১৯৯০ দশকের শুরুতে, নিছক শখ থেকে পেশাদার ও সংগঠিত খেলায় পরিণত হয়েছিল গেমিং। আর এখন, কয়েক বছর ধরে ই- স্পোর্টস নামে পরিচিত প্রতিযোগিতামূলক এই পেশাদার গেমিং ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইলেকট্রনিক স্পোর্টস বা সংক্ষেপে যাকে ই-স্পোর্টস বলা হয়, এর সাথে অন্য খেলার পার্থক্য বলতে কেবল এটুকুই যে, এখানে দর্শকরা শারীরিক আয়োজনের বদলে ভার্চ্যুয়াল জগতে বসে খেলা উপভোগ করেন। বিভিন্ন লিগ বা টিমের খেলোয়াড়রা একই সময় একই গেমে অংশগ্রহণ করেন এমন ‘অ্যাট-হোম-গেমারস’দের কাছে জনপ্রিয় গেমের মধ্যে রয়েছে – ফোর্টনাইট, লিগ অব লিজেন্ডস, কাউন্টার-স্ট্রাইক, কল অব ডিউটি, ওভারওয়াচ ও মেডেন এনএফএল।
বলা চলে, গেমাররা প্রতিযোগিতা ভালোবাসেন। প্রথমবারের মতো আয়োজিত ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের বছরব্যাপী সাবস্ক্রিপশন থেকে শুরু করে মিলিয়ন ডলার জিতে নেয়ার সুযোগরয়েছে, যা ই-স্পোর্টস খাতের প্রবৃদ্ধিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। গেমাররা যেমন খেলতে পছন্দ করেন, তেমনি ফ্যানরাও তাদের খেলা দেখতে পছন্দ করেন। অনলাইন চ্যানেল বা লাইভ ইভেন্টের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী লাখো ফ্যান এসব খেলা ফলো করেন ও নিয়মিত দেখেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, ই-স্পোর্টস কেন বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এ খাতের ভবিষ্যতই বা কি?
রোমাঞ্চকর ও উত্তেজনায় ভরপুর এবং অংশগ্রহণ করতে পারেন যে কেউ
বিশ্বের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গত কয়েকবছরে ই- স্পোর্টস খাত অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ খাতের দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে টুইচের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো, যে কারণে দর্শকরা পছন্দের খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি, এটির দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আরেকটি কারণ হচ্ছে – সবার অংশগ্রহণ করতে পারার সুযোগ। প্রথাগত খেলায় নানারকম শারিরীক বাধ্যবাধকতা থাকে, কিন্তু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কারণে ই-স্পোর্টস অনেক কম সময়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। যেমন বলা যেতে পারে, ১০০ জনের বিপরীতে আরও ১০০ জনের বাস্কেটবল খেলা, যা আদতে অসম্ভব; কারণ কোনো বাস্কেটবল কোর্টেই ২০০ জন খেলোয়াড়কে জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। অথচ ই-স্পোর্টসের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি অসীম হতে পারে। উল্লেখ্য, গেমারদের জন্য অনেক বেশি সুযোগ নিয়ে এসেছে ই-স্পোর্টস। এর মাধ্যমে গেমারদের হাত ও চোখের সমন্বয়, যোগাযোগ দক্ষতা, ত্বরিত প্রতিক্রিয়া জানানো, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ও কৌশল নির্ধারণের মতো সক্ষমতাগুলো নিখুঁতভাবে শাণিত হয়। পাশাপাশি, রোমাঞ্চকর ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের হালনাগাদ সব খবর পাওয়া যাবে পারিম্যাচ নিউজে।
খেলা দেখার অভিজ্ঞতা
প্রতিযোগিতামূলক অনলাইন গেম দেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে ই-স্পোর্টস স্ট্রিমিং করা। আর এজন্য প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ ও একটি অ্যাপ বা ব্রাউজার যেখানে লাইভ ম্যাচ উপভোগ করা যাবে। ই-স্পোর্টসের মূল বিষয়টিই হচ্ছে- পুরো প্রতিযোগিতাটি যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় দেখা সম্ভব। প্রিয় খেলোয়াড়কে ফলো করা বা তার খেলা দেখা মোটেই সহজ কাজ নয়। তবে লাইভ স্ট্রিমিং, ইন্টারনেট সম্প্রচার ও বিশেষায়িত ই- স্পোর্টস চ্যানেল থাকায় এই কাজটি এখন একদম সহজ হয়ে গেছে। ফ্যানরা এখন একটি ডিভাইসে কয়েকটি ক্লিক করে খুব সহজেই দেখে নিতে পারেন খেলার সমস্ত খবর, ফলাফল বা পুরোনো খেলার হাইলাইটস। আর ই-স্পোর্টসের সেরা খেলোয়াড়দের বিষয়ে টিপস ও ট্রিকস এবং সুগভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করছে পারিম্যাচ নিউজ।
প্রবৃদ্ধি ধারা
২০২৩ সালে ই-স্পোর্টস বাজার থেকে আয়ের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ১,৬২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।যেখানে এই বাজারের সমন্বিত বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার (সিএজিআর ২০২৩-২৭) হতে পারে ৮.৩১ শতাংশ। আর এই হিসাবে, ২০২৭ সালে বাজারের সম্ভাব্য আকার গিয়ে দাঁড়াবে ২,২৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।[1] পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ই-স্পোর্টস খাতের প্রবৃদ্ধি ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে; এবং খুব স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশেও সম্ভাবনাময় তরুণ খেলোয়াড়দের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, যাদের মধ্যে অনেকেরই এই ইন্ডাস্ট্রিতে সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে ই-স্পোর্টস খাতের জনপ্রিয়তা, মার্কেটিং, গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিযোগিতার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এই ইন্ডাস্ট্রিতে শ্রম ও সময় দিচ্ছেন, এর পেছনের অন্যতম মূল কারণ টুর্নামেন্টের পুরস্কার। আগামীতে ই-স্পোর্টস খাত সবজায়গায় ছড়িয়ে যাবে এবং আশা করা যাচ্ছে, বাংলাদেশেও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
আর এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে, বিশ্বের নানান প্রান্তের বিভিন্ন রকম খেলার খবর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে পারিম্যাচ নিউজ।