ছাত্রত্ব নেই, বয়স নেই অথচ ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে মরিয়া!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পদপ্রত্যাশীরা চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলার প্রভাবশালী নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। থেমে নেই বিতর্কিতরাও।
এতে বিভিন্ন মামলার আসামি, রাজাকারের নাতি, মাদকসেবী, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত, চাঁদাবাজি, অছাত্র ও বয়স নেই এমন কর্মীরাও নেতৃত্বের দৌড়ে যুক্ত হয়েছেন। তদবির শুরু করেছে ছাত্রশিবির কর্মী, ছাত্রদল নেতা, মোটর সাইকেল চুরি মামলার আসামি, অছাত্র ও মাটি ব্যবসায়ীরাও।
এদের মধ্যে যাদেরকে নিয়ে দক্ষিণে বেশ সমালোচনা হচ্ছে তারা হলেন-চ্ট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সহ-সভাপতি ইয়াছিন চৌধুরী জনি, সহ-সভাপতি খালেদ মাসুদ, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ সালেহীনুর জামান (তানভীর) চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক মামুনুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আবু তৈয়ব সোহেল, প্রচার সম্পাদক আবু বক্কর জীবন, পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাজমুল সাকের সিদ্দিক ও সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর নাম সবার মুখে মুখে। এরা সবাই কোন না কোন ভাবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দলীয় সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে এরা ৮ জনেই বিষপোড়া। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের কারো বয়স নেই। নেই ছাত্রত্বও। কেননা, ছাত্রলীগের বয়স কাঠামো ছিল ২৭ বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের প্রথম দিকে সেই কাঠামো বদলে করেন ২৮ বছর। পরে তা ২৯ বছর পর্যন্ত গিয়ে গড়িয়েছে বলে দাবি ছাত্রলীগ নেতাদের। কিন্তু এই আট জনের জাতীয় পরিচয় অনুযায়ী ছাত্রলীগ করার বয়স ছাঁড়িয়েছে অনেক আগেই।সবার বয়স ৩৫ ছুঁয়ে ছুয়ে যা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ৫(ক)ধারার সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
এদের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগে শীর্ষ পদ প্রত্যাশী জেলা সহ-সভাপতি ইয়াছিন চৌধুরী জনি রাজাকারের নাতি বলে অভিযোগ রয়েছে। যার দাদা মরহুম আফজল আহমদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দোষর শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ পরবর্তীতে বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী ও গ্রাম সরকার পদে নিযুক্ত ছিলেন।
ওদিকে, পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নাজমুল সাকের ছিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গৃহবধু ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে থানায়। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িয়ে পড়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে তাকে সে সময় বহিষ্কার করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। যদিও এসব ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দেন ছিদ্দিকী।
এছাড়াও, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু তৈয়ব সোহেল এর বিরুদ্ধে পটিয়া শশাঙ্কমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশীদ কে হত্যার হুমকির অভিযোগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। এমনকি খালেদ মাসুদ, মোঃ সালেহীনুর জামান (তানভীর) চৌধুরী, মামুনুর রহমান চৌধুরী, আবু বক্কর জীবন ও মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আমলে নেবার মতো নানা অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যাদের যোগ্যতা আছে তারাই দায়িত্ব পায়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সবকিছু দেখেই কমিটি দেবে। যাদের কোয়ালিটিও নাই, কোয়ান্টিটিও নাই। তারাই অভিযোগ করছে।
নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি কোহিনুর আক্তার রাখি বলেন, ‘সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি ও নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশে আমরা পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত নিয়েছি। জমা পড়া সিভি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দলের বিভিন্ন দুঃসময়ে যারা সংগঠনের জন্য কাজ করেছে তাদেরই বেছে নেব। চট্টগ্রাম দক্ষিণে মেধাবী ছাত্রদের প্রাধান্য দেয়া হবে। অভিযুক্ত কাউকেই কমিটিতে নেয়া হবে না।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে আমরা শিগগিরই নতুন কমিটি দিব। স্মার্ট, মেধাবী, দক্ষ নেতৃত্ব দেখে গঠনতন্ত্রের আলোকে এ কমিটি করা হবে। বিতর্কিত কাউকে কমিটিতে রাখা হবে না।