রাজনীতিশীর্ষ নিউজ
দুই যুগের প্রচেষ্টা ঃ সনি হলেন এমপি
অসীম বিকাশ বড়ুয়া
শুধু একটি নাম নয়, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, একটি স্বপ্ন, একটি সংগ্রাম, একটি ইতিহাস নিয়ে এসেছে ফটিকছড়িবাসীর জন্য। সমাজে চলমান গা ভাসিয়ে দেওয়ার এলিট ধারার রাজনীতির যুগে সবার টার্গেট থাকে জ্ঞান ও নীতি আদর্শ বিমুখ রাজনীতি করে পদ দখল বা দলনেতা হয়ে মূলধন ছাড়া লাভজনক ব্যবসা করা। পদ দখল করে দলনেতা হওয়া যায়, কিন্তু জননেতা হওয়া যায় না। জননেতার প্রধান গুণ মানবিক হওয়া, মানবতার জন্য কাজ করা। ঠিক তেমনটি ছিলেন এম.পি সনির পিতা আলহাজ্ব রফিকুল আনোয়ার এম.পি। তিনি বর্তমান অসুস্থ ধারার রাজনীতির ঠিক উল্টো পথের যাত্রী হয়ে এসেছেন ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষের কাছে। যিনি বিপদের সময় মানুষের পাশে থেকেছেন সব সময়, রাজনীতি না করেও প্রথমদিকে তিনি দ্রুত দানবীর ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে কঠিন দু:সময়ে ফটিকছড়ি আওয়ামীলীগের মজবুত ভিত গড়ার সাহসী কান্ডারীও তিনি। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিকে হারিয়ে রফিকুল আনোয়ার রক্ষা করেন সভানেত্রীর আস্থা। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিকূল সময়েও তিনি ফটিকছড়িকে আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হতে দেননি। তখন থেকে রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়েছেন এমপি সনি। ছোটবেলা থেকেই সনি দেখেছেন বাবা প্রয়াত রফিকুল আনোয়ার ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষের সাথে মিশে আছেন। সেই থেকে তিনি বাবার মতন ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষকে ভালোবেসে আপন করে নিয়েছেন।
১৯৯৬ সালের দিকে সনি চট্টগ্রাম পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী থাকা অবস্থায় গণ সংযোগ শুরু করেন। ছোট বেলায় সনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের কেন নৌকা মার্কায় ভোট দেবে- সেটা তুলে ধরতো। ২০০১ সালেও তিনি বাবার নির্বাচনে গনসংযোগ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারন করার শিক্ষা পেয়েছেন। তাঁর বাবা তাকে বলতেন মেয়েকে ইন্দিরা গান্ধী বানাবো, বেনজির ভূট্টো বানাবো। তার প্রার্থনা আজ সফল হয়েছে। তিনিই আজ অগোছালো,অবহেলিত,সন্ত্রাসী তকমা লেগে থাকা জনপদের অভিভাবক ও কান্ডারী।
মানবিক গুণ ও মানবতার জন্য মহাত্মা গান্ধী ও জওহর লাল নেহেরু, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মানুষ আজও সংকটে-সংগ্রামে স্মরণ করে ও অনুসরণ করে। তাঁরা শোষকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, গেয়েছেন মানবতার গান। রফিকুল আনোয়ার সে অর্থে ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানবিক মানুষ। ২০০৩ সালের দিকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি ফটিকছড়ি ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলাম। নিজ ইউনিয়ন আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সময় এমপি রফিকুল আনোয়ারের স্নেহধন্য হয়েছি এরপর তার সান্নিধ্য বহুবার আসার সুযোগ হয়েছে। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন।
বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের পর রফিকুল আনোয়ারের ওপরও নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন।তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। শত চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে তারপরও থেমে যাননি সনি। ২০১২ সালের পিতার মৃত্যুর পর যুদ্ধাপরাধীকে জনপ্রতিনিধি বানানোর কলঙ্ক থেকে ফটিকছড়িবাসীকে মুক্ত করার জন্য মানুষের সঙ্গে মিশে কাজ করে গেছেন। পিতার অবর্তমানেও ভালোবাসার ফটিকছড়িকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা খ্যাত, ফেনী জেলার সমান ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি চা বাগান, ৩টি রাবার বাগানসহ মসজিদ, মন্দির, বৌদ্ধ বিহার ও নানা প্রতিষ্ঠানসহ ২০ নং আবদুল্লাপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বাগানবাজার পর্যন্ত ১৮টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভায় চষে বেড়িয়েছেন এমপি সনি।
ফটিকছড়ি যখন সুদক্ষ মানবিক নেতৃত্বের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে শোষিত অবহেলিত, বঞ্চিত ও সন্ত্রাসী জনপদে পরিণত হয় তখন গণ-মানুষের একটাই আকুতি ছিল- কে পুনঃরুদ্ধার করবে এই অন্ধকার ফটিকছড়িকে, কে দেখাবে আলো! কে ধরবে এই ভাঙা তরীর হাল ! ঠিক সেই সময়ে সিন্দাবাদের মতো ঘোর সওয়ার হয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলেন মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। সনি হুট করে বা শখের বশে রাজনীতিতে আসেন নি। যে ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে নিজ পিতার নাম। সেই ভালোবাসার মানুষদের কলঙ্কমুক্ত করতে, সেবা করতে,সুখে দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়াতে দীর্ঘ দুই যুগের প্রচেষ্টাঃ এমপি সনি তুমি বিস্ময়, তুমি ফটিকছড়ির অহংকার !
এবারের বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সনিই একমাত্র এমপি যিনি চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে একমাত্র নারী এমপি হিসেবে জয়লাভ করেছেন। তাঁর অবিচল দৃঢ়তা ও নেতৃত্বগুণ সারা বাংলাদেশে তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রসংশিত হয়েছে। এখন ফটিকছড়িবাসী বসে আছে রফিককন্যা এমপি সনির প্রতিদিনের একশন প্ল্যানে পাল্টে যাবে এই জনপদ, হবে না আর সন্ত্রাসী, পড়বে না আর লাশ। জবাবদিহিতার কাতারে দাঁড়িয়ে সবাই কাজ করবে ফটিকছড়ির কল্যাণে। একটি সুন্দর সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ গঠন হবে। মাদক, সন্ত্রাস, অবিচার, শোষণ থেকে দূরে সরে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দর আদর্শে উদ্বেলিত হবে। তারা বড় হয়ে এই জনপদের সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করবে।
রফিককন্যা এমপি সনির সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও সততায় ফটিকছড়ি আবারও দেশের মধ্যে একটি আত্মনির্ভরশীল উপজেলা হিসেবে রোলমডেল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। আজ থেকে হাজার বছর পর যখনই ফটিকছড়ির উন্নতি ও সমৃদ্ধির ইতিহাস লেখা হবে তখনই লেখক ও গবেষকদের ফুটনোটে বার বার ফিরে আসবে মানবিক মানুষ কর্মবীর রফিকুল আনোয়ার ও তার কন্যা এমপি সনির নামটি।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।