জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের সরকার ও সংসদ দেখতে চায় : আমীর খসরু
চট্টগ্রাম, ১৬ নভেম্বর ২০২৪ (বাসস) : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের সরকার ও তাদের সংসদ দেখতে চায়। এটা বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি এর জন্য বিগত দিনে অনেক ত্যাগ শিকার করেছে, প্রয়োজনে আরো ত্যাগ শিকার করতে আমরা রাজি আছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে যারা যখনই থামাতে গিয়েছে; তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। বিএনপিকে থামানোর চেষ্টা করবেন না। দেশের গণতন্ত্র কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কেউ বলে দিতে পারে না আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে। সিদ্ধান্ত দিবে বাংলাদেশের জনগণ। এ সিদ্ধান্ত অন্য কেউ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানে যুবদল আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে জিয়াউর রহমান ‘উই রিভোল্ট’ এর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর ঐতিহাসিক স্থান চট্টগ্রাম বিপ্লব উদ্যান থেকে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র পর্যন্ত ‘যুব পদযাত্রার’ আয়োজন করে যুবদল।
জনগণের ওপড় সিদ্ধান্ত অন্য কেউ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের ওপড় সিদ্ধান্ত অনেকে অনেকবার চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবও চেষ্টা করেছিলেন, তিনি কি সফল হয়েছেন ? এরপর এরশাদ চেষ্টা করেছিল, শেখ হাসিনা চেয়েছিল; তারা কি পেরেছে ? তাই সেদিকে না গিয়ে বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত তাদের দিতে দেন।’
তিনি বলেন, আমরা ৩১ দফা ঘোষণা করেছি। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে নিয়ে এটার বাস্তবায়ন করা হবে। ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার হতে হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া, কেউ বসে এটা করতে পারবে না। আগামী দিনে এসব বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতির জনক বলতে যা বোঝায় এগুলো এক ব্যক্তির নয়, এগুলোর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেকের ভূমিকা আছে। সবাইকে স্বীকৃতি দিতে হবে। সকলকে স্বীকৃতি দিয়ে আমেরিকা সবাইকে সম্মান দিয়েছে। গুম, খুন হত্যা মামলা নিপীড়ন, আইনের শাসন কেড়ে নেওয়া হয়েছে এক ব্যক্তির নাম দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বা কোনো ব্যক্তিকে মূলধন বানিয়ে কোনো খারাপ কাজ করে টিকে থাকতে পারে না। এটা বাংলাদেশে প্রমাণ হয়েছে। সেই শহীদ জিয়াউর রহমান; যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল করেছিলেন। এটার মূল ভিত্তি ছিল- বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, অর্থনৈতিক মুক্তি, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, এখানে জনগণ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এজন্য শহীদ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আজকেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ দলকে ধ্বংস করার জন্য এমন কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। আমাদের নেতাকর্মীরা চাকরি হারিয়েছে, বাড়িতে থাকতে পারেনি, পালিয়ে থাকতে হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর মিথ্যা মামলায় জেল কেটেছে।’
কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, চট্টগ্রাম নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম লিটন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ মুন্না।
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস যথাযোগ্য মহিমায় পালন এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর অবদান নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে, ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আজ শনিবার চট্টগ্রামে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।
দিনের শুরুতে সকাল আটটায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাঙ্গুনিয়াস্থ প্রথম সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় মেজর জিয়াউর রহমানের ‘স্বাধীনতার দর্শন ও আদর্শের আলোকে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে। দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর শাহাদাত বরণের বেদনা সিক্ত স্মারক ‘শহীদ জিয়া স্মৃতি যাদুঘর-এ এতিম শিশুদের অংশগ্রহণে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২টায় বিপ্লব উদ্যানে রং তুলিতে আঁকা স্বাধীনতার ঘোষণার চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। এরপর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিপ্লব উদ্যানে সমাবেশ এবং শেষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র অভিমুখে ‘যুব পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়।