চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যে, সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ, বাংলাদেশ বিষয়ক একটি স্বাস্থ্য গবেষণার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকাল ১১ টায় বান্দরবান জেলা পরিষদ সভা কক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।
সবার জন্য টিকা এবং সবার জন্য ঔষধ, (এমভিডিএ) বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় বান্দরবান পার্বত্য উপজেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা এম এম নয়ন সালাউদ্দিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত্ব করেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব ক্য শৈ হ্লা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে চালিত এই গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক, ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও গবেষক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ।
গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, ম্যালেরিয়া নির্মূলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত দ্যা আর টুয়েন্টি ওয়ান ম্যাট্রিক্স-এম ম্যালেরিয়া ভ্যাক্সিন ( The R21/Matrix-M malaria vaccine) এর কার্যকারিতা যাচাই করতে গবেষণাটি পরিচালিত হবে।
বান্দরবনের আলীকদম ও লামা উপজেলায় ১০০ টি গ্রামকে ৪ টি ভাগে ভাগ করে একটিতে ভ্যাক্সিন ও ঔষধ, একটিতে শুধু ভ্যাক্সিন, একটিতে শুধু ঔষধ এবং অপরটিতে চলমান সেবা প্রদান করা হবে। এরপর প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে এই ম্যালেরিয়া টিকার কার্যকারিতা যাচাই করা হবে।
বাংলাদেশ সরকারের ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য বাস্তবায়নে এই গবেষণা যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন সভার প্রধান অতিথি অধ্যাপক এম এ ফয়েজ।
আফ্রিকা মহাদেশে এই টিকার ৭৭% সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই টিকার কার্যকারিকতা পরিমাপের জন্য এই গবেষণা প্রয়োজন। এই বছরে গবেষণা কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে সফলতা অর্জিত হলে আগামী বছর থেকেই সবার জন্য টিকা এবং ঔষধ প্রয়োগ করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ক্য শৈ হ্লা বলেন, ম্যালেরিয়াসহ যেকোন রোগ নির্মূলের ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। দুর্গম এলাকায় গবেষণাটি পরিচালিত হওয়ায় এই গবেষণাটিকে চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে গবেষণা কাজে স্থানীয় মানুষদের সম্পৃকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। একই সাথে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভার স্বাগত বক্তব্যে বান্দরবন পার্বত্য জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান এই গবেষণাকে ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে অ্যাখায়িত করে বলেন, দেশের মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর ৬০% ই বান্দরবন জেলার অধিবাসী এবং আলীকদম ও লামা উপজেলায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। তাই এই এলাকাতে গবেষণনাটি পরিচালিত করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তিনি এই এলাকার সকল অংশীজনের সহযোগিতা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের মূখ্য নিবাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, গবেষক অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ, গবেষক ও অধ্যাপক ডাঃ রাশেদা সামাদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ সরকারের জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ডাঃ অং চা লু।
বক্তরা এই গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে হেডম্যান, কার্বারী, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবী তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেন। একই সাথে এই গবেষণা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মকর্তা, জেলা সমবায় সমিতির কর্মকর্তা, জেলার বিভিন্ন সাংবাদিকসহ আরও অনেকে।
এই গবেষণায় ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচী, সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, ব্যাক, সি আই পি আর বি, ও মাহিদল- অক্সফোর্ড রিসার্চ ইউনিট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড ও জেনার ইনস্টিটিউট, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য সম্পৃক্ত রয়েছে।