সুনামগঞ্জের চারশত পূজামন্ডপে চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী তিথি উদযাপন
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জে শারদীয় দুর্গোৎসবের ২য় দিন দেবীপক্ষের মহাঅষ্টমী তিথি উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একশো আটটা পদ্ম দিয়ে আজ পূজিত করা হয়েছে দেবী দুর্গাকে। সান্ধ্য পূজায় একশো আটটা প্রদীপ দিয়ে দেবীকে আরতি করা হয়। সন্ধাপূজা মা দুর্গার আরাধনার এক বিশেষ মুহূর্ত। সন্ধি মানে মিলন। এই মুহূর্তটি হল অষ্টমী তিথি ও নবমী তিথির মিলনের এক মহাসন্ধিক্ষণ। অষ্টমী তিথির শেষ চব্বিশ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম চব্বিশ মিনিট মিলিয়ে মোট আটচল্লিশ মিনিট। এই সন্ধিক্ষণেই দেবী জেগে উঠে উগ্রচন্ডী রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই এই সময় দেবীর বিশেষ পূজা। অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির জয়ের জন্য আরাধনা। সন্ধিপূজা হল সেই সন্ধ্যার প্রতীক যখন মা দুর্গা চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে বধ করেছিলেন। এই সময়ে মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা করা হয়। মহাভারতের রামায়ণের কাহিনী উল্লেখ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন, রাবণ বধের জন্য রাম ১০৮ পদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা করেন ও তারপর রাবণ নিধন হয়। সেই সূত্রেই এই সন্ধি পূজা করা হয়। দেবী শক্তির বন্দনা এবং অসুর বধে অশুভ খন্ডনের প্রত্যয়ে আজ শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী পালিত হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ছিল শারদীয় দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী। জেলার ৪ শত পূজামন্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মহাসপ্তমী উদযাপন করা হয়। ভক্তরা দেবীর আরাধনায় পূজামন্ডপগুলোতে দিনভর ভিড় জমান। পূজা শেষে হাতের মুঠোয় ফুল,বেলপাতা নিয়ে ভক্তরা মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে এবারের পূজার প্রথম অঞ্জলি দেন দেবীর পায়ে। করজোরে কাতর কণ্ঠে জগজ্জননীর কাছে শান্তিময় বিশে^র প্রার্থনা করেন ভক্তরা।
এর আগে মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে বুধবার শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমীতে দেবী বিসর্জনের মধ্যদিয়ে আগামী ১৩ অক্টোবর শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দিনব্যাপী সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া,সেনাবাহিনীর অধিনায়ক লে. কর্নেল নাফিজ ইমতিয়াজ (পিএসসি), মেজর রেজা, জেলা পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি,নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো.মোস্তাফিজুর রহমান ইমন,সদর মডেল থানার ওসি মো.নাজমুল হোসাইন, ওসি (তদন্ত) মো.ওয়ালী আশরাফ খান,জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন,সহ সভাপতি সেলিম উদ্দিন আহমদ,সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল,জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ তোফায়েল আহমদ খান,সাধারণ সম্পাদক মোমতাজুল হাসান আবেদ,জমিয়তুল উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক এন.ডি. উছমান গনি,সদস্য এয়াকুব আলী,সায়মন মিয়া,শফিকুল ইসলাম শফিক ও ইমনদোজ্জা আহমদ,নাঈম,নিহাল, বায়েজিদ,রুহুল,সাব্বির, মোমেনা ও তন্নিসহ জেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথকভাবে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পূজামন্ডপ পরিদর্শন ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট বিমান কান্তি রায় ও সাধারণ সম্পাদক বিমল বনিক বলেন,বরাবরের মত এবারও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দূর্গোৎসব পালন করে যাচ্ছি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আমাদের সাথে রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন,জেলায় মোট চারশত পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে সুন্দর পরিবেশে শারদীয় দূর্গোৎসব পালন করে এ জেলার সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে আরো সুদৃঢ় করতে প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।