ষষ্ঠীতলা ও বেজপাড়ায় ‘সার্ভিস বাইপাস’ বিদ্যুৎ চুরি, ১৪ লক্ষ টাকা জরিমানা
বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসবে হাত পড়লো ম্যাজিস্ট্রেটের। যশোরের ষষ্ঠীতলা ও বেজপাড়ায় অভিনব বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা উদঘাটন করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্মকর্তারা দেখতে পান, ফ্যান, লাইট, টিভি, ফ্রিজ সবই চলছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিল উঠছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘সার্ভিস বাইপাস’। আর এই সার্ভিস বাইপাসে বাড়ির সবকিছু চললেও মিটারে বিল উঠে না। মঙ্গলবার (১৩ জুন) যশোর শহরে অভিযান চালিয়ে তিনটি বাড়ি থেকে এমন ১৭টি মিটার জব্দ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ১৪ লক্ষাধিক টাকা। আদালতের অভিযান টের পেয়ে বাড়ির পুরুষ সদস্যদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
যশোরে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের দায়ে ১৭টি মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দুপুর সাড়ে ১২ টায় শহরের ষষ্ঠীতলা বসন্ত কুমার রোড ও বেজপাড়ার সাদেক দারোগার মোড়ে যশোর বিদ্যুৎ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তার মৌসুমীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ৩টি বাসা বাড়ি থেকে ১৭ টি অবৈধ মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ও মিটার গুলো জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জেল জরিমানা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ওয়েস্টপাওয়ার জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (ওজোপাডিকো) অভিযোগ আসে কিছু এলাকায় মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছে। এই অভিযোগের সূত্র ধরে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগ যশোর শহরের ষষ্ঠীতলা ও বেজপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়ির মিটার পরীক্ষা করা হয়।
মিটার পরীক্ষাকালে দেখা যায়, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার বাড়ির মিটারে সংযুক্ত হয়েছে। কিন্তু মিটারে প্রবেশের আগের অংশে তারের আবরণ খুলে তার সংযুক্ত করে বাড়ির মধ্যে নেয়া হয়েছে। এই তারের বিদ্যুতেই চলছে বাড়ির বাড়ির ফ্যান, লাইট, টিভি, ফ্রিজসহ সবকিছু। বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘সার্ভিস বাইপাস’। আর এই সার্ভিস বাইপাসে বাড়ির সবকিছু চললেও মিটারে বিল উঠছে না।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে শহরের ষষ্ঠীতলার বসন্ত কুমার সড়কের নওরোজ আলী ও টিংকু এবং রেলরোড এলাকার শাহবুদ্দিন খানের বাড়িতে এমন ১৭টি মিটার পাওয়া গেছে। যেগুলোর মিটারের তারে টেম্পারিং করা হয়েছে। একটি মিটার থেকে চারটি অবৈধ সংযোগের চিত্রও পেয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালতের অভিযান টের পেয়ে বাড়ির পুরুষ সদস্যদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
অভিযানকালে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা ওই তিন বাড়ির ১৭টি মিটারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জব্দ করে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন মালিককে ১৪ লক্ষাধিক জরিমানা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তার মৌসুমীর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
ওজোপাডিকোর সহকারী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রাহকরা ‘সার্ভিস বাইপাস’ করে বিদ্যুৎ চুরি করে আসছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সেটি ধরা পড়েছে। এ কারণে তিনটি বাড়ি থেকে ১৭টি মিটার জব্দ ও ১৪ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ সময় ওজোপাডিকোর সহকারী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা কিরণ বলেন, শহরের বিভন্ন এলাকায় অবৈধ উপায়ে কয়েকটি বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের তিনটি বাড়ি থেকে মোট ১৭ টি মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরমধ্যে শহরের ষষ্ঠীতলা বসন্ত কুমার রোড এলাকার নওরেজ আলী বাবুলের বাসা বাড়িতে মোট ১৪টি মিটারে সংযোগ লাইন ছিলো। যার ১৩টি সংযোগের প্রতিটি সংযোগে একাধিক অবৈধ উপয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছিলেন। একই এলাকার টিংকু নামে অপর জনের বাসায় পাঁচটি সংযোগ থাকলেও তিনটি সংযোগ থেকে অবৈধ উপয়ে লাইন টেনে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করছিলেন। এছাড়াও শহরের বেজপাড়ার সাদেক দারোগার মোড়ের জহির মাহমুদ লেলিনের বাসায় মোট ১৩টি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। তার মধ্যে একটি মিটারের গোড়া থেকে অবৈধ উপায়ে লাইন নিয়েছিলেন। আদালত অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন এবং মিটারগুলো জব্দ করে। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন, যশোর বিদ্যুৎ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা আক্তার মৌসুমী। তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ উপয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে তাকে আইনের আওতায় এনে জেল জরিমানা করা হবে।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, ওজোপাডিকোর উপসহকারী প্রকৌশলী মিল্টন হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, মুরারি মোহন ও সঞ্জয় কুমারসহ প্রশাসন এবং আজোপাডিকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।