লাইফস্টাইল

বেশি খেলে যে কারণে ঘুম পায়

নিমন্ত্রণে বা সারাদিন না খেয়ে থাকার পর ভারী খাবার খেলে শরীর কেমন যেন ‘ছেড়ে দেয়’। মনে হয় আর কোনো শক্তি নেই। একমাত্র ঘুমই তখন জগতের সকল সুখ বলে মনে হয়।

এই ধরনের পরিস্থিতিকে খাদ্যবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘ফুড কমা’। তার মানে এই না যে, খেয়ে অজ্ঞান হতে হচ্ছে। বরং অজ্ঞান হওয়ার মতোই ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে জাগে।

যেসব কারণে হয়

ভারী বা বেশি খেলে ঘুম পাওয়ার একটি কারণ হল, হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে যেন চলে।

এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা নিবাসী পুষ্টিবিদ ক্রিস্টিন কার্লি বলেন, “বেশি খাবার খেলে হজম প্রক্রিয়া ভালো মতো চলার জন্য বেশি পরিমাণে রক্ত দেহের বিভিন্ন জায়গা থেকে হজমতন্ত্রে যাওয়া শুরু। এর মধ্যে মস্তিষ্কও রয়েছে। যে কারণে আলস্য কাজ করে।”

খাবারের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেইটস এবং ফ্যাটস বা চর্বিও এই অবস্থার জন্য দায়ী।

“শুরুতেই বেশি খেলে, বিশেষ করে উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার, রক্তে চিনির মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। আবার সেই চিনির মাত্রা দ্রুত কমেও আছে। যা থেকে প্রচণ্ড ক্লান্তি দেখা দেয়”- বলেন কার্লি।

এছাড়া উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে দেহ ‘কোলসিস্টোকিনিন (সিসিকে)’ হরমোন নিঃসরণ করে, যা ক্ষুধা ও হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে প্রভাব রাখে। ফলে খাবার ধীরে ধীরে পাকস্থলী থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রের দিকে যায়। যে কারণে হজম প্রক্রিয়ার গতি কমে।

কার্লি বলেন, “এই হরমনের প্রভাবে পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ খাবার থাকার জন্য ‘গা ছেড়ে দেওয়া’ অনুভূতি হয়।”

কার্বোহাইড্রেইটস ও চর্বির সংমিশ্রণে দেহে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, সেটার জন্যও ‘ফুড কমা’ দেখা দেয়।

ওয়াশিংটনের পুষ্টিবিদ অ্যাজিম্যান ব্যাখ্যা করেন, “শর্করা ও চর্বি ধরনের খাবার দেহে ইন্সুলিনের নিঃসরণ ঘটায়। এই হরমোন রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শর্করা বা গ্লুকোজ কোষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয় শক্তির জন্য।”

এই প্রক্রিয়ার কারণে মস্তিষ্কে অ্যামিনো অ্যাসিড ‘ট্রিপ্টোফেন’ উৎপন্ন হয়। যা ঘুম ও মেজাজের ওঠানামার হরমোন সেরোটনিনের মাত্রা বাড়ায়।

অ্যাজিম্যান বলেন, “সেরোটনিনের মাত্রা বাড়লে দেহ নিস্তেজ হয়ে আসে, আলস্য কাজ করে। আর বেশি খাওয়া থেকে এসব কারণে প্রচণ্ড ঘুম পায়।”

‘ফুড কমা’ হওয়ার লক্ষণ

“ব্যক্তি বিশেষে একেকজনের লক্ষণ একেক রকম হয়। আবার খাবারের ভিন্নতার কারণেও প্র্রভাব ভিন্ন হতে পারে”- ব্যাখ্যা করেন কার্লি।

ঘুম পাওয়া ছাড়াও অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে আছে- পেট ফোলা ও ভরা ভাব, ঝিমানো ও তন্দ্রাভাব, অবসাদ, মনে হয় গায়ে কোনো শক্তি নেই, মনোযোগের অভাব ও কোনো কাজ করতে ইচ্ছে না করা।

যেসব অভ্যাস ও খাবার থেকে ‘ফুড কমা’ হয়

যে কোনো খাবার খাওয়ার পর, প্রচণ্ড ঘুম ঘুম-ভাব হতে পারে। পুরোটাই নির্ভর করে বিপাক কার্যক্রমের ওপর। তবে কিছু খাবার এই অবস্থা বেশি মাত্রায় তৈরি করে।

উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার: বার্গার, মিষ্টি পানীয়, মিল্ক শেইক, মিষ্টান্ন, চকলেট ধরনের খাবার, আইস ক্রিম, ভাজা পোড়া খাবার ‘সিসিকে’ নিঃসরণ করে। ফলে ঘুম পায়।

প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেইটস: সাদা পাস্তা, ভাত, পিৎজা (বিশেষ করে সাদা ময়দা দিয়ে তৈরি মোটা ক্রাস্ট ও প্রক্রিয়াজাত মাংস দেওয়া)- এসব খাবার ‘ফুড কমা’ হওয়ার জন্য দায়ী।

মিষ্টি খাবার: যেসব খাবার অতিরিক্ত মিষ্টি, সেগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় দ্রুত। যেমন- কোমল পানীয়, ক্যান্ডি, বেইক করা খাবার, মিষ্টি দই ইত্যাদি।

ট্রিপ্টোফ্যান সমৃদ্ধ খাবার: আগেই বলা হয়ে হয়েছে-  ট্রিপ্টোফ্যান’য়ের মাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে ইন্সুলিন- যা দেহে ঘুম ঘুম-ভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এই ধরনের খাবারের মধ্যে রয়েছে ওটস, মধু, কলা, দুগ্ধজাতীয় খাবার (দুধ বা পনির)।

বেশি খাওয়া: অতিরিক্ত খাবার বিশেষ করে উচ্চ শর্করা ও চর্বি ধর্মী খাবার রক্ত প্রবাহ ও হজম প্রক্রিয়াতে প্রভাব ফেলার কারণে যেসব হরমোন নিঃসরণ ও ‘নিউরোট্রান্সমিটার্স’ উদ্দীপ্ত হয়- সেখান থেকে খাওয়ার পরে দেখা দেয় তন্দ্রাভাব- ব্যাখ্যা করেন, কার্লি।

খাওয়ার পর ঘুম ঘুম ভাব এড়ানোর উপায়

অল্প খাওয়া: মজাদার ভারী খাবার পেলেও সেগুলো অল্প পরিমাণে খেতে হবে। ধীরে অল্প পরিমাণে খেলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়ে না।

নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান: অতিরিক্ত চর্বি ও শর্করা ধর্মী খাবারের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন- অলিভ অয়েল, বাদাম সাথে আঁশ ও প্রোটিন খাওয়া ‍উপকারী। এসব পুষ্টি উপাদানের মিশ্রণ ঘটাতে পারলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।

আর্দ্র থাকা: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পানি খাবার হজমে সহায়তা করে আর পুষ্টি উপাদান ভালো মতো শোষণে ভূমিকা রাখে।

মন ভরে খাওয়ার চেষ্টা করা: পেট ভরে নয়, মন ভরে খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ অ্যাজিম্যান। ধীরে মন ভরে খেলে- পেটে চাপ কম পড়ে, খাওয়া কম হয় আর পেটভরা অনুভূতি অতিরিক্ত খাওয়ার আগেই পাওয়া যায়।

খাওয়ার পর হাঁটা: হালকা শারীরিক কার্যক্রম, যেমন- হাঁটলে রক্ত প্রবাহ উন্নত হয় আর খাওয়ার পর আলস্যভাব দূর করতে সাহায্য করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button