অর্থ ও বাণিজ্যবিনোদন

খাগড়াছড়িতে মহিষের শিং থেকে বানানো হচ্ছে বাহারি গহনা

খাগড়াছড়ি, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় মহিষের শিং থেকে বানানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গহনা। পাহাড়ি নারীদের কাছে এসব গহনা ব্যাপক কদর রয়েছে। হস্ত চালিত যন্ত্রে বানানো হচ্ছে এ সব বাহারি গহনা।

তবে মহিষের শিং সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্প। সনাতনী পদ্ধতিতে  শিং থেকে হস্তচালিত কাঠের যন্ত্র দিয়ে তৈরি করা হয় হাতের চুড়ি, আংটি, কানের দুল ও গলার চন্দ্রহার। কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে সংগ্রহ করা হয় মহিষের বড় শিং। এসব শিং কেটে বানানো হয় গহনা। মহিষের শিংয়ের গহনা পাহাড়ির ঐতিহ্যের ধারক।  নারীদের কাছে এসব গহনার কদর বেশি।

দীঘিনালা উপজেলার ৪নং ইউনিয়নের একটি পুরাতন গ্রামের নাম নন্দেজশ্বর কারবারী পাড়া। এ গ্রামে প্রায় অর্ধশত বছর আগে থেকে হাতির দাঁত থেকে নারীদের হাতের বালা, কানের দুল, আংটি, নেকলেসসহ নানা ধরনের অলংকার  বানানো হতো। তবে কালের বিবর্তনে হাতির দাত দুর্লভ হওয়ার কারণে এখন এ গ্রামে মহিষের শিং থেকে এ অলংকারগুলো বানানো হয়। তবে এ অলংকারগুলো তারা কোন বাজারে গিয়ে বিক্রি করেন না। কেউ অর্ডার দিলে তারা তা বানিয়ে দেন। প্রতি জোড়া হাতের বালা ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি করেন। একটি আংটি ও কানের দুল ৩শ থেকে ৪ শ টাকায় বিক্রি করা হয়।

এ গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি পূর্ণ বিকাশ চাকমা বলেন তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে এ কাজ করছেন। তিনি মূলত তার দাদু ও বাবার কাজ থেকে এ কাজটা শিখেছেন এবং এ ঐতিহ্যবাহী কাজটা ধরে রেখেছেন। যতদিন পারবেন তিনি এ কাজটা করবেন। তার ছেলে পিন্টু চাকমা স্নাতক পাস করে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন । তিনিও এ কাজটা করতে পারেন। তিনি তার বাবা পূর্ণ বিকাশ চাকমার কাছ থেকে কাজ  শিখেছেন। ছুটিতে বাড়ি এলে তিনি তার বাবাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন।

একই পাড়ার রিপন জ্যোতি চাকমা, দিপ্তী লিকা চাকমা ও মিসেল চাকমা বলেন তারা এ অলংকার বানিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তবে তারা এ কাজের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ পাড়ায় ৬টি পরিবার এ অলংকার তৈরি করে সংসার চালায়।

নন্দেজশ্বর কারবারী পাড়ার কৃষ্ণ রঞ্জন চাকমা, বলেন এ হস্ত শিল্পীরা সম্পূর্ণ হাত দিয়ে এ অলংকার গুলো তৈরি করে। যদি এ অলংকারগুলো বানানোর যন্ত্রপাতি কিনতে পারতো তা হলে আরো ভালো করে তা তৈরি করতে পারতো।

অনেকে দূরদূরান্ত থেকে লোক জন আসেন গহনা কিনতে। বিশেষত, গ্রামের নারীরা এ গহনার মূল ক্রেতা ।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে গহনা কিনতে আসা স্কুল শিক্ষক বিজয়া খীসা জানান গ্রামের নারীদের কাছে শুনে দেখতে আসলাম। এ শিংয়ের গহনা আমার পছন্দ। এখানে এসে এক জোড়া হাতের চুড়ি ও কানের দুল অর্ডার করেছি। দামও সাশ্রয়ী।এসব গহনা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। শিং থেকে প্রস্তুতকৃত গহনা আমাদের চাকমা সম্প্রদায়ের নারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক। মহিষের শিং ও হাতির দাঁতের তৈরি গহনা তরুণী থেকে শুরু করে বয়ষ্ক নারীরা এ গহনা পড়তে পছন্দ করে । বর্তমানে মহিষের শিং ও হাতির দাঁতের তৈরি গহনা পাওয়া যায় না বললেই চলে । কয়েকজন গহনা শিল্পী আছেন যারা এখনো কষ্ট করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ।

গহনা শিল্পী পূর্ণ বিকাশ চাকমা জানান ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশায় আছি। চুড়ি, আন্টি, কানের দুল, চন্দ্রহারসহ বিভিন্ন গহনা বানানো হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে মহিলারা মহিষের শিংয়ের গহনার অর্ডার দেয়। তবে কাঁচামালের সংকটের কারণে চাহিদামত গহনা বানাতে পারি না। শিং থেকে গহনা বানানো খুবই কষ্টসাধ্য। ঐতিহ্য সুরক্ষায় বংশ পরম্পরায় এ শিল্প ধরে রেখেছি। একজোড়া চুড়ি বানাতে দুই ঘন্টা সময় লাগে। তবে কাঁচামাল সংকটের কারণে বিলুপ্তির পথে মহিষের শিংয়ের গহনা।

দীঘিনালা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মামুন উর রশিদ বলেন মহিষের শিং থেকে যে অর্নামেন্ট তৈরি করে এটা ব্যতিক্রমী ও সুন্দর একটা উদ্যোগ,  এটা মানুষ পছন্দ করে। এটি একটি হস্ত শিল্প । তারা যদি কোন সহযোগিতা চায় তা হলে উপজেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হবে। যাতে তারা তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে।

এদিকে এলাকাবাসী এ শিল্পকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য সরকার সহযোগিতা কামনা করেন । তারা প্রত্যাশা করেন মহিষের শিং থেকে তৈরিকৃত গহনার ঐতিহ্য আবারো ফিরে আসবে পার্বত্য এ জেলায়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button