আঞ্চলিকশীর্ষ নিউজ

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ফ্লোরে ও বারান্দায় ঠাঁই হচ্ছে রোগীদের

 

 জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): শীতে লক্ষ্মীপুরে বেড়েছে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ারসহ শীতজনিত রোগ । ১০০ শয্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় ফ্লোরে ও বারান্দায় ঠাঁই হচ্ছে এসব রোগীদের। এক বেডে ভর্তি  হচ্ছে চার শিশু। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে শিশুসহ সব বয়সী রোগী ও স্বজনরা। প্রতিদিনিই গড়ে ৭০/৮০ রোগী শুধু সদর হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। একই অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০ শয্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল। এ হাসপাতালে প্রতিদিনই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা। গড়ে ৩৫/৪০ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে শুধু এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৬০০ এর বেশি রোগী। গড়ে প্রতিদিন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া ওয়ার্ডে ৭০/৮০ রোগী। এসব রোগীসহ প্রতিদিন তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। অথচ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ১৫টি। যেখানে প্রতি বেডে এক শিশু চিকিৎসা নেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রতি বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ৩/৪ শিশু।

এছাড়া মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনিসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের চিত্র একই। বেড সংকুলন না হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় বা ফ্লোরে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। হাসপাতালের বেডের তুলনায় ৬ গুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। এতে করে অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা। একই অবস্থায় কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর চিত্র। সদর হাসপাতালের পাশাপাশি প্রত্যেকটি উপজেলায় বেড়েছে রোগীর চাপ।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, যতই শীত বাড়ছে,ততই ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সে অনুপাতে বেড নাই। নাই চিকিৎসক ও নার্সও। এ শীতের মধ্যে বারান্দায় বা ফ্লোরে থেকে ছোট-ছোট শিশুদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে করে রোগীর  সঙ্গে স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়া হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থা এতই খারাপ- সেটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

জেলা প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেরুল হাসান রাজু বলেন, প্রতিদিনই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতি বেডে এক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও বেড না থাকায় দুই/তিন শিশুকে এক বেডে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালে হাঁটা চলা যায় না। বারান্দায় ও শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে শিশুদের রাখা হচ্ছে। দ্রুত জনবল নিয়োগ ও ২৫০ শয্যা হাসপাতালটি চালু করার দাবি জানান তিনি।

হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি। বেডের তুলনায় রোগী ভর্তি রয়েছে ১০ গুণের বেশি। একদিকে তীব্র শীত। অন্যদিকে বেড না থাকায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে শিশুরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালের টয়লেট ও আশপাশের জায়গায় নোংরা পরিবেশ থাকায় ঠিকমত থাকা যাচ্ছে না। দ্রুত এসব বিষয় সমাধান করার দাবি জানান স্বজনরা।

সদর হাসপাতালের শিশু কনস্যালটেন্ট ডা. মো. ইছমাইল হাসান বলেন, ঠাণ্ডাজনিত কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি সামনে আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তারপরও চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সাধ্যমতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

 আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময়ে শিশুদের গরম কাপড় পরিধানসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অরুপ পাল বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। তারপরও চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সাধ্যমতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী ভর্তি রয়েছে ৩০০ জন। এছাড়া শীতজনিত রোগে প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০ রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ডায়রিয়া নিউমোনিয়া ও জ্বরসর্দি কাশি নিয়ে এক সপ্তাহে ৬০০ এর বেশির রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় বলে জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button