সরকার সিঙ্গেল রেট ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করবে : এনবিআর চেয়ারম্যান
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো, আবদুর রহমান খান আজ বলেছেন, রাজস্ব আদায়ে ফাঁকি রোধে সরকার দেশে সিঙ্গেল রেটে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন,‘আমাদের জন্য আরও ভাল হবে যদি আমরা রাজস্ব সংগ্রহের ফাঁকি কমাতে একক হারে ভ্যাট নিতে পারি এবং এটি পরিচালনা করাও খুব সহজ হবে। অবশ্যই আমরা এটির জন্য চেষ্টা করব।’ রাজধানীর এনবিআর সম্মেলন কক্ষে ‘ভ্যাট দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজস্ব বোর্ডের প্রধান আজ এ কথা বলেন।
এবারের ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ ভ্যাট দেব জনে জনে, অংশ নেব উন্নয়নে’।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট আদায়ের উন্নতি কল্পে এনবিআর ধীরে ধীরে ভ্যাট অব্যাহতি বাতিলের চেষ্টা করবে। তবে তিনি বলেন,‘কিন্তু, তার মানে এই নয় যে, এটি এখনই করতে হবে। আমরা স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে এটি করব।’ এনবিআর ভ্যাট নেটের তদারকি করবে এবং
বর্তমানে যারা ভ্যাট নেটের বাইরে রয়েছে তাদেরও আনবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে আমাদের ট্যাক্স নেট সম্প্রসারণ করতে হবে। ভ্যাট নেট প্রসারিত করতে পারলে, আমরা চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাজস্ব সংগ্রহের ব্যবধান কমাতে সক্ষম হব।’
আবদুর রহমান খান বলেন, ‘দেশ কঠিন অর্থনৈতিক সময় পার করছে। আমরা আমাদের দেশকে এ অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করতে চাইলে এবং এভাবে আরও এগিয়ে যেতে চাইলে, আমাদের অন্য কোন বিকল্প নেই।’ ভ্যাট কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রহমান বলেন, গণমানুষের কল্যাণের স্বার্থে সরকার বিভিন্ন ধরনের কর মওকুফ করেছে। এর ফলে গত কয়েক মাসে রাজস্ব আদায়ে ক্ষতি হয়েছে। সুতরাং কর মওকুফ কমানোর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হয়। আমরা সেই দিকেই এগোচ্ছি। আমরা কর মওকুফের যৌক্তিকতা দেখবো, আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই আমরা কিছু এসআরও বাতিল করেছি এবং আরও কিছু পাইপলাইনে রয়েছে।’
কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘অন্যথায় আমরা আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে পারবো না।’
এনবিআর চেয়ারম্যান তার সূচনা বক্তব্যে আরও বলেন, ভ্যাট ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অনলাইনে এবং ঘরে বসেই সকল ভ্যাট সেবা প্রদানের জন্য একটি শক্তিশালী ভ্যাট ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনবিআর ধীরে ধীরে কাগজের পদ্ধতি থেকে অনলাইন পদ্ধতি গ্রহণ করছে। ভ্যাট নিবন্ধন, ফাইলিং এবং ভ্যাট প্রদানের পদ্ধতি সহজীকরণের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডারদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং কাজের সকল পর্যায়ে অটোমেশন চালু করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভ্যাট নিবন্ধন, ফাইলিং এবং ভ্যাট পরিশোধের ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে। তিনি জানান,‘আমরা বর্তমানে একটি নির্ভুল ভ্যাট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ই-ইনভয়েস সিস্টেম চালুর চেষ্টা করছি।’
মো.আবদুর রহমান খান, যিনি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগেরও (আইআরডি) সচিব বলেন, সাধারণ ভোক্তাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরণের ছাড় দেয়া, বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর ভ্যাট হার হ্রাসসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে চিনি, ডিম, আলু ও ভোজ্যতেল এবং হজের যাত্রীদের টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এনবিআর দেশের সর্বস্তরের ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের সম্পৃক্ত করে সময়োপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে একটি ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং একটি শক্তিশালী কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এবং সর্বোপরি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন,‘ভ্যাট ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে স্টেকহোল্ডারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ওপর। আশা করছি, এ সকল প্রচারমূলক কার্যক্রম দেশে একটি কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতে যথেষ্ট সহায়ক হবে, যা ভবিষ্যতে ভ্যাট সংগ্রহ বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখবে। এর ধারাবাহিকতায় কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধিত হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা একটি সুখী, সুন্দর এবং সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হব।’