
২৩ মার্চ ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০৪ কিলোমিটার অংশ কুমিল্লায়। দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা থেকে চৌদ্দগ্রামে আমজাদের বাজার পর্যন্ত এই অংশে ব্যস্ততম বাইপাস, চৌমুহনী বাজার এবং বাস স্টপেজগুলোতে ঈদের আগে বেশি বেশি যানবাহনের জটলা তৈরী হয়।
যানজট ভোগান্তির হটস্পট হিসেবে এই মহাসড়কের ১২ টি স্পটকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন চালক ও যাত্রীরা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ঈদের আগে এসব স্পটে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে যানজট ও ভোগান্তি ছাড়াই এবার নির্বিঘ্নে ঈদ যাত্রা করতে পারবে ঈদ যাত্রীরা।
এ মহাসড়কের হটস্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে, দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, বলদা খাল, গোমতি মেঘনা সেতুর টোল পয়েন্ট, শহীদ নগর, চান্দিনা উপজেলার মাদাইয়া বাজার ও চান্দিনা বাগুর বাসস্ট্যান্ড। বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার, আদর্শ সদর উপজেলার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট মোড় ও আলেখারচর। সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, সুয়াগাজী বাজার ও কোটবাড়ি ইউটার্ন। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম বাজার, চিওড়া বাজার, মিয়াবাজার ও বাবুর্চি বাজার। এছাড়া হটস্পট হিসেবে রয়েছে কুমিল্লা সিলেট হাইওয়ের কংশনগর বাজার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বাজারের অবৈধ স্থাপনার কারণে যানবাহনের ধীরগতি সৃষ্টি হতো। গতকাল শনিবার মহাসড়ক লাগোয়া এ বাজার থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে শত শত দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বৃহস্পতিবার মহাসড়কের সুয়াগাজী বাজারের এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর আগে উচ্ছেদ অভিযান হয় মহাসড়কের নিমসার বাজার এলাকায়। ফলে এসব বাজার এলাকা দিয়ে যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারছে। এছাড়া মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ ও গৌরীপুর বাজার এলাকায় যানবাহন স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া মাদাইয়া বাজার ও চান্দিনা বাগুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত জনবল।
জানা গেছে, মহসড়কে অবৈধ থ্রি হুইলার চলাচল, উল্টা পথে যান চলাচল, অবৈধ পার্কিং ও অবাধে যাত্রী ওঠানামা, সিএনজি স্ট্যান্ড, স্থানীয় গাড়ী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা এবং টোলপ্লাজায় ধীরগতির কারণে এসব প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ।
ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বাহার মজুমদার বাসসকে বলেন, নিমসার এলাকাকে যানজটমুক্ত রাখতে মহাসড়ক অবৈধ দোকানপাটমুক্ত রাখতে হবে। এ বাজারে কিছুদিন আগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঈদের আগে আমরা এই বিষয়ে আরো জোর দিচ্ছি।
এদিকে রাতে মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই আতংক যাত্রী ও চালকদের পিছু ছাড়ছে না। এ নিয়ে পুলিশের অভিযানে বেশ কয়েকজন ডাকাত গ্রেপ্তার হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাড়তি তদারকি করছে বলে জানা যায়।
ঢাকা-কুমিল্লা রুটে চলাচলকারী এশিয়া লাইন পরিবহনের বাস চালক মোঃ হাসান বলেন, ঈদের আগে সব সময় টোলপ্লাজায় যানজট থাকে। এছাড়া এলামেলো গাড়ি পার্কিং ও উল্টো পথে চলাচল করে জটলা তৈরী করে। ঈদে মহাসড়কে গাড়ীর চাপ কয়েকগুন বেড়ে যায়। ফলে কোন একটি গাড়ি এক মিনিটের জন্য থামলে পিছনে অনেক গাড়ি মুহুর্তেই আটকা পড়ে। সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
নিমসার এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাতে বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে সবজি আসে। এগুলো ঠিকঠাক মত পার্কিং না করলেই সড়কে জটলা তৈরী হয়। তাই পুলিশ ও বাজার কমিটিকে এ বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কাশেদুল হক চৌধুরী বাসসকে বলেন, মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়ায় তিন চাকার যানবাহনগুলো। সড়কের ওপরে তিনচাকার বাহনগুলোর স্ট্যান্ড। যা বড় ও দ্রুত যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া মহাসড়কের পাশে কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার বা মেরামত কাজ চলছে। ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত যানজট কমাতে আপাতত এসব কাজ বন্ধ রাখা যেতে পারে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ঈদ উপলক্ষে সড়কের যাত্রী সাধারণের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। সড়ক নিরাপত্তা কমিটির সভায় ঈদ যাত্রায় যেন কুমিল্লা জেলার কোন মহাসড়কে ভোগান্তি সৃষ্টি না হয় সে জন্য সকলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদ-উল- ফিতর উপলক্ষে ২৭ মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সড়ক মনিটরিংয়ে বিশেষ জোর দেয়া হবে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলম বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়ক নিরাপদ ও যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সকল দপ্তরকে নিয়ে সমন্বয় সভা করছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যে ১২টি পয়েন্ট হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সেগুলোতে আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তবে এখনও মহাসড়কে কোথাও কোন যানজট তৈরী হয়নি। আশা করি কোন যানজটের ভোগান্তি তৈরী হবে না।
তিনি বলেন, আমরা এখন আমাদের জনবলের বেশিরভাগ অংশই রাতে মহাসড়কের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করেছি। যাতে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ অন্যরা নিরাপদে রাতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। পরে ঈদ ঘনিয়ে আসলে দিন ও রাতে সমান জনবল নিয়োজিত করবো। আমরা ইতিমধ্যে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় মালামাল উদ্ধারসহ বেশ কয়েকজন ডাকাত গ্রেপ্তার করেছি।
এদিকে ঈদযাত্রা ভোগান্তিমুক্ত, যানজটমুক্ত এবং নির্বিঘ্ন রাখতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ১০৫ কিলোমিটার এলাকায় নিয়োজিত থাকবে স্বেচ্ছাসেবী, ছাত্র প্রতিনিধি, কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য ও রোভার স্কাউট সদস্যরা।