রেন্টু-ফরিদের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগে নতুন বলয় যশোরে
যশোর প্রতিনিধি
নাবিল ও চাকলাদারের দুই হাউজ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগে নতুন বা তৃতীয় বলয় আসছে। এই বলয় আভাস নয়, স্পষ্ট এবং দ্রুত আবির্ভাব হচ্ছে জানালেন দলটির জেলা কমিটির কয়েকজন পরীক্ষিত নেতা। নতুন বলয় গড়ার এই প্রচেষ্টায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী ও অপর সাংগঠনিক সম্পাদক যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর নাম রয়েছে।
নতুন বলয় সম্পর্কে যশোর জুড়ে ব্যাপক আগ্রহ। তবে সেখানে নাম লেখানোর পক্ষে বিপক্ষে বেজায় আলোচনা সমালোচনা চলছে। তবু বলা যায় এই তৃতীয় বলয় নিয়ে এখন যশোর জুড়ে জোর আলোচনা। কেউ বলছেন এটি মন্দের ভালো। কেউ বলছেন যশোর লীগে হানাহানি বাড়ানোর সুটো বুদ্ধি। অনেকেই আবার বলছেন, বঙ্গবন্ধুর দলকে দুর্বল করার অপচেষ্টা। কয়েক জন বলেছেন, টিটো লীগের আত্মা ভর করেছে ওদের ওপর।
গত কয়েকদিন ধরে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নতুন জোটের নেতৃত্বদানকারীদের দাবি, এই জোট সংগঠনকে বাঁচানোর জোট। কাজেই এটিকে তৃতীয় জোট বলা যাবে না। যদি তৃতীয় জোট বলতে হয়, তাহলে প্রথম বা দ্বিতীয় জোট কারা? এটি সংগঠনে ‘কর্মচারীর’ বদলে কর্মীর কদর বাড়ানোর প্রয়াস থেকেই পরীক্ষিত আওয়ামী লীগাররা জোটবদ্ধ হচ্ছেন। যেখানে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের প্রাক্তন অনেক নেতাও থাকবেন।
এই জোটে আরো আসছেন, যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী, সদর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রিয়াদসহ বেশ কয়েকজন নেতা। নেপথ্যে সাবেক দুই জন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি থাকছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
গত ৫ জুন উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয় যশোর সদরে।মুলত নির্বাচনের ফল এবং কিছু অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে সেটি শক্ত রূপ নিয়েছে। জোটের সাথে আর যারা থাকছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন, জেলা যুবলীগ নেতা শেখ রফিকুল ইসলাম রফিক, কামাল হোসেন, মঈনুদ্দিন মিঠু, যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সান-ই-শাকিলা আফরোজ মিমি, যশোর শহর যুবলীগের আহবায়ক মাহামুদুল হাসান মিলুসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নসহ তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী।
এ বিষযে যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সাথে ছিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সাথে ছিলাম। বিগত সংসদ নির্বাচনে শাহীন চাকলাদারের অনুপ্রেরণাতেই এমপি কাজী নাবিল আহমেদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হই। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম উপজেলা নির্বাচনের আগে শাহীন চাকলাদার আমাদের কারও সাথে আলোচনা না করেই তার ভাই কোন পদ-পদবী না থাকা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুকে প্রার্থী ঘোষণা করলেন। যাতে আমরা অনেকেই আহত হই। রহস্যজনক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ফন্টুর পক্ষে অবস্থান নিলেন।’
মোহিত নাথ আরও জানান, ‘আমাদের কারও সাথে আলোচনা না করে ফন্টুর নাম প্রস্তাব করা অগণতান্ত্রিক আচরণ। তা ছাড়া এই গ্রুপকে দীর্ঘদিন সেবা দিয়ে আসা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েলকে অনেকদিন ধরেই কথা দিয়ে রেখেছিলেন তাকেই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবেন। কিন্তু তা তিনি করলেন না। যা দেখে রাগে দুঃখে ক্ষোভে জুয়েল একা একাই নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচন করলেন।’
তিনি বলেন, রাগে দুঃখে ক্ষোভে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হলাম। আমি মনে করি, এমপি কাজী নাবিল আহমেদ কিংবা শাহীন চাকলাদার, কোনো গ্রুপেই গণতন্ত্রের চর্চা নেই, কর্মী মূল্যায়ন নেই। এজন্য আমরা যারা মনে প্রাণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি, বিকল্প একটা প্লাটফর্ম গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই আমাদের।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসানk মিন্টু বলেন, ‘সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি ২০০৯ সাল থেকে এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সাথে ছিলাম। তিনি এমপি হওয়ার আগে থেকেই এই গ্রুপে সেবা দিয়ে আসছি। আমি গণতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনীতি করার প্রশ্নে আর নাবিল গ্রুপে ফিরে যাবো না। রাজনীতি চর্চার প্রশ্নে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে নতুন জোট গঠন করে নতুনভাবে রাজনীতির চর্চা করে যাবো।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, এখন জেলা যুবলীগের সভাপতি,একই সাথে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ৫ জুনের নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। তার আগ পর্যন্ত তিনি এমপি কাজী নাবিল আহমেদের সাথে ছিলেন। তিনি এই নতুন বলয় গঠনের অন্যতম রূপকার।
এই জোট সম্পর্কে মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সংগঠনের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চাকে প্রাধান্য দিতেই আমরা যারা সমমনা তারা সবাই একতাবদ্ধ হচ্ছি। এটিকে যদি জোট বলেন, তবে জোট, যদি প্লাটফর্ম বলেন, তাহলে প্লাটফর্ম। মূল কথা হলো যশোর আওয়ামী লীগকে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের হাতে ফেরৎ দিতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভোটের আগে থেকেই অনেকের সাথেই আমার যোগাযোগ হয়েছে। অনেক সিনিয়র নেতাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। চারটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। ১. যারা আওয়ামী লীগকে ওন করেন, তারাই আমাদের সাথে থাকবেন। ২. কারো কোনো ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রীক এই জোট হবে না। আমরা বৃহৎ স্বার্থে জোট গঠন করবো। ৩. জেলা আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো। তার জন্য প্রয়োজনে কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং ৪. দুই লিমিটেড কোম্পানির বিপক্ষে প্রকৃত আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করা’।
সাবেক পৌর মেয়র যশোর জেলা যুবলীগ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, দু’টি হাউজ আজ ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে ঘরের মধ্যে কর্মচারী নির্ভর করে তুলেছে। আমরা সাধারণ কর্মীদের মধ্যে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে দিতে চাই। এজন্য কাজ করছি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করছি। এজন্য এ জোটকে কখনোই তৃতীয় জোট বলা যাবে না। আমরা প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি, একটা প্লাটফর্ম গড়ছি। কারণ সাধারণ আওয়ামী লীগারদের যাওয়ার কোনো যায়গা নেই।’
এখন কবে এবং কীভাবে আওয়ামী লীগের এই নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ হবে, তা দেখার অপেক্ষায় যশোরের মানুষ। গত কয়েক দিন ধরে এসব নিয়ে শহর ও গ্রামে গ্রামে আলোচনা হচ্ছে জোর। নাবিল সেন্টার ও কাঁঠাল তলা থেকে এই সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা হয়নি।