বিশেষ খবরবিশ্ব

তুরস্কের সহায়তা বাংলাদেশের উন্নয়নে গতি সঞ্চার করেছে

ঢাকা, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : তুরস্কের রাষ্ট্র-পরিচালিত সাহায্য সংস্থা টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সি (টিকা) ২০২৪ জুড়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি রূপান্তরমূলক ভূমিকা রেখেছে।

‘টিকা’র ঢাকা প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সেভকি মের্ত বারিস আজ বাসসকে বলেন ‘২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর বছর।  গ্রীষ্মের শুরুতে কোটার প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন এক বিপ্লবের দিকে মোড় নেওয়ার মধ্য দিয়ে এ বছর দেশটি একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। আগস্টে একটি প্রলংয়করী বন্যা ৫০ লক্ষাধিক লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে ‘টিকা’ বিভিন্ন চাহিদা সম্বলিত প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে জরুরি চাহিদা মোকাবেলায় কাজ করেছে।

বারিস বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও মানবিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘টিকা’ কেবল আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিই নয়, বরং তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।

–    ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষার অগ্রগতি –

‘টিকা’ ফেনীতে আতাতুর্ক মডেল হাই স্কুলের সংস্কারের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশযোগ্যতা সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে।

১৯৩৯ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নামে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি সংস্কার করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

‘টিকা’ কক্সবাজারে ক্রমবর্ধমান ও সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কক্সবাজার সিটি কলেজে একটি প্রশিক্ষণ কিচেন ও একটি কমন স্পেস চালু করেছে।

এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো- এই বর্ধমান খাতে ১২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলা। এছাড়া সংস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে স্কুল বাস চালু করেছে।

–    স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা –

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অবদান রাখার জন্য সংস্থা ঢাকা শিশু (শিশু) হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগের আধুনিকায়ন করেছে, যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১,৫০০ শিশুর চিকিৎসা করা হয়।

শরীয়তপুর ও রাঙ্গামাটিতে দুটি নতুন বি শ্রেণির স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে, এবং ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যা-কবলিত এলাকায় সেবায় নিয়োজিত মোবাইল ক্লিনিকগুলো শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ ১০ হাজার মানুষকে চিকিৎসা প্রদান করেছে।

এছাড়া ‘টিকা’ অভ্যন্তরীণ ওষুধ এবং দাঁতের সেবায় জোর দিয়ে কক্সবাজারে প্রায় ২,০০০ রোহিঙ্গা রোগীকে বিশেষ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড গাইডেন্স (বিআইএসইজি)’র সাথে অংশীদারিত্ব করেছে।

–    জলবায়ু-বান্ধব কৃষির প্রচার –

‘টিকা’ খুলনার জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ কয়রা অঞ্চলে ২০ জন নারী ও যুবককে চটের বস্তায় বাগান এবং উলম্ব চাষাবাদের মতো স্মার্ট চাষাবাদ কৌশল প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

‘জলবায়ু-বান্ধব কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্প’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮০ জন নারী কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা এলাকাটিকে টেকসই কৃষির একটি মডেল গ্রামে রূপান্তরিত করেছে।

এছাড়া, ‘টিকা’ গবেষণার সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ডে একটি আণবিক জীববিজ্ঞান পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করে কৃষি উদ্ভাবনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে।

–    সংকটকালে মানবিক সহায়তা –

টিকা আগস্টে ভয়াবহ বন্যার সময়, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে ৩,০০০ পরিবারকে খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং স্বাস্থ্য সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। সংস্থার ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকগুলো বন্যা দুর্গতদের গুরুতর চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে।

টিকা রমজান মাসে নিম্ন আয়ের পরিবার, এতিম ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২,৫০০ প্যাক খাদ্য বিতরণ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিয়েছে। এবং কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে ১,০০০ পরিবারকে দৈনিক গরম ইফতার পরিবেশন করেছে।

‘টিকা’ পাবনায় ১০০ জন গ্রামীণ নারীকে তাদের আয়ের উৎস সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সক্ষম করে তুলতে ৫০টি সেলাই মেশিন এবং ৫০টি দুধেল গাভী প্রদান করেছে।

–    রোহিঙ্গাদের সহায়তা –

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘টিকা’র উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- ক্যাম্পের ৫ নম্বর সেক্টরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত খেলার মাঠ সংস্কার এবং ১৬ নং ক্যাম্পে একটি বহুমুখী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।

সংস্থাটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি গ্রন্থাগারের পাশাপাশি বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, ইলেকট্রনিক্স এবং সেলাই কাজের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।

মনোবল বাড়ানোর প্রয়াসে টিকা আরাকান ফুটবল লীগ উদ্বোধনে সহায়তা করেছে, যা ২০হাজার দর্শককে আকর্ষণ করেছে এবং উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৌহার্দ্যরে মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে।

–    ভাসান চরে উন্নয়ন –

‘টিকা’ ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তরিত ৩৪,০০০ রোহিঙ্গা বাসিন্দার জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবার দ্রুত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি সামুদ্রিক অ্যাম্বুলেন্স চালু করেছে।

এখানকার মূল প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- খাদ্য নিরাপত্তা উন্নয়নে একটি গবাদি পশুর শস্যাগার, হাঁস-মুরগির খামার, এবং সবজি বাগান এবং দ্বীপের শিশুদের জন্য একটি খেলার মাঠ প্রকল্প।

‘টিকা’ ভাসান চরে শিশু মৃত্যু রোধে পুকুরের চারপাশে বেড়া দেওয়ার মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন করেছে।

–    তুর্কি-বাংলাদেশ সম্পর্ক গভীর হচ্ছে

টিকা ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে ৬০ টিরও বেশি দেশে অফিস নিয়ে কাজ করছে।

এখানে ‘টিকা’র কর্মকর্তারা বলেন, সংস্খার বহুমুখী প্রকল্পগুলো টেকসই উন্নয়ন উৎসাহিত করতে এবং বাংলাদেশের সাথে তার অংশীদারিত্ব জোরদার করতে তুরস্কের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলন।

তারা বলেন, সংস্থার কাজ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ওপর  গুরুত্ব আরোপ করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button