শীর্ষ নিউজ

পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের অনাস্থাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা (৫৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় সুনামগঞ্জের পুরাতন জেলরোডস্থ নৌকাঘাট থেকে সদর মডেল থানার এসআই আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানায়,উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত মোশাররফ হোসেন তালুকদার ওরফে ময়না মিয়ার পুত্র আমির হোসেন রেজা গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টায় তার পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান খুরশিদ মিয়ার উপর হামলা ও লূটতরাজের ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা নং ৯ (জিআর ৩৭১/২৪) ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩৪১/৩৮৫/৩০৭/৩২৩/৩২৫/৩৭৯/৫০৬/৩৪ দ:বি: তাং ২১/১১/২৪ইং এর প্রধান আসামী হিসেবে পলাতক ছিলেন।
সম্প্রতি অনাস্থাপ্রাপ্ত এই চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গার মাটি রাতের আধারে চুরি করে অন্যত্রে বিক্রি করত: সরকারের সম্পত্তির অপূরনীয় ক্ষতিসাধনের ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা মোঃ নুর আলী বাদী হয়ে জিআর মামলা নং ৪৭/২০২৪ইং (সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলা নং ২০ তাং ১৫/০২/২০২৪ইং) দায়ের করেছেন। সদর কোর্টের উক্ত মামলায় সদর মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) রিয়াজ উদ্দিন কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নং ৮৭ তাং ৩১/০৩/২০২৪ইং ধারা ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ইং এর ১২ ও ১৩ ধারা,বিজ্ঞ আদালত গ্রহন করে ঐ মামলাটিকে বিচারের জন্য বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে প্রেরণ করেন। উক্ত মামলায় সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গা হতে ৫ লক্ষ ঘনফুট মাটি কেটে নেয়ার ঘটনায় ঐ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত ২২/০৮/২০২৪ইং জেলা প্রশাসক বরাবরে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়েরকৃত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত দাসের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পত্তির ৫ লাখ ঘনফুট মাটির মূল্য ১ কোটি টাকার দ্বিগুন মূল্য ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরন আদায়সহ,স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন,২০০৯ইং এর ৩৪ ধারার (১) ও (৪ খ) উপধারায় বর্ণিত অপরাধ সংগঠনের দায়ে তাকে চেয়ারম্যানের পদ হতে বরাখাস্ত করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ জুলাই পরিষদের ১১ জন সদস্য সদস্যা নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন।

ইব্রাহিমপুর গ্রামবাসী জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন রেজাকে গত সোমবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক,এসআই মহিন উদ্দিন ও এসআই উজ্জল মিয়ার নেতৃত্বে একদল পুলিশ শহরের উকিলপাড়াস্থ রেজা ম্যানশন মার্কেট থেকে তাকে আটক করেন। সুনামগঞ্জ সদর থানার মামলা নং ১৮ (জিআর ১৬৯/২০০৬ইং) তাং ১৯/০৭/২০০৬ইং ধারা ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/৩৭৯/৪২৭/৩০৭/৫০৬/৩৪ দ:বি: আইনের মামলায় এজাহারভূক্ত প্রধান আসামী ছিলেন তিনি।
এছাড়া গ্রামের নিরীহ নাগরিক আশিক মিয়াকে মারপিট করিলে উক্ত আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে আমল
গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সদর জোনে সিআর-২২৪/২০২৪ নং মামলা দায়ের হয়। উক্ত মামলায়
তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। গত ২/৬/২০২৪ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালত প্রেরিত গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট সদর মডেল থানায় থাকার পরও তাকে গ্রেফতার না করায় ঐ মামলার পলাতক আসামী হওয়া স্বত্তেও বাদীর সাথে আপোস নিস্পত্তি করে গ্রেফতার অভিযান হতে আর্থিক দাপট ও দলীয় প্রভাবে আত্মরক্ষা করেন। আইনের কাছে পলাতক থাকাবস্থায় তিনি গত সরকারের মন্ত্রীর সাথে ত্রাণ বিতরন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ফটোসেশন করেন।

আমির হোসেন রেজা ইতিপূর্বে সুনামগঞ্জ মহকুমা যুবলীগের সভাপতি,পরবর্তীতে সুনামগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮/০৩/১৯৯৭ইং তারিখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তৎকালীন মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গঠিত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটির ৩১ নং কার্যকরী সদস্য ছিলেন তিনি।

একজন অতি সুবিধাভোগী প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে উক্ত আমির হোসেন রেজা ও তার সহযোগী
সঞ্জয় পালগং,গত ৪ আগস্ট ২০২৪ইং রবিবার সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাস স্টেশনে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে
নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি দলীয় বহু নেতাকর্মীর উপর হামলা করে তাদেরকে জখম ও জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনায় স্বশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফিরোজ মিয়ার দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

পরিষদের সকল সদস্য ও এলাকার কৃষকদেরকে বাদ দিয়ে উক্ত চেয়ারম্যান তার ভাই ভাতিজার দ্বারা বাপপুতের পিআইসি গঠন করে গত ৩ বছরে অপ্রয়োজনীয় পিআইসির নামে বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় শিললুয়ার হাওরে দায়সারাভাবে কাজ করে সরকারী বরাদ্দের মোটা অংকের টাকা পকেটস্থ করেছেন বলেও প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে দায়েরকৃত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের শিললুয়ার হাওরে ২০২০-২০২১ইং অর্থ বছরে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ নির্ধারন করে ২৬ ও ০১ নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি), ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০.০৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ নির্ধারন করে ৪১ নং পিআইসি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩,৭২,০৭৩ টাকা বরাদ্দ নির্ধারন করে ০৪ নং পিআইসি গঠন ও বাস্তবায়ন দেখিয়ে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজাগং পরস্পর যোগসাজসে ও একে অন্যের সহায়তায় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের টাকা অন্যায়ভাবে অপচয় ও বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনামুর রহিম বাবর বলেন,আমার কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। অল্পকিছু দিনের মধ্যেই আমি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতিশ দর্শী চাকমা বলেন,চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আমি উপজেলা প্রকৌশলী ও শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া শিললুয়ার হাওরে সরজমিনে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় পিআইসির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।

সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন,আমরা একাধিক মামলার আসামী হিসেবে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজাকে গ্রেফতার করেছি। তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button