ঢাকা, ৬ নভেম্বর, ২০২৪ (বাসস): বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি দেশের সব শক্তিকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ।
তারেক রহমান বলেন, ‘ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের অপশক্তি এখন কিন্তু আবার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানোর অপচেষ্টার লিপ্ত রয়েছে। সুতরাং ৫ আগস্টের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের সব শক্তিকে সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে।’
আজ বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ৭ নভেম্বরকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।
তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনও থেমে নেই। মাফিয়া সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সময় বিশ্বে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার অপকৌশলে লিপ্ত ছিল।
তিনি বলেন, একদিন পর এই সরকারের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হবে। এই তিন মাসে তাদের সফলতা নিয়ে আলোচনার যথেষ্ট সময় নয়।
তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেশে জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত তথা বিচারবিভাগ শক্তিশালী, স্বাধীন এবং কার্যকর থাকলে ফ্যাসিবাদ কখনও স্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। জনগণের আদালতের অর্থ কিন্তু বিচারিক আদালত কিংবা মব জাস্টিস নয়। জনগণের আদালতের অর্থ কোনো ব্যক্তি তার দলকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান, চূড়ান্ত ক্ষমতা হাতে ন্যস্ত থাকা। জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা গেলে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ কিংবা প্রসিদ্ধ করার মত অপ্রিয় কাজের দায়ভারও রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না। জনগণ নিজেরাই তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে খুনি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়ে আড়ালে থাকা মাফিয়া চক্রকে প্রত্যাখ্যান করবে। যে কোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার অবশ্যই হতে হবে রাষ্ট্রীয় আদালতে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা দলের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের ভার রাজনীতির মাঠে, অর্থাৎ জনগণের দ্বারা, জনগণের আদালতে হওয়ার সংস্কৃতি চালু করা গেলে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ধারাবাহিকতার যথানিয়মে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। সুতরাং বিএনপির সব নেতা-কর্মীদের বলতে চাই, জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে। তবে প্রত্যেক নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিজয়ের আত্মবিশ্বাস থাকা ভালো। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজেদের জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখবেন না। জনগণের কাছে পছন্দ নয়, এমন কোনো কাজ করার থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন। কারণ জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতায় উৎস।’
তিনি বলেন, জনপ্রত্যাশার বিচারে ১৯৭১ সাল, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট- প্রতিটি ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। প্রতিটি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
রাষ্ট্র মেরামতে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, সংস্কার একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। বিএনপি সংস্কার কার্যক্রমের পক্ষে। তবে বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গতানুগতিক সংস্কারের চেয়ে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে, রাজনীতি, রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মী, সমর্থকদের গুণগত পরিবর্তন, সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের দ্বারাই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপত্বিতে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ ঢাকা মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এসময় উপস্থিত ছিরেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ নভেম্বর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ইতিহাস রক্ষার ইতিহাস। বাংলাদেশের উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন ও দর্শনের মাধ্যমে স্বৈরাচার পতন ঘটিয়ে ৯০’-এ বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে গিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি কিন্তু সামনের ভবিষ্যতের দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করি। তিনি অতিদ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘৭ নভেম্বর থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের শপথ নিতে হবে দেশে কোনো আধিপত্যবাদী ফ্যাসিস্টকে ঠাঁই দেওয়া যাবে যাবেনা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৭ নভেম্বর এমন একটি দিবস যা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ গত ১৭ বছরে শেখ হাসিনার সরকার আমাদের এ দিবস পালন করতে দেয়নি।
মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের সব সংকটকালের নেতৃত্বে জিয়া পরিবার। ৯০-এর স্বৈরাচার আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া ও এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেখেছি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মানুষ কতোটা ভালোবাসেন। অথচ তখন তার কোনো রাজনৈতিক দল ছিলো না।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহি বিপ্লবের এ দিনে দেশের জনগণ জিয়াউর রহমানকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জিয়াউর রহমান দেশকে একটি সম্মানজনক ভাবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করেছিলো।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ৭ নভেম্বর দেশের পটপরিবর্তন হয়। সব পটপরিবর্তন মানুষ মনে রাখে না। ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের সব পরিবর্তন করেছেন। জনগণ জিয়াউর রহমানকে মহানায়ক বানিয়েছে। তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর এমন একটি দিন যে দিনটি দেশের মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিদায় নিয়েছে কিন্তু দেশে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফ্লিড তৈরি হয়নি। হাসিনা বলেছিলো গণতন্ত্রের উপরে উন্নয়ন। আমরা বলব- নতুন কোনো বায়না নয়, গণতন্ত্র ও দেশের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হলে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।