বিদেশে পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা ললিতাহাদ গ্রামে নিঃস্ব বহু পরিবার
নিজস্ব প্রকিবেদকঃ
পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য শেষ সম্বল টুকুও হারাতে হচ্ছে বিদেশ নামক সোনার হরিণ ধরতে। কারও কারও ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকেই। যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের উত্তর ললিতাহাদ গ্রামে লাইসেন্স বিহীন কথিত আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন বিদেশগামীরা। নিঃস্ব হয়ে পরিবারের সদস্যরা ভাসছে অথৈ সাগরে।
সম্প্রতি সরেজমিনে এ সকল পরিবারের দু:খ দুর্দশার কথা জানতে এবং তাদের সাথে কথা বলতে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বেশ কয়েকজন কমিশন ভিত্তিক আদম ব্যাপারী বা দালালের সন্ধান পায়। যারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তোভোগীরা জানান, উত্তর ললিতাহাদ গ্রামের আব্দুর রশিদ ঢাকায় বসে আদম ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। গ্রামে কমিশন ভিক্তিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন সাদ্দাম, ইব্রাহীম ও কামরুল নামে তিন যুবক। ১ বছর আগে তুরস্ক যাবার জন্য রসুলপুর গ্রামের সাগর, শাকির ও হৃদয় কাছ থেকে দেড় লাখ, ললিতাহাদ গ্রামের আব্দুর রহিমের কাছ থেকে ৪ লাখ এবং সোহাগের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছেন। টাকা নেবার সময় কথা ছিলো ৩ মাসের মধ্যে তাদের বিদেশ নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আজও পর্যন্ত কেউ যেতে পারেননি। টাকা নেওয়ার সময় আব্দুর রশিদ সকলকে স্ট্যাম্প ও চেক নিয়েছেন। ওই চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে টাকা আদায় চাইতে তার বাড়িতে গেলে শুধু সময় নিচ্ছেন। কিন্তু পরের টাকায় নিজে গড়ে তুলছেন আলিশান বাড়ি। যে কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
ভুক্তভোড়ী মনোয়ার নামে এক যুবক জানান, তার বড় ভাই আদম ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের মাধ্যমে ৪ বছর আগে সৌদি আরব গিয়েছেন। সকল টাকা পরিশোধ কারার পরও এখনো তার ভাই ওই দেশের বৈধ্য ভিসা পাইনি। কিন্তু সময় সময় বলা হয়েছিলো তার ভাই বৈধ্য ভিসায় বিদেশ যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রামের কমপক্ষে ২০/২৫ যুবক আব্দুর রশিদের কাছে ১ থেকে ৪ লাখ করে টাকা দিয়েছেন বিদেশ যেতে। কিন্তু ২/৩ বছর পার হয়ে গেলেও তারা কেউ বিদেশ যেতে পারেনি। অনেকে সুদে টাকা নিয়ে আব্দুর রশিদকে দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন আবার কেউ পাওনাদারদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া। আব্দুর রশিদ তাদের টাকা নিয়ে জমি কিনে কোটি টাকা খারচ করে বাড়ি নির্মাণ করছেন। গ্রামের অনেক জমি কিনেছেন। তার বাড়ির কাজ এখনো চলমান। অথচ পাওনা টাকা চাইতে গেলে পরিশোদ না করে হয়রানি করছেন।
এদিকে, ২৯ মার্চ পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ভুক্তোভোগী আব্দুর রশিদের বড়িতে গেলে জানানো হয় টাকা পরিশোধের ব্যাপারে তিনি সন্ধ্যার পর সকলকে নিয়ে বসবেন। কিন্তু রাতে তিনি ৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তাকে ও তার স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। কিন্তু ৩১ মার্চ তার বাড়িতে যেয়ে দেখা যায় তার স্ত্রী সালমা বেগমকে কোনো মারপিট করা হয়নি। তিনি সুস্থ ও বাড়িতে কাজ করছেন।
আব্দুর রশিদের স্ত্রী সালামা বেগম জানান, তাকে নয়, তার স্বামীকে মারপিট করা হয়েছে। যশোর থেকে তার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিদেশ যাবার জন্য অনেকে তার স্বামীর কাছে টাকা নিয়েছে সত্যি। পর্যায়ক্রমে সকলকে তার স্বামী বিদেশ পাঠাবে না হয় টাকা ফেরত দিয়ে দিবে।
হৈবতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিল্লাল হোসেন জানান, কমপক্ষে ১৫/২০ জনের নালিশের ভিক্তিতে তিনি আব্দুর রশিদের নিয়ে শালিশ বৈঠক করেছেন। প্রতিবার টাকা ফেরতের অশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত কেউ টাকা পাননি।