অর্থ ও বাণিজ্যশীর্ষ নিউজ

সম্রাটের ওজন ৪০ মণ, দাম ১৫ লাখ টাকা

 

২০২৫ (বাসস) : জেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড় গরু সম্রাটের ওজন ৪০ মণ। আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য এ গরুর দাম ধরা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার জোত সাতনালা গ্রামের মো. আনিসুর রহমান (৪০) ৪ বছর ৮ মাস ধরে একে লালনপালন করে বড় করেছেন। আদর করে নাম রেখেছেন সম্রাট। তার ইচ্ছে আসন্ন ঈদে এ গরু বিক্রি করার।

আনিসুর রহমান বাসসকে বলেন, আমার নিজস্ব গাভির খামার আছে। প্রায় ৪ বছর ৮ মাস ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় লালনপালন করেছি। সামনের কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ষাঁড় গরুটি প্রস্তুত করেছি। বিশেষ যত্নে লালনপালন করায় বিশাল আকৃতির কারণেই ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘সম্রাট’।

সাদা-কালো রঙের এই ষাঁড়টির উচ্চতা সাড়ে ৭ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৯ ফুট। ফিতা পদ্ধতিতে লাইভ ওজন প্রায় ৪০ মণ। গত বছর এ ষাঁড়টির ওজন ছিল প্রায় ৩২ মণ। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় খামারি  ষাঁড়টিকে বিক্রি করেননি। বিশালাকার ষাঁড়টিকে নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দানব- আকৃতির ষাঁড়টিকে দেখতে বিভিন্ন গ্রামের লোকজনসহ ব্যবসায়ীরা আসছেন। দরদাম করা হচ্ছে। তবে ষাঁড়ের মালিক এখনই ষাঁড়টি ছাড়বেন না। ভালো দাম পেলে সম্রাটকে ক্রেতার হাতে তুলে দেবেন খামারি। আনিসুর খামারের পাশাপাশি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। তিনি দাবি করেন, এ বছর সম্রাটের চেয়ে বড় গরু জেলার মধ্যে দ্বিতীয়টি আর নেই।

খামারি আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমি বাড়িতে একটি গরুর খামার করেছি। পাঁচ বছর আগে দুটি বিদেশি জাতের গাভি দিয়ে খামার শুরু করি। আমার খামারের একটি গাভি ৪ বছর ৮ মাস আগে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের ৭২৬ নম্বর প্রুভেনবুল সিমেনের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি বাছুর প্রসব করে। এই বাছুরটিকে এ বছর ঈদুল আযহায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি।’

তিনি জানান, দীর্ঘ সময় ধরে ষাঁড়টি গোয়াল ঘরে রয়েছে। কখনও তাকে গোয়াল ঘর থেকে বের করা হয়নি। ষাঁড়টি এত বড় হয়েছে যে গোয়াল ঘর থেকে বের করতে হলে ইটের দেয়াল ভেঙে বের করতে হবে। প্রচণ্ড গরম ও তাপ-মাত্রার কারণে ষাঁড়টিকে শ্যাম্পু ও সাবান দিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার গোসল করানো হয়। মশা যাতে কামড় দিতে না পারে সেজন্য গোয়াল ঘরে মশা নাশক ওষুধ স্প্রে করা হয়। ষাঁড়টির মাথার ওপর সব সময় ইলেকট্রিক ফ্যান ঘোরে।

তিনি আরো বলেন, আমার বাড়ির সবাই ষাঁড়টির দেখভাল করে। সম্রাটকে খৈল, ভেজানো ছোলা, গমের ভুসি, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া ও সবুজ ঘাসসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়। ষাঁড়টির জন্য দৈনিক হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। গত বছর কোরবানির ঈদে সম্রাটকে বিক্রি করতে না পারায় এক বছরে তার জন্য অন্তত আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

আনিসুর রহমানের খামারে আরও ৪টি বিদেশি গাভি আছে। দুটি গাভি প্রতিদিন  ১৫ কেজি করে ৩০ কেজি দুধ দেয়। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে খামারে গরুর খাবার কেনা করা হয়। অপর দুটি গাভি গর্ভবতী হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে ওই গাভি দুটির বাচ্চা প্রসব করার কথা।

আনিসুর বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ষাঁড় গরুটি দেখে দরদাম করছেন। সম্রাটকে বিক্রির জন্য দাম ধরেছি ১৫ লাখ টাকা।  সন্তোষজনক দাম পেলে এ ঈদে সম্রাটকে বিক্রি করে দেয়ার ইচ্ছা রয়েছে। আশা করছি, এবার কোরবানির ঈদে সম্রাটকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো।

বগুড়া সদর উপজেলার মাটিঢালি গ্রামের বাসিন্দা সাবের উদ্দিন ও রাজিব উদ্দিন দুই ভাই ফেসবুকে ছবি দেখে সম্রাটকে দেখতে এসেছেন। তারা বলেন, ছবি দেখে বুঝতে পারিনি ষাঁড়টি এত বড়। ছবির চেয়ে বাস্তবে ষাঁড়টি দেখতে অনেক বড় ও সুন্দর।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান আলী বলেন, সম্ভবত সম্রাট নামের ষাঁড়টি দিনাজপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু। ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি লালন-পালনে আমরা খামারিকে সর্বদা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছি। ষাঁড়টির ওজন ও আকার অনেক বড় হয়েছে। আসছে ঈদে এই বিশালাকার ষাঁড়টি বিক্রি করে দেয়ার জন্য খামারিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button