদের মুক্তি আবার শুরু করতে সক্ষম হব।’ জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর সাথে দেখা করার পর ব্লিঙ্কেন এ কথা বলেছিলেন।
মধ্যস্থতাকারী মিশরের একজন কর্মকর্তা এএফপি’কে বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকায় শান্তি’ অর্জনের লক্ষ্যে ‘নতুন দফা আলোচনা’ বৃহস্পতিবার কায়রোতে শুরু হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, হামাস ‘একটি যুদ্ধবিরতি, যুদ্ধের অবসান এবং একটি বন্দী বিনিময় চুক্তি’র লক্ষ্য নিয়ে কায়রোতে আলোচনায় সম্মত হয়েছে।
গত সপ্তাহে হামাসের একটি সূত্র বলেছে, প্রস্তাাবিত নতুন যুদ্ধবিরতিতে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ বিরতি এবং জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি গাজার জন্য আরও সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারপর থেকে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
ব্লিঙ্কেন গাজায় আরও সাহায্যের জন্য নতুন করে আবেদন জানিয়েছেন। সেখানে ২৪ লাখ মানুষ কঠোর অবরোধের মধ্যে এবং বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, জ্বালানী এবং চিকিৎসা সরবরাহের তীব্র সংকটের সাথে লড়াই করছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করার জন্য আমাদের সকলেরই বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
ব্লিঙ্কেন অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করেন।
আপাতত, হামাস-শাসিত গাজায় বুধবার অবিচ্ছিন্ন যুদ্ধ পঞ্চম মাসে প্রবেশ করেছে। যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বলেছে, গত ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ১২৩ জন নিহত হয়েছে এবং এএফপি সাংবাদিকরা দক্ষিণের শহরগুলোতে আরও ভারী বোমা হামলার খবর দিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা অধিকৃত উত্তর পশ্চিম তীরের তুলকারেমের কাছে নুর শামস ক্যাম্পে এক ব্যক্তির বাড়ি ঘেরাও করে দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজার অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যার আশ্রয় নেয়া রাফাতে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের খবরে তিনি ‘শঙ্কিত’ হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা এবং স্থল আক্রমণ শুরু করে। এতে কমপক্ষে ২৭,৭০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।