যশোরের কেশবপুর ২০ বিল জলাবদ্ধ, বিপাকে চাষি
মালিক উজ জামান, যশোর : যশোরের কেশবপুর উপজেলার জলাবদ্ধতার কারণে ১২২৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে না। হরি নদী পলি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিলের পানি নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এখন বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গত ৯ বছর ধরে এ বিলগুলো জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকেরা কোনো ধরনের ফসল চাষ করতে পারছেন না। জমি অনাবাদি থাকায় কৃষকেরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে জীবিকার তাগিদে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, যদিও ৯ বছর আগের চিত্র এমন ছিল না। তখন বিল খুকশিয়ায় টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্টের (টিআরএম) জোয়ারাধার ছিল। এর কারণে হরি নদী দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশিত হতো। পরে হরি নদী পলি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে যাওয়ায় টিআরএম অকার্যকর হয়। তখন থেকে বিলের পানি আর নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২০টি বিলে জলাবদ্ধতার কারণে ১ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে না। এর বাইরেও ১৮৮ হেক্টর জমি পতিত থেকে যাওয়ায় বোরো আবাদ হবে না। বিশেষ করে বিল খুকশিয়া, বুড়লির বিল, কালিচরণপুর বিল, হাড়িয়াঘোপ, কায়েমখোলা, সারুটিয়া, কৃষ্ণনগর, ডহুরি, বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, হদের বিল, গড়ভাঙ্গা অন্যতম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্বাংশের বিল কালিচরণপুর ও বিল খুকশিয়ায় এখন থই থই পানি। এখানকার কৃষকেরা জানান, ফসল ফলাতে না পেরে তাঁরা কষ্টে দিনানিপাত করছেন।
কালিচরণপুর গ্রামের কৃষক প্রতাপ বিশ্বাস বলেন, কালিচরণপুর বিলে তাঁর এক বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে চাষবাস করতে না পারায় তিনি এখন দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছেন। এলাকায় কাজ না থাকায় দূর গ্রামে গিয়ে দিনমজুরি করতে হচ্ছে। মহিতোষ ম-ল নামের একজন বলেন, ৯-১০ বছর ধরে বিলে ধান হয় না। তাই তাঁদের কষ্টের শেষ নেই। তিনি বলেন, রাত চারটার দিকে উঠে বাইরের গ্রামে গিয়ে দিনমজুরি করতে যেতে হয়। এ গ্রামের কৃষাণী অঞ্জলী ম-ল বলেন, বিলে ফসল নেই। তার ওপরে বিলের উপচে পড়া পানিতে তাঁদের বাড়িঘরে চার মাস পানি উঠে যায়। এ গ্রামের কৃষক নৃপেন পশারি, কমলেশ ম-ল এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
কালিচরণপুর বিলের ৪০ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো আবাদ হচ্ছে না। একই অবস্থা বিল খুকশিয়ার। এ বিলেও ফসল হচ্ছে না। বিলের ৩০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার করণে বোরা আবাদ হচ্ছে না। এর পার্শ্ববর্তী ময়নাপুর গ্রামের কৃষক মহেন্দ্র ম-ল বলেন, গত ৯ বছর ধরে তাঁদের বিলে ফসল হচ্ছে না। তাঁদের এখন চরম দুর্দিন চলছে।
স্থানীয়দের সমাধান মানছে না পাউবো
এলাকার মানুষজন বলছেন, টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্টের (টিআরএম) আওতায় জোয়ারাধার করে এর সমাধান করতে হবে। মূলত ২৭ বিলের পানি উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের বিল খুকশিয়ার পাশে হরি নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। এই হরি নদী পলি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি বিলগুলোতে জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এখন বিলগুলো নিচু রয়েছে, অন্যদিকে পলি ভরাট হয়ে নদী উঁচু হয়ে গেছে। এই পানি এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। নদী খনন করে বিলের মধ্যে জোয়ারের পানি প্রবেশ করালে নদী সচল হবে। আবার বিলগুলো পলি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গেলে পানি জমে থাকবে না। এলাকার মানুষের এই সমাধান পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মানছে না।
কেশবপুর পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্সী আসাদুল্লাহ বলেন, এর আগে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে মনিরামপুরে টিআরএম জোয়ারাধার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেসময় এলাকার ঘেরমালিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাধার কারণে সেখান থেকে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে হরি নদী খননের পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, জলাবদ্ধ বিলগুলোতে ফসল না হওয়ায় এলাকার কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় এ সমস্যা সমাধানে অনেকবার কথা বলা হয়েছে। তারপরও এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। এখানে তাঁদের কোনো কিছু করার নেই।