চট্টগ্রামশীর্ষ নিউজ

চুয়েটে দুই ছাত্রকে নি*র্যাতন: সাত বছর পর ছাত্রলীগের ৬ জনের নামে মামলা

 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে বাকের ও শাখাওয়াত তাকে শিবিরের নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানানোর কারণে ১৯ মে দিবাগত রাত একটায় ওই দুজন আরও ১০ থেকে ১৫ ব্যক্তিকে নিয়ে আবাসিক হলে তার কক্ষ ভাঙচুর করে সব শিক্ষাসনদ নিয়ে যান। সনদ ফেরত পেতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মিটমাট করতে বলেন।

প্রায় সাত বছর আগে চাঁদার জন্য দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি–সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ছয়জন এবং অপর মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয় ১০ থেকে ১৫ জনকে।

গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা ইয়াছমিনের আদালতে মামলা দুটি করেন জামিল আহসান ও মাহমুদুল ইসলাম নামের প্রাক্তন দুই শিক্ষার্থী। জামিল ও মাহমুদুল ইসলাম উভয়ই চুয়েটের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মাহমুদুল ইসলামের করা মামলায় তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকের, সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক অতনু মুখার্জি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিলয় দের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। জামিল আহসানের করা মামলায় এ চারজনের পাশাপাশি সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান ও ফখরুল ইসলাম ফাহাদের নাম উল্লেখ করা হয়।

মাহমুদুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে বাকের ও শাখাওয়াত তাকে শিবিরের নেতা আখ্যা দিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে অসম্মতি জানানোর কারণে ১৯ মে দিবাগত রাত একটায় ওই দুজন আরও ১০ থেকে ১৫ ব্যক্তিকে নিয়ে আবাসিক হলে তার কক্ষ ভাঙচুর করে সব শিক্ষাসনদ নিয়ে যান। সনদ ফেরত পেতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মিটমাট করতে বলেন। পরে তৎকালীন ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী কথা বলতে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাকে মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায়ে তার বাবাকে ফোন করেন তারা। ফোনে তার কান্নার শব্দ শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দ্রুত পরিশোধ করতে বলা হয়। তখন জীবন বাঁচাতে এক সপ্তাহের মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করবেন জানিয়ে ছাড়া পান মাহমুদুল। টাকা দিতে না পারায় মারধরের ভয়ে তিনি আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেননি। স্নাতক শেষ না করেই তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হয়।

অপর মামলায় জামিল আহসান অভিযোগ করেন, তার কাছেও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তখনকার চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি বাকের ও সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত। তবে এত টাকা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। তখন পরীক্ষা শেষ করা মাত্র তাকে তুলে নিয়ে ছাত্র সংসদে আটকে রেখে লোহার রড, হকিস্টিক ও স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়। পিটুনির এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর পানি দিয়ে আবারও মারধর করা হয়েছে। পরে তার সামনে ছুরি রেখে ছবি তুলে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে রাউজান থানায় সোপর্দ করেন ছাত্রলীগ নেতারা। ওই মামলায় তিনি তিন মাস কারাভোগ করেছেন।

জামিল আহসান বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনের বিষয়ে তখন প্রশাসন অবগত থাকলেও কেউ আমার পাশে দাঁড়ায়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় এত দিন মামলা করতে পারিনি। আমার সঙ্গে হওয়া জুলুমের ন্যায়বিচার পেতে তাই এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ দুটি মামলারই আইনজীবী ইমরানুল হক। তিনি বলেন, আদালত মামলা দুটি গ্রহণ করেছেন। রাউজান থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button