চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ
ফিরিঙ্গাবাজার অভয়মিত্র ঘাটে কাঠ কারখানার ডাস্ট-ধুলায় অতিষ্ঠ পথচারী
জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার এবি দাশ লেইন সড়কে নতুন অভয়মিত্রঘাটের রাস্তায় উড়ছে কাঠের ধুলা আর কাঠের ডাস্ট। এর ভেতর দিয়েই চলাচল করছে সাধারণ মানুষ ও পথচারী।
কেননা, এ রাস্তা দিয়ে যেতে হয় এখন নতুন অভয়মিত্র ঘাটের যাত্রী ছাউনি। কর্ণফুলী নদীর এপার-ওপার হতে প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করে ১৫-২০ হাজার মানুষ। তাঁদের কাউকে নাক বন্ধ করে। কাউকে মাস্ক পড়ে পথ চলতে হয়।
কেননা, পুরো এবি লেইন দাশ রাস্তা জুড়ে দু’পাশে কাঠের দোকান। এ কাঠের ধুলাবালিতে ধুলা আর ডাস্ট। সেই ধুলা মিশে যাচ্ছে কর্মব্যস্ত মানুষের শরীর ও পোশাকে। পুরো সড়ক জুড়ে বিকেলে একই চিত্র।
যদিও কাঠের কারখানায় ধুলা সংগ্রাহকের জন্য শিখা প্রতিরোধক অ্যান্টিস্ট্যাটিক পলিয়েস্টার ফিল্টার ব্যাগ ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ফিরিঙ্গিবাজারের কাঠ ব্যবসায়িরা কেউ এ যন্ত্র ব্যবহার করছেন না।
এমনকি কাঠের ছোট ছোট দোকানগুলির জন্য আধুনিক কাঠের ধুলো সংগ্রাহক ওয়াই টাইপ এয়ার ডাক্ট ডিজাইন কিংবা ডাস্ট এক্সট্র্যাক্টর স্লাইডিং প্যানেল ব্যবহার করে ধুলা-ডাস্ক বন্দি করে রাখার যন্ত্র থাকলেও কেউ এ পদ্ধতিও ব্যবহার করছেন না। সবাই এনালগ পদ্ধতিতে খোলা পরিবেশে উড়িয়ে দিচ্ছেন ধুলা আর ডাস্ট।
ফলে, শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাস ও যানবাহন চলাচলের কারণে কাঠের ধুলাবালি উড়ে পাশের বাড়িঘর ও দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। এতে শুধু পথচারী বা যাত্রীরা নয়, দোকানদারেরাও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু বোধোদয় হচ্ছে না ব্যবসায়িদের।
জানা যায়, এই সড়ক ব্যবহার করে ঘাট দিয়ে প্রতিদিনের কর্মযজ্ঞ শুরু করে কর্ণফুলী, পটিয়া আনোয়ারা এলাকার হাজার হাজার মানুষজন। এসব পথচারীরা রয়েছে ভোগান্তিতে। কিন্তু কোথাও কর্তৃপক্ষকে পানি ছিটিয়ে হলেও ধুলা নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় না।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হলে পথচারি আহমদ নুর বলেন, ‘আমরা যেহেতু নদীর ওপারে থাকি। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন নিউ মার্কেটে কাজে আসা যাওয়া করতে হয়। কাঠের ধুলার কুণ্ডলীতে যেভাবে পরিবেশ নষ্ট হয়। ঠিক তেমনি চোখও নষ্ট হচ্ছে অনেকের।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক পথচারী শাহ আলম বলেন, ‘ কাঠের ধুলায় প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে আমাদের চোখ,-মুখ। ধুলার যন্ত্রণায় সড়কে চলতে হয় চোখ বন্ধ করে। অথচ সিটি কর্পোরেশন আগের অভয়মিত্র ঘাট বন্ধ করে ফিরিঙ্গিবাজারের চেয়ারম্যান ঘাটে যুক্ত করে দিলেন। কিন্তু কাঠের দোকানদারদের কোন ব্যবস্থা করলেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় সন্ধ্যার পরে বড় কাঠের ট্রাক ডুকিয়ে রাখেন। পুরো সড়ক বন্ধ থাকে। কেউ কারো কথা শোনে না। ভোগান্তিতে নারী পুরুষ আর পথচারীরা।
নতুন অভয়মিত্র ঘাট দিয়ে নিয়মিত আসা যাওয়াকারী পথচারি নিলুফা মনি বলেন, প্রচণ্ড ধুলাবালির সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করতে হয়। রাস্তার দু’পাশে কাঠের দোকান। বিকেল থেকেই কাঠ কারখানার ধুলা-ডাস্টে অন্ধকার হয়ে যায় এলাকা। মাত্রাতিরিক্ত ধুলা আর তীব্র শব্দে দম বন্ধ হবার উপক্রম হয়। যেন কেউ দেখার নেই।’
ধুলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটের এক দোকানদার বলেন, ‘দোকানের ভেতরে কাঠের ধুলাবালি ঢুকে মালামালের ওপর আস্তর পড়েছে। প্রতিদিন চারবার করে ঝাড়ার পরও ধুলার আস্তর পড়েছে। কাঠের ধুলায় মালের রং নষ্ট হচ্ছে। সাদা ধুলায় আশপাশের সবকিছু সাদা হয়ে যায়। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
পরচারি শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘এ রাস্তা দিয়ে ঘাটে যেতে ধুলাবালির কারণে মুখে মাস্ক পরে চলাচল করলেও ধুলা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।’
চট্টগ্রাম কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল চৌধুরী বলেন, ‘আসলে ঘাটটি এদিকে ছিলো না। আগে ঘাটটি অন্যদিকে। বন্দর কতৃপক্ষ কিংবা চসিক ৩ বছর আগে ফিরিঙ্গিবাজার চেয়ারম্যান ঘাটে সংযুক্ত করেছেন। ফলে, লোকজনের যাতায়াত বেড়ে গেছে। কাঠের ধুলা ও ডাস্টে যদি পথচারীদের ভোগান্তি দেয়, সেটা কাঠ ব্যবসায়িদের সাথে বসে কি করা যায় ব্যবস্থা নেব।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম মহানগর) সহকারি পরিচালক হাছান আহম্মদ বলেন, ‘কাঠের আসবাব পত্র দোকানের জন্য আমাদের আলাদা আইন আছে। কিন্তু কাঠের কারখানার কারণে পরিবেশের ক্ষতি বা বাতাসে ধুলা ডাস্টে সাধারণ মানুষের ক্ষতি কিংবা পরিবেশের ক্ষতি করছে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, ‘বিষয়টি আমিও চিন্তা করেছি। সাধারণ মানুষের পথ চলতে কষ্ট হচ্ছে। ধুলা-ডাস্টের ভেতর দিয়ে। আমার ইচ্ছা ছিলো একটি গাড়ি দিয়ে পানি ছিঁটানোর। কিন্তু সাধ আছে সাধ্য নেই। শিগগিরই রাস্তাটির কাজ শুরু হবে। তখন কিছুটা ধুলা বালি ডাস্ট উড়াউড়ি কমে যাবে। কাঠ ব্যবসায়িদেরও বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। কিভাবে ডাস্ট জমি রাখা যায় মেশিন ব্যবহার করে।’